ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল জীবাণু শিশু স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৬ মে ২০১৮

শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল জীবাণু শিশু স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

নিখিল মানখিন ॥ শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল জীবাণু শিশুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিবছর এ জীবাণু দ্বারা দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু আক্রান্ত হয়। সারাদেশে বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণকারী ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর দুই-তৃতীয়াংশ মারা যায় শ্বাসতন্ত্রজনিত ভাইরাসে। আর রাজধানীতে প্রতিবছর প্রতিটি শিশু গড়ে ১.৫ বার শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। গত বছর এ বয়সী শতকরা ৭৫ ভাগ শিশু শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রমণের শিকার হয়েছে। ঢাকায় হাসপাতালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসায় গড়ে খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। যা যোগাড় করা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। বয়স্ক লোকজনও বিভিন্ন ভাইরাল জীবাণুর আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি পরিচালিত হাসপাতালভিত্তিক সার্ভিলেন্সে এ তথ্য বেরিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি হাসপাতালে সার্ভিলেন্স চিকিৎসকেরা ৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্য থেকে শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত এবং ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্য থেকে মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সম্ভাব্য রোগীদের আলাদা করেন। প্রতি মাসে প্রতিটি হাসপাতালে সার্ভিলেন্স চিকিৎসকেরা নির্বাচিত রোগীদের কাছ থেকে নমুনা এবং হাত কম্পিউটারের সাহায্যে রোগীদের জনমিতি এবং রোগ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। এভাবে এগিয়ে যায় গবেষণার কাজ। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের গড় বয়স ছিল ৪ বছর ৬ মাস। আর তাদের শতকরা ৭২ ভাগ শিশু মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরীক্ষায় ১৮৬ জন রোগীদের মধ্যে ১শ’ জনের (শতকরা ৫৪ ভাগ) শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এই ১শ’ জনের মধ্যে শতকরা ৩২ ভাগ শ্বাসতন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাসে, ২৪ ভাগ ইনফ্লুয়েঞ্জায় এবং শতকরা ২০ ভাগ হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আর শ্বাসতন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত ৩২ জনের সবাই ছিল মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শ্রেণীর বেশির ভাগ রোগী শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। রোগীদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের বুকের অবস্থা স্বাভাবিক, ২০ ভাগ রোগীর লোবার কনসোলিডেশন, ৮ ভাগ রোগীর এ্যালভেওলার ইনফিলট্রেশন এবং শতকরা ৮ জনের ইন্টারস্টিশিয়াল ইনফিলট্রেশন ছিল বলে জানা গেছে। রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সময় থেকে রোগীদের ক্লাস্টার অনুসন্ধান এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রোগের কারণ নিশ্চিতকরণে ৩ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ রোগসমূহের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় প্রজন্মের আগে এগুলো চিহ্নিত করার সম্ভাবনা কম। যত তাড়াতাড়ি এ রোগ ধরা যাবে তত তাড়াতাড়ি তা নিরাময় করা যাবে। শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এ্যাডিনোভাইরাস, শ্বাসতন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-১, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-২ ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-৩। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওষুধবিহীন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যেমন হাঁচি কাশি প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। এছাড়া এ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। আর শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা এবং সম্ভব হলে শ্বাসতন্ত্রজনিত সিনসিশিয়াল ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বাড়তি ইন্টারভেনশন চালু করা যেতে পারে। আইইডিসিআর এর উর্ধতন বৈজ্ঞানিক ডাঃ মুশতাক হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ২১ দিনের বেশি জ্বর এবং কাশি কিংবা গলা ব্যথা থাকলে বুঝতে হবে শ্বাসতন্ত্রজনিত মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছে। আর মারাত্মক নিউমোনিয়া রোগীর বুক দেবে যাবে, বুকে গড়গড় শব্দ হবে, খিঁচুনি হবে, পান করতে অপারগতা প্রকাশ করবে, অচেতনতা দেখা দেবে এবং সব কিছুই বমি করে ফেলে দেবে। তিনি বলেন, অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশ, বিভিন্ন কারণে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে একটি শিশু শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
×