ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহরিয়ার কবির

‘মিথাতের স্বপ্ন’ নির্মাণের ইতিবৃত্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৬ মে ২০১৮

‘মিথাতের স্বপ্ন’ নির্মাণের ইতিবৃত্ত

দক্ষিণ এশিয়া তথা এই উপমহাদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী সন্ত্রাসের যেমন শত শত দৃষ্টান্ত রয়েছে, সম্প্রীতির উদাহরণ তার চেয়ে অনেক বেশি এবং এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের প্রধান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমান ও হিন্দু সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রয়েছে এই উপমহাদেশে। সনাতন (হিন্দু) ধর্ম ছাড়াও এই উপমহাদেশে জন্ম ও বিস্তার লাভ করেছে বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম। বিশ্বে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের ধর্ম খ্রীস্টান সম্প্রদায়েরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম উপমহাদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাপন ও ধর্মাচরণের সাদৃশ্য ও সম্প্রীতির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করব। উপমহাদেশে হিন্দু ধর্ম বা বৈদিক ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। ইসলাম ধর্মের আগমনও হয়েছে আদিপর্বে হযরত মোহাম্মদের জীবদ্দশায়। আরব ভূ-খণ্ডের বাইরে মুসলমানদের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেছেন মহানবীর সাহাবা হযরত মালিক দিনার। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কেরালায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চেরামান জুমা মসজিদ। মসজিদের নামকরণ হয়েছে মালাবারের হিন্দু রাজা চেরামান পেরুমালের নামে- প্রথম ভারতীয় যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের শাসকরা এবং সাধারণ মানুষও বিদেশী বণিক ও ধর্ম প্রচারকদের সব সময় স্বাগত জানিয়েছেন। তারা চীনের মতো প্রাচীর তুলে নিজেদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাননি। মহাউপনিষদের বহুল উদ্ধৃত শব্দযুগল হচ্ছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, যার অর্থ সমগ্র বিশ্ব এক পরিবার। মুঘল যুবরাজ দারা শিকোহ্ মূল সংস্কৃত থেকে উপনিষদ ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মজমা-উল-বাহরাইন’-এ উপনিষদের সঙ্গে কোরানের সাদৃশ্যের উল্লেখ করেছেন। দারা শিকোহ্র অনুজ সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন কট্টরপন্থী ইমাম ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী। যিনি দারা শিকোহ্ এবং তাঁর মুরশিদ সুফীসাধক সারমাদকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে হত্যা করেছিলেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দুই পুত্র দারা শিকোহ্ ও আওরঙ্গজেব শুধু ভারতবর্ষে নয়, বর্তমান বিশ্বের ইসলামের যে দুই রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করিÑ উদারপন্থী ও কট্টরপন্থী তারই দুই প্রতিনিধি। উপমহাদেশে এবং বিশ্বের অন্যত্র প্রধানত সুফীরাই ইসলাম প্রচার করেছেন। সুফীসাধকদের ভেতর বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছেন জালালউদ্দিন রুমি (১২০৭-১২৭৩ খৃঃ), যাঁর জন্ম হয়েছিল আফগানিস্তানের বলখে। মৃত্যুবরণ করেছেন তুরস্কের কোনিয়ায়। যে শহরে তিনি রচনা করেছেন তাঁর কালোত্তীর্ণ সাহিত্যকর্ম ‘মসনবী’ ও ‘দিওয়ানে কবির’সহ অন্যান্য রচনা। রুমির মানবিক ও উদারনৈতিক ইসলাম পরবর্তীকালের সুফীসাধকদের প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষভাবে এই উপমহাদেশে, পাকিস্তানের সুফীসাধক বুল্লে শাহ, আবদুল লতিফ ভিটাই ও শাহ হোসেন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের লালন ফকিরের রচনায় মানবপ্রেমের উজ্জ্বল সব নিদর্শন রয়েছে, যার উৎস রুমি। উপমহাদেশে সুফী ও ভক্তিবাদ সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে বারবার শরণাপন্ন হতে হয়েছে রুমির রচনার। রুমি লিখেছেন ফারসি ভাষায়, যে ভাষা আমার আয়ত্তের বাইরে। ইংরেজীতে রুমির সব লেখাই অনূদিত হয়েছে, তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে শত শত গ্রন্থ। রুমির অনুবাদ এত কঠিন যে, খোদ ইরানেই রুমির মূল ফারসি রচনার পাঁচ ধরনের বয়ান ও ব্যাখ্যা রয়েছে। রচনাবলী পাঠ ছাড়াও রুমি সম্পর্কে আরও জানার জন্য ২০১৭ সালে তিনবার আমি তুরস্ক গিয়েছিলাম। প্রথমবার এপ্রিলে টিউলিপ উৎসবে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে রুমির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে। সেপ্টেম্বরে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রুমির শহর হিসেবে পরিচিত কোনিয়ার ‘মেভলানা কালচারাল সেন্টার।’ আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের আগেই জানিয়েছিলাম এ বিষয়ে আমার আগ্রহের কথা। সেন্টারের পরিচালক ফাহরি ওযচাকল কোনিয়ার দরবেশদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘সুফী মিউজিক এনসেম্বল’-এর প্রধান, যিনি দরবেশদের সেমা (নৃত্যসাধনা) পরিচালনা করেন। তাঁর সঙ্গে আমার বৈঠকে দোভাষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আঙ্কারায় আমাদের দূতাবাসের প্রটোকল কর্মকর্তা তুর্কী নাগরিক কেমাল দোগান। রুমির দর্শন এমনই জটিল যে, দোভাষীর মাধ্যমে আলোচনা আমার পছন্দমতো হচ্ছিল না। দরবেশ ফাহরির কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার দলে এমন কেউ আছেন কি-না যিনি ইংরেজী বলতে পারেন। তিনি তার বড় ছেলে মিথাতের কথা বললেন। আমি আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি টেলিফোনে মিথাতকে ডাকলেন। একটু পরে শার্ট প্যান্ট পরা এক সুদর্শন তরুণ, মুখে চাপদাড়িÑ এসে করমর্দন করে পরিষ্কার ইংরেজীতে বলল, আমি মিথাত ওযচাকল। আপনাদের কীভাবে সেবা করতে পারি বলুন। রুমি এবং তাঁর দরবেশ অনুসারীদের সম্পর্কে আমার আগ্রহের কথা শুনে মিথাত বলল, আমার পিতা এ বিষয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন। তার উপস্থিতিতে কিছু বলা আমার জন্য বেয়াদবি হবে। আমি বললাম, তোমার বাবার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তোমার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই। আমার সঙ্গে ছিল ইস্তান্বুলের ক্যামেরাম্যান মুরাত আকগজ। ওর রাজনৈতিক অবস্থান সুফী ইসলাম শুধু নয়, যে কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে। মুরাত কট্টর নাস্তিক, কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থন করে। সুযোগ পেলেই বলছিল কেন আমি এই উদ্ভট বিষয়ে ছবি বানাচ্ছি। ওকে যতই মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধর্মীয়ভাবে বিরোধিতার প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাই না কেন, এ বিষয়ে ওর কোন আগ্রহ ছিল না। নিতান্তই বন্ধুত্বের খাতিরে হাতের কাজ ফেলে আমার সঙ্গে কোনিয়া এসেছিল। তবে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ না থাকলেও কাজের ক্ষেত্রে ওর যতেœর কমতি ছিল না। মিথাতের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেছি। সুফীতত্ত্ব সম্পর্কে আমার যাবতীয় কৌতূহল আর প্রশ্নের জবাব দিয়েছে কোনিয়ার এই তরুণ দরবেশ। যদিও মিথাত নিজেকে দরবেশ বলে দাবি করে নাÑ বিনয়ের সঙ্গে বলেছে, দরবেশ হওয়ার আগে একজন সৎ ও ভাল মানুষ হতে হয়। আমি একজন ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। একজন দরবেশকে রসুলের আদর্শ মেনে চলতে হয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-বিত্ত নির্বিশেষে শুধু মানুষ নয়, স্রষ্টার সকল সৃষ্টিকে ভালবাসতে হয়, তাদের সেবা করতে হয়। মিথাতকে ধর্মের নামে সন্ত্রাস সম্পর্কে প্রশ্ন করেছি। ওহাবিরা সঙ্গীত ও নৃত্য নিষিদ্ধ করেছেÑ এ বিষয়ে ওর মত জানতে চেয়েছি। ওর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। ওর ভবিষ্যতের কথা জানতে চেয়েছি। আলোচনার পর মনে হয়েছে মিথাতকে নিয়েই একটি প্রামাণ্যচিত্র হতে পারে। এ বিষয়ে মিথাতের মত জানতে চাইলে ও আপত্তি করেনি। মুরাত ওর বক্তব্য রেকর্ড করেছে। এভাবেই শুরু হয়েছে ‘মিথাতের স্বপ্ন’ নির্মাণ। সেবার কোনিয়াতে বাদ্যযন্ত্রের এক দোকানে হঠাৎ করে পরিচয় জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত গায়ক আশিক এরদাল বালিকের সঙ্গে। কোনিয়ার সাংবাদিক বন্ধু ইব্রাহিমের পরিচিত দোকান। আমার পুত্র অর্পণ গিটার বাজায়, তারের যন্ত্র ওর প্রিয়। ভাবছিলাম ওর জন্য তুর্কী ‘সাজ’ কিনব। ‘সাজ’ গিটার আর দোতারার মাঝামাঝি মধ্য এশিয়ার প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। তুরস্কের সুফী সঙ্গীতের দুটি অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে ‘নে’ (বাঁশি) ও ‘সাজ’। ইব্রাহিমের কাছে আমার পরিচয় জেনে উৎসাহী হয়ে দোকান মালিক একটার পর একটা সাজ দেখিয়ে তার বৈশিষ্ট্যের কথা বলছিলেন। আমি বললাম বাজিয়ে শোনাতে। দোকানের এক কোণে বসেছিলেন মধ্য চল্লিশের একজন। দোকান মালিক বললেন, তিনি কোনিয়ার নামকরা লোকসঙ্গীত শিল্পী, চমৎকার ‘সাজ’ বাজান। লোকসঙ্গীত গায়ক আশিক আগ্রহের সঙ্গে ‘সাজ’ বাজিয়ে শোনালেন। তারপর বললেন, তার অনেক দিনের শখ সিনেমার জন্য গাইবেন। লাজুক হেসে ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলেন আমার পরের ছবিতে তিনি কাজ করতে চান, সম্ভব কি-না। ইব্রাহিম বলল, আমি কাহিনীচিত্র নয়, প্রামাণ্যচিত্র বানাই। প্রামাণ্যচিত্রে গান থাকে না। আমি ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলাম, আশিক কি সুফীদের গান গাইতে পারেন? আশিক মহাউৎসাহে দুটো গান গেয়ে শোনালেন। একটি রুমির উদ্দেশে, অপরটি মানবতার জয়গান। শুনেই বললাম, আপনার গান আমার পরের ছবিতে থাকবে। আশিক আনন্দে বিগলিত হয়ে আমাদের জন্য চা আনতে বললেন। মিথাতের বাবা ফাহরি ওযচাকল আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ডিসেম্বরে রুমির মৃত্যুবার্ষিকীতে দশদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সুফী সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য। মুরাতকে বললাম, এ যাত্রা যতটা পারি শূটিং করব। বাকিটা স্ক্রিপ্ট লেখার পর ডিসেম্বরে করব। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত রুমির মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রুমি ভক্তরা কোনিয়ায় আসেন। তুরস্কের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও হাজার হাজার মানুষ আসেন। হোটেলে জায়গা পাওয়া দুষ্কর। প্রতিবারের মতো অক্টোবরে আমাদের দূতাবাসের কেমাল দোগানকে বলেছিলাম আমার আর মুরাতের জন্য দুটো রুম বুক করার। দু’দিন পর দোগান জানালেন, গত মাসে যে রুমি হোটেলে আমি এক রুমের জন্য এক ’শ দশ লিরা (১ লিরা = ২৪ টাকা) দিয়েছিলাম ওটা এখন চার ’শ লিরা চাইছে। দোগানকে লিখলাম, অন্য হোটেল দেখুন। খুব বেশি হলে আমি এক ’শ কুড়ি পর্যন্ত উঠতে পারি, এর বেশি নয়। এক সপ্তাহ পরে দোগান লিখলেন, রুমির মাজারের কাছে দরবেশদের এক অতিথিশালা আছে। খুবই সাদামাটা ব্যবস্থা। ঘর ছোট, তবে সঙ্গে বাথরুম আছে। ভাড়াও কম, আশি লিরা দিতে হবে সকালের নাশতাসহ। শুনে মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। ভাড়া কম বলে নয়, দরবেশদের অতিথিশালায় থাকবÑ এ এক বিরল অভিজ্ঞতা! নামও ‘দারভিশ লজ’। তুর্কী ভাষায় আমাদের দরবেশ হচ্ছে ‘দারভিশ’, মওলানা হচ্ছে ‘মেভলানা’, মৌলবি হচ্ছে ‘মেলভি।’ মিথাত আগেই জানিয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ও খুব ব্যস্ত থাকবে। ওদের কালচারাল সেন্টারে আমার আলোচনা ছিল ১৭ তারিখে। ওকে লিখলাম আমরা ১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনিয়ায় থাকব। ইস্তান্বুল থেকে ক্যামেরাম্যান মুরাতকে সঙ্গে নিয়ে ১৬ তারিখ দুপুরে কোনিয়া পৌঁছলাম। টার্কিশ এয়ারলাইন্সে এক ঘণ্টার ফ্লাইট। আঙ্কারা থেকে দোগান এসেছিলেন গাড়ি নিয়ে। তিনদিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন, দোভাষীর কাজ করেছেন। দরবেশ লজের বাড়িটা অনেক পুরনো। ঘর ছোট, দরজাও ছোট, কাঠের মেঝে, ছোট ছোট জানালা, তবে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। উঠোনের এক পাশে জুতো রাখার জায়গা। অতিথিশালার ভেতরে জুতো পায়ে হাঁটা বারণ, ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল আছে। সকালে খাবার ঘরে নাশতা করতে গিয়ে দেখি এক সঙ্গে বসার মতো খালি টেবিল নেই। তিনজনকে অন্য অতিথিদের সঙ্গে তিন জায়গায় বসতে হয়েছে। আমি বসেছিলাম দু’জনের টেবিলে। একজন বয়স্ক ইউরোপীয় মহিলা একা বসেছিলেন। বসার আগে তার অনুমতি চেয়েছিলাম। মৃদু হেসে সম্মতি জানিয়েছেন। নাশতাও অতিথিশালার মতো সাদামাটা, বুফে ব্যবস্থা। ট্রেতে করে চা-নাশতা এনে বসে নিজের পরিচয় দিলাম। ভদ্রমহিলার বয়স সত্তরের ওপরে হবে। ভাঙ্গা ইংরেজীতে বললেন, আমি ফ্রান্সের অধিবাসী। আমার দুটো নাম আছে। খ্রীস্টান নাম ফ্লোরেন্স, মুসলমান নাম ফরিদা। ফরিদাকে তিনি বলেছিলেন ‘ফারিদে।’ আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু যদি মনে না করেন, আপনি ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কেন? ফরাসী ফরিদা বললেন, আমি ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হইনি। আমি আকৃষ্ট হয়েছি সুফীবাদের প্রতি। আমার মুরশিদ আমাকে ফরিদা নাম দিয়েছেন। আমি একজন সুফী। আপনার মুরশিদ কে? তিনি পাকিস্তানের সেওয়ান শরিফে থাকেন। গত বছর মারা গেছেন। ফরিদার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নাশতা খাওয়া শিকেয় উঠল। জানতে চাইলাম, মুসলমান না হয়ে আপনি সুফী হলেন কীভাবে? আমি আগে আমার মুরশিদের কাছে দীক্ষা নিয়েছি সুফীবাদে। তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। তবে ধর্মে আমার আগ্রহ নেই। ইসলাম ধর্ম, খ্রীস্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মÑ সব ধর্মেই অসহিষ্ণুতা আছে। সুফীদের পথ হচ্ছে শান্তি, ভালবাসা আর সহিষ্ণুতার। সুফীদের সম্পর্কে আমার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে ফরিদাকে সঙ্কোচের সঙ্গে বললাম, রুমির সুফী মতের ওপর আমি একটি প্রামাণ্যচিত্র বানাচ্ছি। এ ছবির জন্য আপনার একটি সাক্ষাৎকার কি নিতে পারি? ফরিদার নাশতা খাওয়া শেষ, কফি পান করছিলেন। বললেন, বেশি সময় দিতে পারব না। এক ঘণ্টা পর আমার বাস। আমি কাপাদোকিয়া যাচ্ছি। মুরাত অন্য টেবিলে বসেছিল। ওকে বললাম, এক্ষুণি ক্যামেরা আনো। এই ভদ্রমহিলার ইন্টারভিউ রেকর্ড করতে হবে। বেশি সময় নেই। চলবে... ৩ মে, ২০১৮
×