ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল সেবার মান বাড়ছে না

বিটিআরসির নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ মে ২০১৮

বিটিআরসির নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ধীরগতি, নেটওয়ার্ক সমস্যা, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও ব্যবহারের চেয়ে বেশি টাকা কেটে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি অপারেটরদের কয়েক দফা নির্দেশ দিলেও মোবাইল সেবার মান বাড়েনি। গত বছরের মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান নজরদারিতে আনতে ফিনল্যান্ডের ‘এনাইট ফিনল্যান্ড লিমিটেড’ নামের একটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে ‘নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং’ যন্ত্রপাতি সংগ্রহের চুক্তি স্বাক্ষর করে বিটিআরসি। গত বছরের ডিসেম্বরে বিটিআরসি যন্ত্রগুলো হাতে পেয়েছে। কিন্তু বিটিআরসি ওই যন্ত্রপাতিও কাজে লাগাচ্ছে না। ফলে মোবাইল সেবার মানও বাড়ছে না। যদি এই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো তাহলে কলড্রপ, রিসিভ লেভেল, কল সেটআপ টাইম, কল সাকসেস রেটসহ মোবাইল ফোন সেবার গুণগত মান নজরদারির মধ্যে চলে আসত। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং যন্ত্রপাতি নিয়ে বিটিআরসি কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সেবার মানের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করে। ওই সময় কয়েকদিন অপারেটররা মোবাইল সেবার গুনগত মান ঠিক রেখেছিল। তখন কলড্রপ খুবই কম হয়েছে। কিন্ত কয়েকদিন পরেই বিটিআরসি নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিং বন্ধ করে দেয়। কেন কি কারণে বন্ধ করা হয়েছে তা বিটিআরসি কোন কর্মকর্তাই বলতে রাজি হননি। তবে বিটিআরসি এসব পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ আবার শুরু করবে বলে জানানো হয়। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিংয়ের জন্য যে পরিমাণ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা তাদের নেই। এই কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের পরে অন্য বিভাগীয় শহরে কাজ শুরু করা যায়নি। সারাদেশে পরীক্ষা চালাতে গেলে বাড়তি যন্ত্রপাতি আনতে হবে। তাছাড়া এসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। দক্ষ জনবল সৃস্টি করতে হলে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। বিটিআরসি দক্ষ জনবল সৃস্টি করতে এমন কোন কর্মসূচী হাতে নেয়নি। এরপরেও সারাদেশে বিটিআরসির পক্ষ থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চালানো হবে। প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের সিস্টেম নিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। ‘নিমো ওয়াকার এয়ার, ইনভেক্স টু এবং ইউন্ডক্যাচার’ নামে তিন ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেটরদের সেবার মানগুলো যাচাই করার কাজ চলছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো ভ্রাম্যমাণ কাজ করছে। ব্যাকপ্যাক বা হ্যান্ডব্যাগে এ যন্ত্রপাতি বহন করা যায়। তবে ‘নিমো-২ যন্ত্রটি ওপেন স্পেসে’ গাড়িতে বহন করতে হয়। এই যন্ত্র একটি বড় এলাকার ফোন কল নজরদারি করতে পারবে। যন্ত্রগুলো যে শুধু ফোন কল নজরদারি করবে তা নয়, এগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোরও নজরদারি করতে পারবে। বিটিআরসি জনিয়েছে, নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি মনিটরিংয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কে কি করছে তাও নজরদারি করা সম্ভব। যন্ত্রগুলো পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার তিনজন প্রশিক্ষক বিটিআরসি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গতবছরের শেষ দিকে যন্ত্রপাতিগুলো বিটিআরসির হাতে আসে। এ বছরের শুরু থেকেই কলড্রপসহ বিভিন্ন সেবার মান যাচাইয়ের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩০টি এলাকায় কাজ করা হয়। বিদেশী প্রশিক্ষকরা সঙ্গে থেকে নজরদারির কাজ করেছে। বিটিআরসির উদ্যোগের ফলে কলড্রপ, কল প্রতিষ্ঠার সময়কাল, কলের স্থায়িত্ব, কথা বলার মান, কারিগরি ত্রুটি, ডাটা আদান-প্রদানের মান ইত্যাদি সম্পর্কে সত্যিকারের চিত্র উঠে আসবে। ওই সব রিপোর্ট অনুযায়ী বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। এই ব্যবস্থা নেয়া হলে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বিভিন্ন সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। সেবার মান যাচাইয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কাছে আগে এ ধরনের কোন যন্ত্রপাতি ছিল না। অপারেটরদের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই এসব সেবার মানের তথ্য নির্ভর করতে হতো। তখন অপারেটররা কলড্রপের পরিমাণ যা বলত তাই মেনে নিতে হতো। এখন আর কোন অপারেটর মিথ্যা তথ্য দিতে পারবে না। তাদের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে না। অপারেটররা বলছে, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) নির্ধারিত কলড্রপের যে মান রয়েছে, তার নিচেই কলড্রপ হচ্ছে। তাদের এই দাবির যৌক্তিকতা কতটুুকু এখন বোঝা যাবে। তাছাড়া অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফোনের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কলড্রপ নিয়ে আইটিইউর নির্ধারিত মান হচ্ছে শতকরা তিনটি পর্যন্ত কলড্রপ হলে সেটাকে মানসম্মতই ধরে নেয়া হয়। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও বাংলালিংক ছাড়া আর কেউ কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়নি। যদিও সব অপারেটর কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। কিন্তু তারা গ্রাহকদের কোন ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। এ অবস্থায় বিটিআরসিই গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। উল্লেখ্য বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ কোটির বেশি সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে। এই নিবন্ধিত সিমগুলো সক্রিয় রয়েছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটির ওপরে।
×