ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে নজরুল চর্চা’

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৬ মে ২০১৮

‘অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে নজরুল চর্চা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসছে এগারোই জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। সাম্য ও দ্রোহের কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হলো নজরুল প্রেমীদের সম্মেলন। কবির গানের সুরে স্নিগ্ধ হলো সে আয়োজন। গীতের সুরে পরিবেশিত হলো নয়নজুড়ানো নৃত্য। বিশিষ্টজনদের কথনে উঠে এলো অখ- নজরুলচর্চার কথা। সেই সঙ্গে উচ্চারিত হলো অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নজরুলচর্চাকে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান। শনিবার বৈশাখী বিকেলে কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের কাউন্সিল হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক নজরুলচর্চা কেন্দ্র। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুস সামাদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএইচএম মুস্তাফিজুর রহমান ও নজরুল গবেষক ড. সৌমিত্র শেখর। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। উদ্বোধনী বক্তব্যে অনুবাদের মাধ্যমে নজরুলচর্চাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নজরুল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে স্প্যানিশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় নজরুলের সাহিত্যসম্ভার অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আফসোস করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ থাকলেও এখন পর্যন্ত আরবি ভাষায় নজরুল সাহিত্যের কোন অনুবাদ হয়নি। একইভাবে ঢাকার আরব দেশের দূতাবাসগুলোও এ বিষয়ে নির্বিকার। নজরুলের সৃষ্টির যথার্থতা রক্ষার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই নজরুলের গানে বিকৃত সুরারোপ করছে। একইভাবে নজরুলের জীবনী নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কেউ কেউ। তাই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে না পারলে কেউ যেন নজরুলচর্চা না করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুলকে নিয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণের কথা উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা নজরুলের গান-কবিতায় উদ্দীপ্ত হয়েছি। তখন থেকেই দেখছি নজরুলকে নিয়ে মুসলমানিকরণের চেষ্টা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। যখন তাকে এদেশের জাতীয় কবি হিসেবে গ্রহণ করা হলো তখনও খ-িতভাবে উপস্থাপন করেছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনা করে নজরুলকে ছোট করার চেষ্টাও হয়েছে। এই অপপ্রয়াস রুখতে হলে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে নজরুলের সৃষ্টিসম্ভারকে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নজরুল কোন একক ধর্মের নয়; নজরুল সমস্ত বাঙালির, সমগ্র বিশ্বের। সৌমিত্র শেখর বলেন, নজরুলের দর্শন হচ্ছে সম্প্রীতি ও প্রগতির। পুরনোকে বাতিল করে নতুনকে আবাহনের দর্শন। সেই দর্শনকেই অনুসরণ করতে হবে আমাদের। পৃথিবীতে যতদিন হানাহানি ও সাম্প্রদায়িকতা থাকবে ততদিন নজরুলের উপযোগিতা থাকবে। এসব সঙ্কটে নজরুল হবে আমাদের অবলম্বন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল নৃত্য-গীতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের সূচনায় পরিবেশিত হয় সম্মেলক নৃত্য। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে দৃষ্টিনন্দন নাচ করে শেরপুর জেলার নৃত্যশিল্পীরা। সুরের আশ্রয়ে নানা আঙ্গিকের নজরুল সঙ্গীতের পরিবেশনা শ্রোতার অন্তরে ছড়িয়েছে প্রশান্তির পরশ। সম্মেলক কণ্ঠে দোলনচাঁপা ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘জাগো অনশন বন্দী, ওঠ রে যত/জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত’। ধর্মরাজী ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’। সুমধুর কণ্ঠে নাশিদ কামাল গেয়েছেন ‘আমিনার কোলে নাচে হেলেদুলে’ ও ‘ঘুমায়েছে ফুল পথেরই ধুলায়’ শিরোনামের দু’টি গান। এম এ মান্নান পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আল্লাতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান’ ও ‘পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বাইয়া’। ছন্দা চক্রবর্তীর কণ্ঠে গীত হয় ‘ডেকে ডেকে কেন সখী ভাঙ্গাইলে আমার ঘুম’ ও ‘হারানো হিয়া’। যারিন তাসনিম শুভ্রা গেয়ে শোনান ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’। রোজী আক্তার শেফালীর কণ্ঠে গীত হয় ‘সুদূর মক্কা মদীনার পথে’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন ফাতেমা তুজ জোহরা, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান, রেবেকা সুলতানা, শহীদ কবির পলাশ ও রাহাত আরা গীতিসহ অনেকে। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেছে হিন্দোল সঙ্গীত একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা। শিল্পাঙ্গনে কাজী মৃণালের চিত্রপ্রদর্শনী ॥ চারুকলা অনুষদ কিংবা শাহবাগ চত্বরের আড্ডাবাজদের এক প্রিয় মুখ কাজী মৃণাল। প্রথাগত শিল্পচর্চা ও শিল্পশিক্ষার গ-ি এড়িয়ে জীবনের ভিন্ন মানে খুঁজে ফেরেন এই চিত্রকর। সেই সুবাদে তাঁর আঁকা ছবি দেখার খুব একটা সুযোগ হয়নি দর্শনার্থীদের। এবার যেন সেই ধ্যান সবার সামনে হাজির আপন শিল্পকর্ম নিয়ে হাজির হলেন শিল্পী। শনিবার থেকে ধানম-ির গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে শুরু হলো কাজী মৃণালের ‘রূপ অরূপ অপরূপ’ শীর্ষক প্রথম একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী এবং লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি শিল্পাঙ্গনের পরিচালক রুমী নোমান। কাগজে কালি-কলম দিয়ে মানুষের চিরায়ত শাশ^ত জীবনের চিত্র এঁকেছেন শিল্পী। সামাজিক কাঠামোর বাইরে দাঁড়িয়ে তার শিল্প হয়ে উঠেছে প্রকৃতিনির্ভর ও মানুষের দেহনির্ভর। মৃণালের কলমে প্রকৃতির সমান্তরালে হাজির হয়েছে নারী-পুরুষ, মা ও শিশু। বৃক্ষ ও শিশুকেও সমার্থকভাবে তুলে ধরছেন ক্যানভাসে। সাদা কাগজে কালি-কলমে সৃজিত ৫৭টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তিন তরুণের আবৃত্তিসন্ধ্যা ॥ শনিবার শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তিকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো তিন তরুণের আবৃত্তিসন্ধ্যা। বিভিন্ন কবির বৈচিত্র্যময় বিষয়ের কবিতা নিয়ে কবিতাপ্রেমী শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন মৌমিতা জান্নাত, জালাল উদ্দিন হীরা ও দিলশাদ জাহান পিউলী। আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আযোজিত ‘এই তো জীবন এই তো মাধুরী’ শীর্ষক নিয়মিত এ আবৃত্তিসন্ধ্যার সহযোগিতায় ছিল শিল্পকলা একাডেমি। সান্ধ্যকালীন আয়োজনের শুরুতেই মঞ্চে আসেন মৌমিতা জান্নাত। প্রথমেই কণ্ঠে তুলে নেন শুভদাস গুপ্তের কবিতা ‘আমি সেই মেয়ে’। এরপর আবৃত্তি করেন বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত সাঁওতাল মেয়েদের গানের কবিতা ‘তিন পাহাড়ের স্বপ্ন’। এরপর পাঠ করেন বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ‘চিল্কায় সকাল’। একে একে রবীন্দ্রনাথের তিনটি কবিতা ‘ভুল স্বর্গ’, ‘মেঘদূত’ ও ‘যদি তোমায় দেখা না পাই প্রভু’ পাঠের মাধ্যমে শেষ করেন পরিবেশনা । জালাল উদ্দিন হীরা আবৃত্তি করেন দশটি কবিতা। সেগুলো হলোÑ রবীন্দ্রনাথের ‘রূপ-রানানের কূলে’, ‘অপমানিত’, ‘পরিচয়’ ও ‘অন্তর মম বিকশিত করো’, কাজী নজরুলের ‘বাংলাদেশ’, আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’, শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘মুছে ফ্যালো মিছে অশ্রু তোমার’, জীবনানন্দ দাশের ‘অদ্ভূত আঁধার এক’, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি’, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ‘জার্নাল ১৯৭১’ ও হেলাল হাফিজের ‘যাতায়াত’। দিলশাদ জাহান পিউলী আবৃত্তি করেন আহসান হাবীবের ‘প্রদক্ষিণ’ ও ‘আমি আছি’, মৃন্ময় মিজানের ‘নীরার শেষ চিঠি’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘যখন বৃষ্টি নামলো’, সুবোধ সরকারের ‘অঞ্জলির কথা’, রফিক আজাদের ‘প্রতীক্ষা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরাণের গহীন ভিতর-৪’, নির্মলেন্দু গুণের ‘দ-কারণ্য’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায়’। ‘নববর্ষে মাতো ছড়াগানে’ ॥ শিশু একাডেমির আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ‘নববর্ষে মাতো ছড়াগানে’ শীর্ষক একক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় শনিবার। দেশের ৮টি বিভাগে বয়সভিত্তিক ৩ টি গ্রুপে এ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। প্রতিটি বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারী মোট ২৪ জন শিশু প্রতিযোগীদের নিয়ে চূড়ান্ত পর্ব সম্পন্ন হয়। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুদের বিকেলে একাডেমির মিলনায়তনে সার্টিফিকেট এবং পদক প্রদান করেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথা সাহিত্যিক জনাব সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন।
×