ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার বর্ষায় সবচেয়ে বড় দুর্যোগ বজ্রপাত

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৫ মে ২০১৮

এবার বর্ষায় সবচেয়ে বড় দুর্যোগ  বজ্রপাত

সমুদ্র হক ॥ বৈশাখের শেষের বেলায় আকাশে নিকষ কালো মেঘের সঙ্গে বৃষ্টি ও ঘন ঘন বজ্রপাতে আগাম বর্ষার পদধ্বনি শোনা যায়। প্রকৃতির মতিগতি দেখে মাঠের কৃষক বলছেন, বর্ষা এলো বলে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে আবহাওয়াবিদদের তেমনই আশঙ্কা। পরিবেশবিদদের একই কথা-জলবায়ুর পরিবর্তন। সাধারণ মানুষ কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। ‘তথাস্তু’ বলে প্রকৃতির সবই মেনে নিচ্ছে। এবারের বর্ষায় বন্যার সঙ্গে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ধেয়ে আসছে। তা হলো- বজ্রপাত। এদিকে সরকারীভাবেও বলা হয়েছে, অতি ও ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যা এবার দ্রুত আসতে পারে। গতবছর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল ২৪টি জেলা। এবারের বন্যায় ৩৭ থেকে ৪১টি জেলা আক্রান্ত হতে পারে। এমন পূর্বাভাস আবহাওয়া বিভাগের। সরকার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে। সূত্র জানায়, গত মাসের শেষ সপ্তাহে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বন্যা মোকাবেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। দুর্যোগের সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। একই সূত্র জানায়, যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে জরুরী বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাদের সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। বন্যার সময় জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ভা-ারে প্রাথমিকভাবে চাল, নগদ অর্থ, ঢেউটিন পাঠানো হয়েছে। যা দিয়ে বন্যা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জরুরীভাবে বন্যার্তদের সহযোগিতা শুরু করা যায়। একই সঙ্গে প্রত্যেক জেলার বন্যা এলাকার কাছাকাছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ব প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে। যাতে বন্যা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্ত মানুষদের আশ্রয় দেয়া যেতে পারে। নদী এলাকার ফ্লাড সেল্টারগুলোকেও পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের অনেক সরকারী প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গে ফ্লাড শেল্টার নির্মিত হয়েছে। সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। বৈশাখেই বর্ষার মতো অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এবারের বর্ষায় আরেকটি বড় দুর্যোগ ধেয়ে আসছে তা হলো বজ্রপাত। ইতোমধ্যে তা শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর এপ্রিল ও মে মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে এক শ’ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর ২০১৭ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ৩শ’ ৭ জনের। এর আগের বছর ২০১৬ সালে বজ্রপাতে মারা যায় ৩শ’ ৮০ জন। সেই বছর মে মাসের প্রথম চার দিনে বজ্রপাতে মারা যায় ৮১ জন। এ বছর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে ২০টি নির্দেশনা দিয়ে তা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। সরকার ২০১৫ সাল থেকে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করেছে। প্রবীন ব্যক্তিগণ বলেন, নিকট অতীতে শুধু বর্ষা মৌসুমে আকাশে বিদ্যুতে ঝলকানি ও মেঘের গর্জন শোনা যেত। বজ্রপাত হতো সামান্য। বর্তমানে বৃষ্টি শুরু হলেই মেঘের তীব্র ঝলকানির পর গগণ বিদারী আওয়াজে মেঘের ডাক শুরু হয়। বিদ্যুতের আঁকা বাঁকা ঝিকঝাক রেখা ঝলসে ওঠার সঙ্গে কখন যে তা ভূমিতে পড়ে তা কেউ বলতে পারে না। এবারের বর্ষায় বজ্রপাতে যে আরও কত প্রাণহানি ঘটে সেই শঙ্কাও করা হচ্ছে। এবারের আষাঢ়ের আগেই দেশজুড়ে অতি ও ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ অবশ্য বলেছে এই অবস্থা মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত থাকবে। এরপর আরও বৃষ্টি নামবে কি না সে বিষয়ে কোন পূর্বাভাস দেয়া হয়নি। এপ্রিল মাসের শেষের দুই দিন থেকে মে মাসের ৪ তারিখ (শুক্রবার) পর্যন্ত দেশে প্রায় প্রতিটি এলাকায় বৃষ্টিপাত লেগেই আছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ঢাকা, টাঙ্গাইল, সন্দীপ, সিতাকু-, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, পাবনা, যশোর রংপুর অঞ্চলে। অতি বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি রোধে বগুড়া অঞ্চলের কৃষকদের বোরো জমির ধান ৮০ শতাংশ পাকতেই কাটতে বলা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক জমির ডুবে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তুলছে। পূর্বাঞ্চলের ময়মনসিংহ নেত্রকোনা সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় বন্যার শঙ্কায় কৃষক ফসল ঘরে তুলছে। উত্তরাঞ্চলের চলনবিল শুকিয়ে যাওয়ায় উর্বর জমিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফসল ঘরে ওঠায় কৃষক অতি বৃষ্টির কবলে পড়েনি।
×