ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় অনিয়ম ॥ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্যক্রম ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৫ মে ২০১৮

কলাপাড়ায় অনিয়ম ॥ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্যক্রম ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৪ মে ॥ পরিবহন ও বিতরণ ব্যয় এবং খাদ্য গুদাম থেকে ওজনে কম দেয়ার কারণে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল উত্তোলন ও বিক্রিতে ডিলাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একই দশা খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিজিডি, ভিজিএফসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিসহ ডিলারদের দীর্ঘদিনের দেনদরবারে কোন সুরাহা মেলেনি। ফলে সরকারের দরিদ্র মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানের কর্মসূচীতে অনিয়মের ধারা কমছে না। অভিযোগ বেড়েই চলছে। বঞ্চনাসহ প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষুণœ হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। জানা গেছে, সামাজিক খাদ্যবান্ধব নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় কলাপাড়ায় ১০ টাকা কেজি মূল্যে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের সুবিধাপ্রাপ্তর সংখ্যা ২০ হাজার ১৫৩ জন। এরা একেকবারে জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা। এ তালিকা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। প্রায় ২১শ’ কার্ডধারীর হদিস নেই। অথচ এদের বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করা হয়। একই ব্যক্তির নামে একাধিক কিংবা একই পরিবারে চার/পাঁচটি কার্ডও রয়েছে। এ চাল বিতরণের জন্য উপজেলায় ৩৪ ডিলার নিয়োগ রয়েছে। এছাড়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ভিজিডির আওতায় প্রতিমাসে মাথাপিছু ৩০ কেজি করে উপজেলার তিন হাজার ৫৮৯ দরিদ্র মহিলা পরিবারকে বিনামূল্যে চাল প্রদান করা হয়। ভিজিএফের আওতায় ছয় হাজার ৯৫ জেলেকে মাথাপিছু ৪০ কেজি করে চার মাস চাল বিতরণ করা হয়। এসব তালিকা তৈরি নিয়েও রয়েছে এন্তার অভিযোগ। ভিজিডির কয়েক কার্ডধারী ২০১৭-১৮ চক্রের চাল না পাওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন। এসব অনিয়মের পরও গুদাম থেকে চাল কম দেয়ার অভিযোগটি এখন গণ অভিযোগে পরিণত হয়েছে। একাধিক ডিলার জানান, সাড়ে আট টাকা দরে খাদ্য গুদাম থেকে চাল সংগ্রহ করে দশ টাকা দরে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের চাল বিক্রি করতে হয়। এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা লাভের মধ্যে পরিবহন, বিতরণ, গুদাম এবং দোকান ভাড়াসহ লেবার খরচ রয়েছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা। লোকসানের বোঝা বইতে হয়। একাধিক ডিলার জানান, খাদ্য গুদাম থেকে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ওজনে কম দেয়া হয়। যা নিয়ে বিতরণের সময় অনেক ঝামেলা হচ্ছে। এছাড়াও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কার্ড প্রদান ছাড়াও তাদের চাল দিতে হয়। ধুলাসরের ডিলার রফিক দালাল জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল বিক্রি করে লোকসান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি চাল উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা যায়, বালিয়াতলী ইউনিয়নের ডিলার ইউসুফ চাল তুলতে অপারগতা প্রকাশ করে আবেদন জমা দিয়ে চাল উত্তোলন ও বিতরণ বন্ধ রেখেছেন। একই অবস্থা ভিজিডি ও ভিজিএফ কর্মসূচীর। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যাদের এসব চাল খাদ্য গুদাম উত্তোলন করে বিতরণ করতে হয়। ফলে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে এসব চাল উত্তোলন নিয়ে অনীহা। পরিবহন ও বিতরণ ব্যয়ভার মেটাতে গিয়ে তাদের সমস্যার শেষ নেই। লতাচাপলী ইউপি চেযারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, বাধ্য হয়েই ভিজিডি ও ভিজিএফের চাল উত্তোলন ও বিতরণ করতে হয়। লোকসানের পরও সামাজিকভাবে বিব্রতকর অবস্থার শিকার হন তারা। কলাপাড়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয়ভাবে চাল সংগ্রহ করে ডিজিটাল মিটারে পরিমাপ করে চাল বিতরণ করা হয়। ওজনে কম হওয়ার সুযোগ নেই। আর পরিবহন ব্যয়ভার নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই এর সমাধান হবে।
×