ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

’২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের টার্গেট বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ মে ২০১৮

’২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের টার্গেট বাস্তবায়নের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান-২০১০-এর মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যুত বিভাগ ২০২১ সাল মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বিধানের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চায়। এরমধ্যেই অর্থ, বাণিজ্য, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়েছে। বিশেষ বিধানটি এরপর মন্ত্রিসভায় মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার সায় মিললে আগামী অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হতে চলা বিশেষ বিধান দিয়ে ২০২১-এর অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ। প্রথম মেয়াদে ২০০৯-এ দায়িত্ব নেয়ার পরে দেশের বিদ্যুত ও জ্বালানিখাতের অবস্থার পরিবর্তনে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে ইমডেমনিটির (দায়মুক্তি) সুবিধা দিয়ে বিশেষ আইনটি পাস করা হয়। সরকার বলছে এরফলে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমবার ২০১০ সালে এই বিশেষ আইন বিধানটি করা হয় ২ বছরের জন্য। পরবর্তীতে ২০১২ সালে আইনটির মেয়াদ শেষ হলে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তা বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে আইনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট বিশেষ বিধানটির মেয়াদ ৪ বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। আগামী ১১ অক্টোবর সেই চার বছরও শেষ হতে চলেছে। বিদ্যুত বিভাগের দাবি অনুযায়ী তারা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নতুন এক কোটি ৭৯ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছে। ২০০৯ সালে সারাদেশে এক কোটি ৮ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত পেত। যা ২০১৮ সালে এসে বেড়ে দুই কোটি ৮৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে দেশে নতুন ৮৫টি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে ২৭টি বিদ্যুত কেন্দ্র ছিল আর ২০১৮ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২টিতে। ক্যাপটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রসহ এখন দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ গত নয় বছরে দেশের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ১১ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে ৬ হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে ৬ জুন ওই বছর দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট আর ২০১৮ এর গত ২৪ এপ্রিল দেশের নীট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ১০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। এই সমেয় দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২ হাজার ৬৮০ সার্কিট কিলোমিটার বেড়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে সারাদেশে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার কিলোমিটার এখন তার পরিমাণ ১০ হাজার ৬৮০ কিলোমিটার। বিদ্যুত বিভাগ বলছে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। জ্বালানি বিভাগ শুরুতে আইনটি ব্যবহার না করলেও পরবর্তীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি, বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাস কূপ খনন এবং পাইপ লাইন নির্মাণে আইনটির প্রয়োগ করেছে। জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কাজেও গতি এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে বলা হয়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ২৪ নং আইন) বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। এছাড়া এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলে বিবেচিত কোন কাজ, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে দ্রুতই দরপত্র ছাড়া সরাসরি দরকষাকষির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা যায়। দায়মুক্তি দেয়ায় আদালতে মামলা মকোদ্দমা করে কোন পক্ষ প্রকল্পের কাজে বিঘœ ঘটাতে পারে না। সূত্র জানায়, বিশেষ বিধানের মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগ একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করে। ওই সভায় অর্থ, বাণিজ্য, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বারবার সময় বৃদ্ধির বদলে আইনটিকে স্থায়ী করার পক্ষে মতামত দিলে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, এখানে ইমডেমনিটি দেয়া হয়েছে। কোন আইনে দায়মুক্তির বিষয়টি থাকলে তা স্থায়ী করা যায় না। বৈঠকে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র বলছে, সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে এ বিষয়ে কোন সুপারিশ থাকলে তা জানানোর জন্য। সুপারিশগুলো পেলে তা সন্নিবেশিত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশাল এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে আগামী তিন বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানের দ্বিগুণ করতে হবে। সরকার ২০২১ সালে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চায়। বিশেষ আইন ছাড়া এত কম সময়ে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, বিশেষ বিধানটির মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধির সুপারিশ করতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। সকলের মতামত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই মন্ত্রিসভার মতামতের জন্য তা উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
×