ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সন্তানসহ মৃত্যু

চিরকুট পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৬ মে ২০১৮

চিরকুট পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারী কলোনিতে দুই মেয়েসহ নৃশংসভাবে মৃত্যু হওয়া সেই মায়ের উদ্ধারকৃত চিরকুটটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। অনুমতির পর সেটি সিআইডির কাছে পাঠানো হবে। উদ্ধারকৃত চিরকুটটি নিহত মায়ের নিজ হাতের লেখা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। চিরকুটের লেখার সঙ্গে নিহত মায়ের অন্য লেখা মিলিয়েছে পুলিশ। তাতে লেখাটি নিহত জেসমিনের বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেই চিরকুটের সূত্রধরে হত্যার সঙ্গে তৃতীয় কোন পক্ষ জড়িত কিনা তদন্তে তা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নিহত জেসমিনের খালাতো বোন যুথী বা হাসিবুলের ভাগ্নের স্ত্রীর কোন যোগসূত্র আছে কি না সে বিষয়টির গভীর অনুসন্ধান চলছে। আলোচিত সেই হত্যাকা-ের সঙ্গে পরকীয়ার যোগসূত্র আছে কিনা তা তদন্তে গুরুত্ব পেয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় মিরপুর পাইক পাড়ায় সরকারী কোয়ার্টার থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার (৩৫) এবং তার দুই মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) ও আদিবা তাহসিন হানির (৪) ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার হয়। নিহতদের পরিবারের দাবি, জেসমিন মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। এর আগেই মেয়েদের বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর নিজে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলছেন, নিহতদের শরীরে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে চিহ্ন রয়েছে। ছুরিকাঘাতেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ছুরিকাঘাতের হত্যাকারী বা হত্যাকারীদের শনাক্ত করার জন্য নিহতদের শরীর থেকে ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ঘরে দরজা ভেঙ্গে নিহতদের উদ্ধার করা হয়। ওই সময় ঘরে নিহতদের তিন আত্মীয় ছিলেন। উদ্ধারকালে জেসমিনের ডান হাতের দিকে একটি রক্ত মাখা ছুরি পড়েছিল। সেই ছুরিটি সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি জেসমিনের স্বামীসহ বাসায় থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনরা। এতে করে স্বাভাবিক কারণেই সন্দেহ বেড়েছে। ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নেশা বা ঘুমের ওষুধ জাতীয় কোন কিছুর আলামত পাওয়া যায়নি। ওসি জানান, ঘটনার সময় বাসায় নিহত জেসমিনের স্বামী জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের ড্রাফটম্যান হাসিবুল ইসলামের ভাগ্নে ও ভাগ্নে বউ এবং জেসমিনের খালাতো বোন রেহেনা আক্তার যুথী (২২) ছিলেন। একটি ফ্ল্যাটে তিনজন মানুষ খুন হয়ে গেল, অথচ বাসায় থাকা তাদেরই তিন আত্মীয়র কেউ তা টের পেলেন না। এটা কিভাবে সম্ভব! এমন ঘটনায় স্বাভাবিক কারণেই রহস্য আস্তে আস্তে আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ওসি বলছেন, গভীর তদন্তের ধারাবাহিকতায় জেসমিনের অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। সহকর্মীদের সামনে চালানো সেই তল্লাশিতে জেসমিনের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার হয়। এ ফোর সাইজের একটি কাগজের এক পৃষ্ঠায় অন্যান্য লেখা টাইপ করা আছে। আর অন্য পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে, ‘আমি বেঁচে থাকার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সবদিক থেকে অনেক অন্ধকার নেমে এসেছে। তাই এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমার মৃত্যুর জন্য আমার নির্মম দুর্ভাগ্য দায়ী।’ ওসি বলছেন, কি এমন দুর্ভাগ্য হলো যে দুই মেয়েসহ জেসমিনকে নৃশংসভাবে মরতে হলো। চিরকুটের লেখা জেসমিনের বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ চিরকুটের লেখা জেসমিনের হাতের অন্যান্য লেখার সঙ্গে মিলে গেছে। তারপরেও চিরকুটের লেখা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। অনুমতি পাওয়ার পর চিরকুটের লেখা পরীক্ষার জন্য তা সিআইডির কাছে পাঠানো হবে। ওসি জানান, পরকীয়া ছাড়াও সহায় সম্পত্তি, টাকা-পয়সা ও পারিবারিক কলহসহ সম্ভাব্য সকল বিষয় মাথায় রেখেই ঘটনাটির তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত জেসমিনের সঙ্গে কারও পরকীয়া সম্পর্ক থাকার বা পূর্বশত্রুতা থাকার তথ্য মেলেনি। তবে জেসমিনের স্বামী হাসিবুরের কোন পরকীয়ার সম্পর্ক আছে কি না তাও স্পষ্ট নয়। হাসিবুরের সঙ্গে নিহত জেসমিনের খালাতো বোন যুথীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যুথী অবিবাহিত। তার বয়স বাইশ বছর। অনেক দিন ধরেই যুথী ওই বাসায় হাসিবুরের পরিবারের সঙ্গে একত্রে বসবাস করে আসছেন। হাসিবুরের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল। তবে সেই ভাল সম্পর্ক অন্য কোন কিছু ইঙ্গিত করে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের তৈরি করা তিনজনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন মোতাবেক, জেসমিনের গলার পাশাপাশি দুই হাতে কবজির কাছে কাটা ছিল। বুকে ছিল অন্তত ৯টি আঘাতের চিহ্ন। বড় মেয়ে হিমির পেটে তিনটি আঘাতের চিহ্ন এবং বাঁ হাতের কবজির কাছে কাটা ছিল। ছোট মেয়ে হানির পেটে এবং ডান হাতের কবজির কাছে কাটা ছিল। দুই মেয়েরই গলা কাটা ছিল।
×