ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহকরা হতাশ

নতুন নম্বরে দশ হাজার অভিযোগ, বিটিআরসি একটিরও সমাধান দেয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৫ মে ২০১৮

নতুন নম্বরে দশ হাজার অভিযোগ, বিটিআরসি একটিরও সমাধান দেয়নি

ফিরোজ মান্না ॥ বিটিআরসির নতুন শর্টকোড নাম্বার ‘১০০’ তে গত দুই মাসে ১০ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন অভিযোগের সমাধান দিতে পারেনি বিটিআরসি। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অভিযোগ জানানোর জন্য বিটিআরসি নতুন শর্টকোড নাম্বার চালু করে ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর থেকে গ্রাহকরা নানা বিষয়ে নতুন নাম্বারে অভিযোগ জানাতে শুরু করে। শর্টকোড নাম্বার আগেও ছিল, কিন্তু ওই নাম্বারটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। নতুন নাম্বারটির অবস্থাও আগের নাম্বারের মতোই হচ্ছে। ২০১৬ সালে ‘২৮৭২’ নাম্বারের একটি শর্টকোড চালু করা হয়েছিল। পুরনো শর্টকোড নাম্বার বাতিল করে নতুন শর্টকোডের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইমসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানানো সহজ হবে বলে বিটিআরসি দাবি করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা গত দুই মাসে এ দাবির কোন সুবিধা পায়নি। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের সমাধান ও এ সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কমিশন গঠনকৃত ‘কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট টাক্সফোর্স’ গঠন করে। এই ট্রাক্সফোর্স ‘কলসেন্টার’ থেকে বিভিন্ন অভিযোগের সমাধান করার কথা। টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের অনিষ্পত্তিকৃত বিটিআরসির কলসেন্টার আমলে নেবে। কলসেন্টার থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ বিটিআরসির অভিযোগ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে। অপারেটর থেকে অভিযোগের সমাধান বিটিআরসিকে জানানোর পর তা গ্রাহকদের জানানো হবে। বর্তমানে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার জন্য মোট লাইসেন্স সংখ্যা ২ হাজার ২৫। এই বিপুলসংখ্যক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। গ্রাহকদের এই বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা করতে বিটিআরসি উদ্যোগ নেয়। গ্রাহকরা যাতে নানা অনিয়মের প্রতিকার পান সেজন্য বিটিআরসি চালু করা কলসেন্টারের কাছে তারা ১০০ নাম্বারে ডায়াল করে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। নতুন শর্টকোড নাম্বার চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু কোন অভিযোগের সুরাহা করতে পারেনি বিটিআরসি। উল্টো অভিযোগ উঠেছে বিটিআরসির কলসেন্টারের বিরুদ্ধে। তারা এখন কোন অভিযোগ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অভিযোগের পাহাড় জমে যাওয়ায় কলসেন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিরক্তি প্রকাশ করছে। গ্রাহক সেবা দূরের কথা এখন নতুন নাম্বারটি গ্রাহক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিটিআরসি ২০২১ ভিশন বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশে ফোরজি সেবা চালু করা হয়েছে। ফোরজি সেবার মধ্য দিয়ে দেশ টেলিযোগাযোগ খাতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিপদ বাড়ছে। সাইবার ক্রাইমের ঝুঁকিও বেড়েছে। এ জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিটিআরসিও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ ছাড়া গ্রাহকদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ সব প্রতিকূল অবস্থার সমাধান করতে বিটিআরসি একটি শর্টকোড নাম্বার দিয়েছে। ১০০ নাম্বারের শর্টকোড নাম্বারে ফোন করে যে কোন গ্রাহক যে কোন স্থান থেকে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিটিআরসি সূত্র মতে, মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজ থেকে শুরু করে কলড্রপ সব কিছু মনিটর করা হবে। অপারেটরদের অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়েছে। এগুলো আমলে নেয়া হবে। গত বছরের মার্চে বিটিআরসির বোর্ড মিটিংয়ে মনিটরিং সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এবার ফোরজি চালুর পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। মনিটরিং সেল যে কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করবে। তদন্তে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী গ্রাহককে বড় অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অপারেটররা কোন গুরুত্বই দেয়নি। এবার বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) বোর্ড সভায় সম্প্রতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। দিনের কোন অংশে কত পয়সা মিনিট বা সেকেন্ড, আবার কোন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা রিচার্জ করলে ‘এত মিনিটি ও এত এসএমএস ফ্রি’। এসব অফার পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। গ্রাহকরা এসব অফার গ্রহণ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একইভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা এসব এসএমএসের কারণে এখন অতিষ্ঠ। এরপরও অপারেটররা কাজটি করেই যাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অফার দিয়েই যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহক কোন না কোনভাবে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (ন্যূনতম সম্ভাবনা) বা আশঙ্কা রয়েছে এমন কোন প্যাকেজ বা অফার অনুমোদন দেয়া হবে না। গ্রাহকদের ফিটব্যাক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন প্যাকেজ বা অফারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৭ দিন হতে হবে। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন ও নববর্ষ এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আলাদাভাবে স্বল্প সময়ের জন্য (ন্যূনতম তিন দিন) অনুমোদন দেয়া হবে। যদি কোন অপারেটর বিশেষ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম অফার দেয় তাহলে ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অফার বা প্যাকেজ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে না। কোন অফার শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসিক অফার হতে হবে ন্যূনতম ৩০ দিন। মাসিক অফার ৩০ দিনের এক ঘণ্টা কম হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব গ্রাহক বিটিআরসিতে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। তারা বিটিআরসি পর্যন্ত আসার মতো সুযোগ তাদের রয়েছে। যারা খুব সাধারণ গ্রাহক তারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি পর্যন্ত আসতে পারছেন না। দেশে বর্তমানে ১৪ কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন যদি মোবাইল অপারেটররা এক টাকা করে হাতিয়ে নিলেও প্রতিদিন ১৪ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা নিচ্ছে।
×