ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে গাজীপুর, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ খুলনায়

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ মে ২০১৮

নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে গাজীপুর, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ খুলনায়

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর, নূরুল ইসলাম, টঙ্গী ও অমল সাহা, খুলনা থেকে ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ মে। এ নির্বাচনকে ঘিরে পুরো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা এখন নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে। সর্বত্রই উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। সিটি কর্পোরেশনের সর্বত্রই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের পদচারণা এবং মাইকিংয়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুরো নির্বাচনী এলাকা। নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটারের খোঁজে সবাই হন্যে হয়ে ছুটছেন। ঝড়-বৃষ্টিসহ কোন বাধাই তাদের থামাতে পারছে না। এদিকে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, তর্কযুদ্ধ ও উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। রোদের প্রখরতা, কখনও বৃষ্টির হানা উপেক্ষা করে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও পথসভা করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে উত্তেজনাও সৃষ্টি হচ্ছে। মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থী ও তাদের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করছেন, তেমনিভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি ধমকি প্রদানের অভিযোগ তুলছেন। এর মধ্য দিয়ে আবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা শুক্রবার সকাল হতে রাত পর্যন্ত ব্যাপক গণসংযোগ, বৈঠক ও পথসভার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। জুমাবার হওয়ায় এদিন প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় তারা মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন, কথা বলেছেন এবং ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। এদিনেও ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লায়, দোকানপাট, কলকারখানায় ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করেছেন এবং প্রচারপত্র বিতরণ করে ভোট চাইছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জোট এবং মহাজোটের শরিকদলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদিন বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমাগম ঘটলেও আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের পদচারণা তেমনটি ঘটছে না। তাই এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) দিকে। হেভিওয়েট এ দু’প্রার্থী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা ভিড় জমাচ্ছেন। এ দু’প্রার্থীর পথসভা পরিণত হয় জনসভায়। তবে নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে নেই অন্য ৫ মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররাও। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে তারাও হন্যে হয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বৃহস্পতিবার ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এখনও নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তবে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাজী রুহুল আমিন তার ৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। জেলা শহরের পৌর মার্কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ইশতেহার ঘোষণা দেন তিনি। নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী উত্তাপ ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী উত্তাপ ক্রমশঃ বাড়ছে এবং তা গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রার্থীদের নানা অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের উপস্থিতিতে গাজীপুরে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ দাবি করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির গণসংযোগ ও প্রচারণায় বিভিন্ন মামলার আসামি ও সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জবাবে নির্বাচন কমিশনার জানান, এ বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ নেই। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা-গণসংযোগে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের বিষয়ের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি জানি না এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে নির্দিষ্ট করে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কিনা। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না থাকলে এসব বক্তব্যই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। যদি কাউকে বদলি করতে হয়, তাহলে একটা নির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে। নির্বাচন কমিশন তখন তা চিন্তা করে দেখবে এ অভিযোগের পেছনে কতটা সত্যতা রয়েছে। কিন্তু ঢালাওভাবে কেউ বললে কারও প্রত্যাহারের ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারব না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ॥ শুক্রবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে নেমে পড়েন। তিনি সকালে সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেন। জুমার নামাজের আগে পর্যন্ত ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মোজাম্মেল হক সড়ক এবং সাতাইশ এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে ভোট চান এবং লিফলেট বিতরণ করেন। নির্বাচনী গণসংযোগকালে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হলে কর্মী-সমর্থকরা বৃষ্টিতে ভিজেই গণসংযোগ অব্যাহত রাখেন। পরে সাতাইশ স্কুলে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক, সচিব এবং সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে নেতৃবৃন্দ ঘরে ঘরে ভোট চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দুপুরে তিনি সাতাইশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোট চান। নামাজের পর তিনি ৪৬ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলগেট, হিমার দিঘী, তিস্তার গেট, হকের মোড়, নতুনবাজার, স্টেশন রোড, ব্যাংকের মাঠ ও গোপালপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তিনি গাজীপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, সিকদার মার্কেট, বাইগার টেক, সাতাইশ রোডের ভিয়েলাটেক্স কারখানার সামনে, খরতৈল মোড়, সাতাইশ চৌরাস্তা, মিলগেট, লামাবাজার, মুন্নু গেট, স্টেশন রোড, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, হকের মোড়, দত্তপাড়া চেরাগ আলী মার্কেটের সামনেসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন মাস্টার, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রজব আলী, মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নীলিমা আক্তার লিলি, জাতীয় পার্টি মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ ইমাম সমিতি গাজীপুর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, গাজীপুর জেলা শ্রমজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আবুল হাসেম মোল্লা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদের গাজীপুর জেলা সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশন গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার, টঙ্গী থানা ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী মঞ্জুর, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রাইভেট মাদ্রাসা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মাওলানা এইচ এম শাহ আলম, গাজীপুরের রংপুর বিভাগ জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আশরাফ আহমদ খানসহ প্রমুখ নেতা। বিএনপি প্রার্থী ॥ এদিকে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এদিন সকালে মহানগরের উত্তরপ্রান্ত গাজীপুর গ্রাম থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। পরে তিনি ভাওরাইদ, হাতিয়াব, পোড়াবাড়ি এলাকায় গণসংযোগ শেষে তিনি বাংলাবাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তিনি গজারিয়াপাড়া, বাংলাবাজার, ভীমবাজার, মাস্টারবাড়ি ও সালনাসহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করে গণসংযোগ করেন। এ সময় বিএনপির জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, জেলা যুবদলের সভাপতি এ্যাডভোকেট এমদাদ খান, গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, ভিপি হারুনুর রশিদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, শাহানা আক্তার, আব্দুল খালেক হাওলাদার, ডাঃ হারেছ মোল্লা, ৩১ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ উজ জামান, হাবিবা, শামীম, জাহাঙ্গীর ২নং ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, পেশাজীবী গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুবনেতা আনোয়ার হোসেন, ১১ নং ওয়ার্ডে বিএনপি কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা খান সফরী, মিজানুর রহমান সরকার, নাজমুল হাসান, কাজী সামসুল হুদা, ২৫ নং ওয়ার্ডে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা কামাল আনোয়ার, ভিপি ইব্রাহিম, ৪১নং ওয়ার্ডে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন এবং ভোটারদের কাছে ভোট চান। ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী ॥ অপরদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমান শুক্রবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের সালনা এলাকায় ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বৈঠক করেন। সকাল ১০ টার দিকে ইসলামী ছাত্র খেলাফতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমবাগ, নছের মার্কেট, হাজী মার্কেট, নূর মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন ও প্রচারপত্র বিলি করেন। পরে তিনি টঙ্গী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং জুমার খুতবা পূর্ব সময়ে মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি তার মীনার প্রতীকে সকলের ভোট ও দোয়া কামনা করেন। বিকেলে তিনি টঙ্গী কলেজ গেট ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগে সময় পার করেন। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট গাজীপুর জেলার মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ ও যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুখলেছুর রহমান ও জেলা কার্যকরী সদস্য মাওলানা মুফতী আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা শফিকুল ইসলাম ২০, ২১ ও ২২ নং ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করেন। সিপিবির মেয়র প্রার্থীর ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজী রুহুল আমিন তার নির্বাচনী ইশতেহার শুক্রবার সকালে ঘোষণা করেন। জেলা শহরের পৌর মার্কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ইশতেহার ঘোষণা দেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যথার্থ পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের অভাবে এই শহরটি যানজট, জলাবদ্ধতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অচল শহরে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবার জন্য বাসযোগ্য, উন্নত, মানবিক সিটি গড়ার লক্ষ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহ-সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় সদস্য আহসান হাবীব লাভলু, মন্টু ঘোষ, জেলা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন খান, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির খোকন, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থীর ইশতেহারের নয় দফা হলো- যোগাযোগ ও যাতায়ত ব্যবস্থা ॥ যানজট নিরসনে রেলপথ ও সড়কপথ প্রশস্তকরণ, মহাসড়কে রিকশা লেন, সিটি বাস চালু তথা গাজীপুর থেকে ঢাকা ‘জট মুক্ত’ বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হবে। রাস্তা পারাপারের সকল স্থানে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ॥ শ্রমিকদের খাসজমি বরাদ্দ করে স্বল্পমূল্যে বহুতল ভবন নির্মাণ, কারখানা ভিত্তিক রেশনিং প্রথা চালু, শিল্পাঞ্চলভিত্তিক সরকারী হাসপাতাল স্থাপন, সকল ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হবে। মানসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গণ গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হবে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি এবং বিনামূলে শিক্ষার কোটা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ ॥ শিল্পাঞ্চলভিত্তিক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হবে। রিসাইক্লিং করে ময়লাকে সম্পদে রূপান্তর করা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক পার্ক গড়ে তোলা হবে। পরিবেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘পরিবেশ কমিটি’ গঠন করা হবে। নিরাপত্তা ॥ সামাজিক উন্নয়ন, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ সামাজিক অপরাধমুক্ত সিটি গড়তে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ সকল আধুনিক যান্ত্রের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা ॥ নারীদের হয়রানি, নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। ধর্ম পালন ॥ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখব। ওয়ার্ডভিত্তিক সরকারী কবরস্থান নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেক থানায় একটি করে শ্মশান স্থাপন করা হবে। সংস্কৃতি ॥ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য মুক্তমঞ্চ ও মিলনায়তন নির্মাণ, সঙ্গীত, নাটকসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হবে। সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক গড়ে তোলা হবে। সেবা ॥ গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করা, নগর তথ্য কেন্দ্র চালু, সহজ শর্তে অনলাইন সার্ভিস উন্নয়নের মাধমে নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, ট্রেডলাইসেন্স প্রদান করা হবে। কর্মপদ্ধতি ও জবাবদিহিতা ॥ প্রতিবছর দুইবার জনগণের মুখোমুখি জনতার মতামত ও অগ্রগতি কর্মসূচী পালন করা হবে। সিটির প্রত্যেক অফিসে ‘মানুষের কথা’ নামক সিলগালা বাক্স থাকবে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনভাবে তাদের অভিযোগ ও কথা লিখে রাখতে পারবেন। প্রতিবছর নিজের এবং পরিবারের আয় ব্যয় ও সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা হবে। খুলনায় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি ॥ এদিকে কেসিসি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তোলেন বিএনপি মনোনীত ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। একের পর এক মঞ্জু ও তার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নেতারা নানা অভিযোগ করে আসছেন। মঞ্জুর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার দলের নেতারা। বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস ব্রিফিং করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এর প্রতিবাদে তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। পরে দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতে পুনরায় প্রেসব্রিফিং করে মঞ্জু নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। মঞ্জুর প্রেস ব্রিফিংয়ে উত্থাপিত অভিযোগের প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুপুর ২টায় প্রেসব্রিফিং করেন তালুকদার অব্দুল খালেকের নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নৌকার জোয়ার দেখে নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে তিনি মিথ্যাচার করছেন, বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করে ফয়দা লোটার চেষ্টা করছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শেষ করে করে মেয়র প্রার্থী মঞ্জু আলমনগরের ১৩নং ওয়ার্ডের রেললাইনের বস্তিতে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে মিছিল করছিল। সেখান থেকে তারা বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করে বিএনপির নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মঞ্জু নেতাকর্মীদের নিয়ে রেললাইন বস্তির দিকে চলে যান। আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা করে। এতে ৪-৫ জন আহত হন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সন্ধ্যায় বিআইডিসি রোডে মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রচারণা চালানোর সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বিএনপির মিছিল থেকে তাদের মিছিল লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তাদের হামলায় আওয়ামী লীগের দুই কর্মী আহত হয়। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, তর্কযুদ্ধ যেমন চলছে, তেমনিভাবে চলছে মাইকে প্রচার, গণসংযোগসহ নির্বাচনী অন্যান্য কার্যক্রম। কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বুঝে নিতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান খালেকের ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক শুক্রবার নগরীর ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ, মতবিনিময় করেন। সকালে দৌলতপুর মহসিন মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর দৌলতপুর কাঁচাবাজার, পাইকারি বাজার, মাছ বাজার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় ভোটারদের উদ্দেশে মেয়র প্রার্থী খালেক বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর অধিকাংশ সময়জুড়ে বিএনপির মেয়র থাকলেও নগরীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। নগরীর যা কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছিল তা ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার (খালেক) দায়িত্ব পালনকালে। উন্নয়নের জন্য নগরবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে খালেক বলেন, তার পক্ষেই নগরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব। আর এর কিছু দৃষ্টান্ত তিনি আগে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে রেখে গেছেন। তিনি উন্নয়ন বুঝে নিতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহরজুড়ে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটা দেখে বিএনপি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচন বানচালের জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। তাই বিএনপির অপপ্রচারে কাউকে কান না দেয়া এবং বিএনপির যে কোন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন খুলনা মহানগর জাসদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম বন্দ, বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, সাধারণ সম্পদক শহীদুল ইসলাম বন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহীন জামাল পন, দৌলতপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শেখ ফারুক হাসান হিটলু প্রমুখ। কেসিসিতে নাগরিক শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার মঞ্জুর ॥ কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু শুক্রবার সকালে নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের বাগমারা ব্রিজ, মিস্ত্রিপাড়া বাজারসহ সংলগ্ন এলাকায় গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে নগর ভবনের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে, নাগরিকদের ইচ্ছায় সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হবে। নাগরিক শাসন ভিত্তিক জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তিনি নগরবাসীর সমর্থন ও রায় প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, কোন উস্কানিতে নির্বাচনী মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। মঞ্জু আরও বলেন, নগরীতে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় শাসক দলের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা যেনতেন উপায়ে নৌকা মার্কাকে ভোটে জেতাতে চায়। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে ধানের শীষের কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাধ্য করা হচ্ছে নৌকার পক্ষে কাজ করতে। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের ভোটের ফলাফল বুঝে না নিয়ে বিএনপির কোন কর্মী ঘরে ফিরবে না। গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপি নেতা ওহেদুজ্জামান দীপু, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন আলী, বিজেপির নগর সভাপতি এ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জেপি (জাফর) সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট বজলুর রহমান, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জামায়াত নেতা এ্যাডভোকেট শাহ আলম প্রমুখ।
×