ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রক্তাক্ত পাহাড়

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৬ মে ২০১৮

রক্তাক্ত পাহাড়

পাহাড় আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। রক্ত ঝরছে সেখানে। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত আটজন। মাত্র দুদিনের ভেতর এতগুলো হতাহতের ঘটনায় পাহাড়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চারভাগে বিভক্ত পাহাড়ের দুই সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠন দুটির তিন গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, অস্ত্র ভা-ারের ভাগবাটোয়ারা ও চাঁদাবাজির একক নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। মূলত এ তিন কারণেই পাহাড় আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হঠাৎ করেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গুলিতে নিহত হয়েছেন একজন বর্ষীয়ান জনপ্রতিনিধি ও মুক্তিযোদ্ধা। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত সিরাজুল হক ছিলেন ছয়বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। দুর্বৃত্তরা তাঁকে কাছে থেকে পর পর কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানকার পাহাড়ী-বাঙালী সবাই এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অভিযোগ আছে, সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনও সক্রিয় এবং অনেকে প্রায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনায় সংগঠনের এক নেতা স্থানীয় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন। কিছুদিন আগে ইউপিডিএফেরও এক নেতা নিহত হয়েছেন এবং দুই নারী নেত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে খুনোখুনির ঘটনা। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে পাহাড়ে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান পরিচালনার দাবি করা হয়েছে। এমন দাবি অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। রায়পুরায় যে দুর্বৃত্তরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে, তারা এলাকায় আরও অঘটন ঘটাতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী তা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। প্রথমত অবিলম্বে সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চলে নিয়মিত জোরালো অভিযান পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতিটি ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। মানুষ শান্তি চায়। পাহাড়ে আরও রক্ত ঝরুক, দেশের কোথাও জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হোক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটুকÑ এমনটা কোন শান্তিকামী মানুষ চায় না। দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততোই যেন বেশি করে অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার যখন সক্রিয় এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হচ্ছেÑ এমন একটি সুবর্ণ সময়ে কারা দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করতে চায়? পাহাড়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে পুরনো বিবাদ-বিভেদ দূর করতে হলে সব পক্ষের ভেতর আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর প্রচেষ্টার বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। আর কোন অপমৃত্যু নয়। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসুক।
×