ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর চরে ‘বাংলামতি’ ধান

চরের বুকে বাসমতি চাষ, ম-ম গন্ধ- কৃষকের স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৫ মে ২০১৮

চরের বুকে বাসমতি চাষ, ম-ম গন্ধ- কৃষকের স্বপ্ন পূরণ

শংকর লাল দাশ চরের মাটিতে বাসমতি ধান ফলানোর স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। পরিশ্রম প্রচুর। শেষ পর্যন্ত সফলতার মাইলফলক স্পর্শ করলেন কৃষক নাসির গাজী। সবাইকে তাক লাগিয়ে স্থানীয় মাপের ৪০ শতক জমিতে বাসমতি ফলিয়েছেন তিনি। ধানে সোনা রং ধরেছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ঘরে তুলবেন স্বপ্নের সোনালী ফসল। এখন ক্ষেতের চারপাশে শুধুই বাসমতি ধান ম ম গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা আশপাশের কৃষকদের বিমোহিত করেছে। যদিও স্থানীয় কৃষি বিভাগ এটিকে বাসমতি নয়, বলছে ‘বাংলামতি’ ধান। কিন্তু নাসির গাজী তার মতে অটল। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নে যে ক’জন অবস্থাপন্ন কৃষক রয়েছেন, নাসির গাজী তাদের অন্যতম। প্রচুর ধানী জমি ছাড়াও তার রয়েছে মাছচাষের প্রকল্প। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে ছোটবেলা থেকেই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। নিজ হাতে লাঙ্গলের ফলা ধরেন তিনি। ধান কাটা, মাড়াই সবই করেন। চাষাবাদের সকল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। বছর জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তার বাড়িতে রয়েছে ফলদ বৃক্ষের বাগান। বুড়াগৌরাঙ্গ নদ পেরিয়ে চরকাজল ইউনিয়নের বুক চিরে সোজা দক্ষিণে ১৫-১৬ কিলোমিটার গেলে চরআগস্তি গ্রাম। বহু আগে গ্রামটি ছিল ধূ ধূ বালুচর। এখন চারদিকে সবুজের সমারোহ। জনবসতিতে পরিপূর্ণ বর্ধিষ্ণু গাঁ। ধান ছাড়াও নানা রকমের রবিশস্য চাষ হয়। এ গাঁয়েই নাসির গাজীর বাড়ি ছাড়াও প্রচুর জমি রয়েছে। জানালেন, এবার বোরো মৌসুমে ৯ একর জমিতে বিআর ২৮, বিআর ৪৭ ও মালা চায়না জাতের ধানের চাষ করেছেন। এর আগে করেন তরমুজ চাষ। বেশ লাভ করেছেন। ধানেও যথেষ্ট লাভের আশা তার। চারপাশে বোরো ধানের ক্ষেত। মাঝে ৪০ শতকের ছোট্ট এক টুকরো জমিতে বাসমতি ধানের চাষ করেছেন। নাসির গাজী জানান, বাসমতি ধানের খ্যাতি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছেন। হাল ধরার পর থেকে নিজের হাতে বাসমতি ধান চাষের স্বপ্ন দেখছেন। বীজ ধানের জন্য বছরের পর বছর বহু জায়গা ঘুরেছেন। কিন্তু মেলাতে পারেননি। এবার ভাগ্যক্রমে ঢাকা থেকে মাত্র ১২ কেজি বীজ ধান সংগ্রহ করেছেন। যা এসেছে ভারত থেকে। আর তা দিয়েই বুনেছেন স্বপ্নের ফসল। আশা করছেন এটুকু জমিতে অন্তত ২০-২২ মন ফলন পাবেন। তিনি আরও জানান, বাসমতি চাষে সব মিলিয়ে ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নিজের হাতে ফসল বুনেছেন। পরিচর্যা করেছেন। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলবেন। উৎপাদিত ধানের কিছু অংশ পরিবারের খাওয়ার জন্য রাখবেন। বাকিটা বীজ ধান হিসেবে রাখবেন। আসছে রোপা আমন মৌসুমে আরও বেশি জমিতে আবার চাষ করবেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসমতি ধান গাছ কিছুটা ছোট আকারের। তবে গোছায় অনেক ধান। প্রতিটি ধান বেশ লম্বা ও সরু। অনেকটা দূর থেকে ধানের ম ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। যা আশপাশের কৃষকদেরও বিমোহিত করছে। পার্শ্ববর্তী কৃষক নূরুজ্জামান জানান, সুযোগ পেলে তিনিও এ ধানের চাষ করবেন। কৃষক আলী হোসেন জানান, বাসমতি ধানের চাষ করে নাসির গাজী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এমন মত দিলেন আরও কয়েকজন। বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলের কোথাও বাসমতি ধানের চাষ হয় না, বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল মান্নান জানান, এটি বাসমতি নয়। বাংলামতি। যা বিআর ৫০ হিসেবে পরিচিত। তিনি আরও জানান, দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা সুগন্ধি জাতের বিআর ৫০ এ অঞ্চলে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু চাল ভেঙ্গে যায়। তাই কৃষকরা এ ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এরপরেও যদি নাসির গাজী এ ধানের চাষ করে থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাসমতি চাল খুবই প্রিয়। কিন্তু দেশের কোথাও এর চাষ হয় না। ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতির খ্যাতি পৃথিবী জুড়ে। এর সুঘ্রাণ খাবার টেবিল মাতিয়ে রাখে। নাসির গাজীর বাসমতি ধান চাষের উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদেরও উৎসাহিত করেছে। চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসাইন বাবুল মুন্সি ও ইউপি মেম্বার মোঃ হান্নানসহ কৃষকদের অনেকেই এটিকে বাসমতি ধান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
×