ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে শুরু হচ্ছে ন্যায্যমূল্যে ১৮৪ স্থানে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিপণন

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, মাছের বাজারও চড়া

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৫ মে ২০১৮

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, মাছের বাজারও চড়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চাল-ডালে স্বস্তি থাকলেও রমজান সামনে রেখে ভরা মৌসুমে বেড়ে চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-১৫ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণ ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে রোজা শুরুর আগে আগামীকাল রবিবার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ১৮৪ স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিপণন কেন্দ্রে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি। এর মধ্যে সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটারে, চিনি (দেশী) ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল (মাঝারি সাইজ) ৫৫ টাকা ও খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এ দিকে, রমজান সামনে রেখে চাল-ডালসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের সঙ্গে বেড়েছে রসুনের দাম। ব্রয়লার মুরগির ও মাছের বাজার চড়া। আমদানি ও দেশী উৎপাদন ভাল থাকার পরও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অস্বস্তি রয়েছে ভোক্তাদের। রোজার মাসে ইফতারির বিভিন্ন খাবারের পদ তৈরিতে ব্যবহার হবে এই পেঁয়াজ। এ কারণে বাড়তি চাহিদা রয়েছে পেঁয়াজের। এই চাহিদা পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেশনের কারণে মসলা জাতীয় এ পণ্যটির দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রমজানে পেঁয়াজের দাম নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অনেক ভোক্তা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সারাবছর জুড়ে পেঁয়াজের বাজারে এক ধরনের অস্বস্তি জিইয়ে রাখা রয়েছে। দ্রুত পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলে রোজায় বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৪০-৫০, আমদানি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৪০ টাকা। সেই হিসেবে দেশী পেঁয়াজের কেজি ৩৮ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি পড়ছে ২৮ টাকা। তবে এই পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে রাজধানীর অন্যান্য বাজারে প্রতি কেজি ৪৫-৫০ এবং ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে কাওরান বাজারে কেজি প্রতি দেশী পেঁয়াজ ছিল ৩৪ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ২৫ টাকা। এই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা জামশেদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, মাঝখানে কিছুদিন দাম স্থিতিশীল ছিল। এখন মোকামে দাম বাড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা রসুনের দামও কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই খুচরায় দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে দেশী রসুন আগের মতই প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে চীনা রসুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে তা বেড়ে গিয়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। চলতি সপ্তাহে চীনা রসুনের দাম প্রতি কেজি ১১০-১২০ টাকা। রসুনের মতো বিভিন্ন মানের আদার দামও গত দুই সপ্তাহে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দিকে, রমজান মাস সামনে রেখে এবার চাল, ডাল-ছোলা, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে মুদি দোকানিরা জানিয়েছেন। তবে গত এক সপ্তাহে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। কাপ্তান বাজারের মুদি দোকানদার আবদুল গনি মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম কেজিতে অন্তত ৪ টাকা বেড়ে এখন ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে এখন ৬০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে সবচেয়ে ভাল মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৮৫ টাকায়। এ ছাড়া মানভেদে ৬৪ টাকা ও ৬৫ টাকা দরেও ছোলা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া খেসারি ডাল কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, ডাবলি ৩৮ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের মতো কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি। কমতে শুরু করেছে চালের দাম। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৪ টাকায়। এ ছাড়া জাতভেদে মিনিকেট ৬০-৬৪, নাজিরশাইল ৬০-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারে প্রতি কেজি পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ২৫ টাকা, করল্লা ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম শুরু আগামীকাল ॥ আগামীকাল রবিবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ১৮৪ স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে। চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। ঢাকায় ৩২ স্থানে, চট্টগ্রামে ১০ স্থানে, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি করে এবং বাকি জেলা সদরগুলোতে দুটি করে স্থানে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া টিসিবির নিজস্ব ১০ খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র ও ২ হাজার ৭৮৪ পরিবেশকের কাছ থেকেও ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারবেন। একজন ভোক্তা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৪ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি ছোলা ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে বিক্রির জন্য তিন শ’ থেকে চার শ’ কেজি চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা এবং ৩০ থেকে ৫০ কেজি খেজুর বরাদ্দ থাকবে।
×