ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

বরিশালেও প্রার্থী বদলের দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৫ মে ২০১৮

বরিশালেও প্রার্থী বদলের দাবি বিএনপির

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন চলমান নির্বাচনে ২০১৩ সালের বিজয়ী দুই মেয়রকে এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থী বদল করায় বরিশালের সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা চলছে। এমনিতেই বরিশালের বর্তমান বিএনপি দলীয় মেয়র আহসান হাবীব কামালকে নিয়ে নিজ দলেই বিভেদ স্পষ্ট। তার পরেও বিসিসির বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল কি আসছে সিটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে অফিস-আদালতপাড়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। আগামী ঈদ-উল-ফিতরের পর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে গাজীপুর ও খুলনার দিকে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকলেও অনেক আগে থেকেই বরিশালে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখানকার ভোটররাও অতীত এবং বর্তমানকে নিয়ে নানা হিসেব কষতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে মনোনয়নের জন্য চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের চেষ্টা, তদবির ও মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ। যদিও ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের একমাত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। নিজ দল ও সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণার পর থেকেই একসময়ে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বরিশাল মহানগরীর অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জটিল ও কঠিন হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তার কাছে অন্যসব দলের যেমন-তেমন প্রার্থী নৌকার জোয়ারে ভেসে যাবে বলেও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রমতে, ২০০৮ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণকে ২০১৩ সালে ২২ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবীব কামাল। বর্তমান সরকারের আমলে অন্যসব মহানগরগুলোতে বিএনপির মেয়ররা মামলা ও সাময়িক বরখাস্তের খড়গে পড়লেও সে তুলনায় পুরোটা সময়ই নিরাপদে ছিলেন বরিশালের মেয়র কামাল। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে কামালকে নিয়েও চলছে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস। দলের বৃহৎ একটি অংশ প্রকাশ্যেই মেয়র কামালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মসূচীতে নেতাকর্মীরা মেয়র কামালকে নানাভাবে লাঞ্ছিতও করেছেন। বরিশাল জেলা বিএনপির একটি বড় অংশই গাজীপুর এবং খুলনার মতো বরিশালেও প্রার্থী পাল্টানোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলেছেন। তবে মেয়র আহসান হাবীব কামাল বলেন, দলীয় প্রতীকের ভোটে তাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে। দল যদি মনোনয়ন দেন তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আর দলের নেতাকর্মীরা যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অন্যদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণ, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিন। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, প্রার্থী কে হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ আছে। সরকার সকল জায়গায় প্রভাব খাটাচ্ছে, তাই নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সূত্রমতে, একসময়ে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশালে সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর (২০০৩ সালে) প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মজিবর রহমান সরোয়ার। পরবর্তী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি (সরোয়ার) নির্বাচন করতে পারেননি। আর সে সময় বিএনপির একাধিক প্রার্থীর সুযোগে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল সদর আসন বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও হিরণ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অবস্থান যে শক্তিশালী হয়েছে তা ২০১৩ সালের নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়েছে। আগের নির্বাচনে বিএনপির তিন প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগিতে জয়লাভ করেছিলেন হিরণ। আর ২০১৩ সালে বিএনপিতে ছিল একক প্রার্থী। আর তার কাছে হিরণ পরাজিত হলেও আগের নির্বাচনের চেয়ে তিনি (হিরণ) বেশি ভোট পেয়েছিলেন। বর্তমানে সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তায় পূর্বের তুলনায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের দ্বিগুণ ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে। গত পাঁচ বছরে মেয়র কামালের কাজ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে নানাপ্রশ্ন রয়েছে। এমনকী তার দল বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও মেয়র কামালের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর যুবদলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, মেয়র কামাল পাঁচ বছর পদে থাকাকালে দলের কাজে অংশগ্রহণ করেননি। কোন কর্মসূচীতেই তাকে পাওয়া যায়নি। এই সময়ে তিনি নিজের আর নিজ পুত্রের জন্য কাজ করেছেন। দলের জন্য তার ত্যাগ শূন্য। আলোচিত প্রার্থী বিলকিস জাহান শিরিন সম্পর্কে জানতে চাইলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন, তিনি সব সময় ঢাকায় থাকলেও বিএনপির একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে কোন সন্দেহ নেই। মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বলেন, সব কিছুই এখন নির্ভর করছে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের ওপর। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তার কাছে নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে হলে বিএনপির একজন শক্ত প্রার্থী দরকার।
×