ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসব্রিফিংয়ে ওআইসিভুক্ত ৫৮ দেশের প্রতিনিধিদল

রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমারের সৃষ্টি, সমাধান তাদেরই করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ মে ২০১৮

 রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমারের সৃষ্টি, সমাধান  তাদেরই করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চলেছে তা গণহত্যা। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের তৈরি। মিয়ানমারকেই এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে এবং বসবাস করতে পারে সে পরিবেশ তৈরির দায়িত্বও মিয়ানমারের। উল্লেখ্য, শনিবার থেকে ঢাকায় দুদিনব্যাপী ওআইসিভুক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সম্মেলন শুরুর আগে শুক্রবার সংস্থার ৫৮ দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সংস্থার পক্ষে ব্রিফিংকালে প্রতিনিধি দলের প্রধান হিশাম ইউসেফ বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করবে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। তিনি বলেন, শুরু থেকে ওআইসি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসিত উদ্যোগের পক্ষে রয়েছে। এখন এ সঙ্কটের সমাধানের লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, শনিবার থেকে ঢাকায় ওআইসি মন্ত্রীদের যে সম্মেলন শুরু হচ্ছে এতে প্রধান আলোচনার বিষয় হবে রোহিঙ্গা ইস্যু। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা ও তাদের প্রত্যাবাসনে এ পরিষদের আরও ভূমিকা থাকা দরকার ছিল। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে চাপ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। শুক্রবার সকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে একটি বিশেষ বিমান। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রথমে কলাতলীর একটি অভিজাত হোটেলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ও আরআরআরসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি ওআইসি প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের ব্রিফ করেন। এছাড়া প্রতিনিধি দলকে রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। এরপর বেলা বারোটার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সড়কপথে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্লক-৫ এ যান। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উন্নয়ন কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর তারা আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে কি ঘটেছে, কিভাবে বর্বরোচিত কায়দায় হত্যাকা- চালানো হয়েছে, যুবতী ও নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, আগুন দিয়ে কিভাবে রোহিঙ্গা বসতিগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে তার যাবতীয় বিবরণ তুলে ধরে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাজনিয়ারখোলা ক্যাম্পে নিপীড়িত, নির্যাতিত, ধর্ষিত নারীদের সঙ্গেও কথা বলেন। এরপর উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং শেষে ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, ওআইসির এত দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা একসঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আসা বাংলাদেশের কূটনৈতিক বড় সাফল্য। উল্লেখ্য, এর আগে গত রবিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের ১৫ সদস্য উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর জিরো লাইন পরিদর্শন করে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। এরপর ওআইসিভুক্ত দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিশাল বহর। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন অনুষ্ঠানে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসির প্রতিনিধি ছাড়াও নন-ওআইসি কান্ট্রি হিসেবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন।
×