ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন আজ উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ মে ২০১৮

 ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন আজ উদ্বোধন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মুসলিম দেশগুলোর সর্ববৃহৎ জোট ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন আজ শনিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে। ৫ ও ৬ মে ওআইসি’র ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশেষভাবে স্থান পাবে। এ বিষয়ে সম্মেলনকালে একটি বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা করা হবে। ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট ওআইসির ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রীসহ প্রায় সাড়ে ৫০০’র অধিক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ।’ আজ শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। উদ্বোধনী পর্বে ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ এ আল ওথাইমিন, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বান্দার হাজার, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বক্তব্য রাখবেন। এছাড়াও উদ্বোধনী পর্বে ওআইসির আরব, এশিয়া ও আফ্রিকা বিভাগের ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওআইসি সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায় হুমকি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম রাষ্ট্রে বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, ইসলামোফবিয়া ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিম-লে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও ফিলিস্তিন সমস্যা, মুসলিম উম্মাহর চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোন সম্মেলনের আয়োজন করছে। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়। এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফরমগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাস হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে। সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইসলামিক কমন মার্কেটের গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও এফটিএ বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সম্মেলনে উন্নয়ন ও ইসলামী সংহতির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া, বৃহত্তর আন্তঃওআইসি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম প্র্যাকটিস বিনিময়, দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করবে বাংলাদেশ। ওআইসি সম্মেলনে অংশ নিতে আসা বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও তাদের সঙ্গী ছিলেন। সহকারী মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ॥ ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। অনেক আগেই ঢাকায় আয়োজিত ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন উপলক্ষে এই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছিল। ওআইসির ৫টি সহকারী মহাসচিব পদ রয়েছে। মহাসচিবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তার অন্যতম ওই পদে এবারে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান। এ পদে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী কাজাখস্তান। ওআইসিতে প্রতিটি মহাদেশ থেকে একজন করে সহকারী মহাসচিব থাকে। এশিয়া মহাদেশ থেকে কাজাখস্তান ও বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসির অনেক সদস্যের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এবারে ওআইসির যে পদে বাংলাদেশ লড়ছে সেটির অবস্থান সংস্থাটির অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দ্বিতীয় সারিতে হলেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৩ সালের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। সেই বিবেচনায় এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বা সিএফএম আয়োজনের হোস্ট কান্ট্রি হিসেবেও সহকারী মহাসচিব পদে নির্বাচনে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেতে পারে বলে আশা ঢাকার। ওআইসি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দাবি ॥ ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী একই তারিখে রোজা ও ঈদ পালনের দাবি করেন বক্তারা। তারা বলেন, ১৯৮৬ সালে ওআইসি ফিকাহ একাডেমি ঘোষণা করেছিল বিশ্বব্যাপী একই দিনে রোজা ও ঈদ পালিত হবে। তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এবারের ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দাবি করেন আয়োজকরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মুসলিম উম্মাহর সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ এম এ কাশেম ফারুকী, এয়ার কমোডোর (অব) ড. সৈয়দ জিলানী মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ আল মারুফ আল মাদানী প্রমুখ।
×