ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটওভার ব্রিজ কার স্বার্থে!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৬ মে ২০১৮

ফুটওভার ব্রিজ কার স্বার্থে!

কোন আধুনিক শহরে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি পথচারীদের জন্যও চলাচলের সুব্যবস্থা থাকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা যতটা সম্ভব নির্বিঘœ, সুবিন্যস্ত ও সহজ রাখার চেষ্টা করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে এ কাজ সম্পন্ন করা সহজ হয় না। আর্থিক সঙ্কটসহ উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নেও সমস্যা হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকাও এর ব্যতিক্রম নয়। মাত্র ৪৭ বছর আগে স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর এর লোক সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। এ সময়ে সড়কপথ বিস্তৃত হয়েছে। যানবাহনও বেড়েছে। পথচারীর সংখ্যা বেড়েছে। সবার জন্য স্বচ্ছন্দ চলাচলের উপযোগী পথঘাটের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সত্তরের দশকের শেষ দিকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় প্রথম ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন শতাধিক এ ধরনের স্থাপনা রয়েছে। আরও কয়েকটি নির্মাণের উদ্যোগ চলছে। রয়েছে কয়েকটি আন্ডারপাসও। যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে কয়েকটি ফ্লাইওভার। কিন্তু এত আয়োজনের পরও নগরজীবনে স্বচ্ছন্দে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কেন? রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করে সড়ক পারাপারে শাস্তির বিধান রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় আইন না মানাদের শাস্তি দিতে বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। যদিও সেটা সাময়িক ব্যবস্থা। অর্থদ-সহ নানা শাস্তির কথাও বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম ছিল কিন্তু তার পরও ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার করছে না রাজধানীর সিংহভাগ মানুষ। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। রাস্তার পাশে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে প্রতিনিয়তই রাস্তা পারাপার হওয়া কোন সুনাগরিকের পরিচয় নয়। ট্রাফিকের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো করে রাস্তা পার হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া, লোহার গ্রিল দিয়ে বেষ্টনী কোন কাজে আসছে না। এভাবে এলোমেলোভাবে রাস্তা পার হওয়ার ফলে দুর্ঘটনাসহ যানজটের ভয়াবহতা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্কুল-কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকিসহ সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে অভিভাবকরা। ফলে কোমলমতি শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া শেখানো হচ্ছে, যা শিশু মনে গেঁথে যাচ্ছে। এভাবে তাদের মধ্যেও রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। রাজধানীতে যে পরিমাণ ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে মনে করছেন নগরবিদরা। তাদের মতে রাজধানীতে যে পরিমাণ ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে তার সঠিক ব্যবহার বাড়াতে পারলেই যানজট, সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে আসবে। তাহলে প্রশ্ন, এত ওভারব্রিজ কার স্বার্থে? অধিকাংশ ওভারব্রিজ ঠিকমতো ব্যবহার হয় না। ব্যস্ত কয়েকটি এলাকায় এসব স্থাপনায় দেখা যায় হকার ও ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য। নিউমার্কেট, ফার্মগেট, প্রভৃতি অতি ব্যস্ত এলাকায় ওভারব্রিজে ওঠানামার পথ হকাররা দখল করে রয়েছে। ব্রিজেও হকারদের দাপট। কোন কোনটির স্থান নির্বাচন সঠিক ছিল না। রমনা পার্ক এলাকায় নির্মিত হয়েছে এমনই একটি ব্রিজ, যা আদৌ কেউ ব্যবহার করে না। অনেকগুলো নির্মিত হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে। একে ঠিকাদারের লাভ হয়েছে, পথচলায় বেড়েছে ঝুঁকি। রাজধানীতে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপের কারণে বেশিরভাগ সড়কে গাড়ির গতি বাড়ানো যায় না। পথচারীরা এ সুযোগে ওভারব্রিজের পরিবর্তে সড়কপথ ব্যবহার করেন। এ কারণে গাড়ির গতি আরও কমে যায়। দুর্ঘটনাও ঘটে নিয়মিত। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন এবং ট্রাফিক বিভাগ এসব সমস্যা বিবেচনায় রেখে পথচারীদের চলাচল নিরাপদ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা। তাদের কাজে সমন্বয় জরুরী। ফুটপাতগুলোও হকারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে স্থায়ীভাবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এ ধরনের বাধা দূর করতে হবে। অবশ্য নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যস্ত এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ থাকলে তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হতে হবে। এতে কিছু কষ্ট বাড়বে, বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু গতিময় শহরের জন্য এর বিকল্প কিছুই হতে পারে না।
×