ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা মেডিক্যালে ইঁদুরে খেয়েছে শিশুর মরদেহ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ মে ২০১৮

ঢাকা মেডিক্যালে ইঁদুরে খেয়েছে শিশুর মরদেহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যালে একের পর এক ঘটছে জঘন্য সব অপকর্ম। ডাক্তার- নার্সের বার বার ভুলত্রুটি আর শিশু চুরিতে কুখ্যাত এই মেডিক্যালে এবার ঘটেছে আরও জঘন্য অপকর্ম। ইঁদুরে খাওয়ায় মর্গে রাখা শিশু সোহানের মরদেহ বিকৃত হয়ে গেছে। মর্গের লোকজনের চরম অবহেলা আর হাসপাতালের দৈন্যদশার এমন নজির দেখে রোগীরাও আতঙ্কে। এ ঘটনায় তোলপাড় হলে হাসপাতালের পরিচালক শুধু দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করে দেখাতে পারেননি। এ ঘটনা গত বুধবারের। সোহানের বাবা সোহাগের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়ায়। তিনি পাঠাওয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ করেন। স্ত্রীর নাম মীম আক্তার। শিশু সোহান তাদের প্রথম ও একমাত্র সন্তান। তারা পরিবার নিয়ে রাজধানীর গুলশানের নর্দার ৫/৬ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ওই বাড়িতে ঘটে যায় এমন দুর্ঘটনা। তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর তার ছেলেকে রাখা হয় মর্গের হিমঘরে। সেখানে রাখার মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটির মুখের বাঁ অংশের উপরের চোয়াল ও কানের মাংস খেয়ে ফেলে ইঁদুর। যে কাটা-ছেঁড়ার ভয়ে শিশুকে ময়নাতদন্ত করতে দেননি সেই কাটা-ছেঁড়ার ঘটনাই ঘটল শিশুটির দেহে। এটি বাবা হিসেবে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। মর্গের সামনেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে গরম ডাল পড়ে শিশুটির গায়ে। দগ্ধ অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে টানা ৮ দিন জীবন্মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দেড় বছরের শিশু সোহান হাওলাদার। নিয়মানুযায়ী শিশুটির মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের কথা। কিন্তুু শিশুটির পরিবার রাজি ছিল না ময়নাতদন্তের জন্য। কারণ ময়নাতদন্তে মরদেহের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কাটা হয়। তাই তারা ঢামেকের সংশ্লিষ্টদের নিকট শিশুটিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ময়নাতদন্ত ছাড়া শিশুটিকে নিয়ে যেতে পারবে বলে তাদের আশ্বাস দেন। এ জন্য তাদের এলাকার থানা পুলিশের অনুমতি আনার পরামর্শ দেন। স্বজনরাও অনুমতির জন্য ছুটে যান থানায়। অনুমতিপত্র আনা পর্যন্ত শিশুটির মরদেহ যেন সুরক্ষিত থাকে এ জন্য রাখা হয় ঢামেকের জরুরী বিভাগের মর্গের হিমঘরে। কিন্তু পুলিশের অনুমতিপত্র এনে যখন হিমঘর থেকে মরদেহ নিতে এলো স্বজনরা তখন তারা দেখতে পান শিশুটির মুখের বাম অংশ ও কানের চারপাশে রক্ত ঝরছে। সেখানে কোন মাংস নেই। পরে তারা বিষয়টি ঢামেকের সংশ্লিষ্টদের জানালে তারা জানায়, হিমঘরে রাখার পর সেখানে ইঁদুর অথবা বেজি মাংসগুলো খেয়ে ফেলেছে। স্বজনদের অভিযোগ- ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টায় বার্ন ইউনিটের আইসিইউর পাঁচ নম্বর বেডে মারা যায় তাদের শিশুটি। এরপর তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইলে চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত ছাড়া ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু তারা ময়নাতদন্ত করবেন না বলে জানান চিকিৎসকদের। এ জন্য তাদের স্থানীয় গুলশান থানা থেকে ময়নাতদন্ত না করার অনুমতিপত্র আনার জন্য পাঠান। দুপুর ১২টার দিকে তাদের শিশুর মরদেহ সুরক্ষিত রাখতে ঢামেক কর্তৃপক্ষ জরুরী বিভাগের মর্গের হিমঘরে রাখে। অনুমতিপত্র নিয়ে গুলশান থানা থেকে তারা এসআই আনোয়ারুল আলমকে সঙ্গে নিয়ে ঢামেকে আসেন। কিন্তু শিশুটিকে মর্গের হিমঘর থেকে বের করে নেয়ার সময় তারা দেখেন তাদের শিশুর মুখের বাম পাশের মাংস নেই। সেই স্থানে তাজা রক্ত ঝরছে। এটা দেখে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে মর্গের সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি তারা জানতে চাইলে তাদের জানানো হয়, ইঁদুর অথবা বেজি শিশুটির মাংস খেয়ে ফেলেছে। হিমঘরের ফ্রিজের ভেতর এমন ঘটনা এর আগেও একাধিকবার ঘটেছে বলে জানায় তাদের। এ বিষয়ে দারোগা ফারুক জানান, শিশুটির স্বজনরা থানায় অনুমতিপত্রের জন্য এলে থানা থেকে আমাকে পাঠানো হয় ঢামেকে। এখানে এসে মরদেহ হিমঘর থেকে বের করে দেখি তার বাম পাশের গালে ক্ষত। ক্ষতস্থানটি ছিল রক্তাক্ত। মনে হচ্ছে হিমঘরের দরজা খোলা ছিল। শিশুটির গাল সম্ভবত ইঁদুরে খেয়েছে। এটা অব্যবস্থাপনার জন্যই হয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- বিষয়টি খুব বেদনাদায়ক, কেন শিশুটির গালে ক্ষত হলো! যারা এই বিভাগের হিমঘরের দায়িত্বে আছেন তদন্ত করে তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, ভবিষ্যতে যেন এমন দুঃখজনক ঘটনা আর না ঘটে। মর্গেও নজরদারি বাড়ানো হবে।
×