ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান ॥ ক্লাস নেন দফতরি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৫ মে ২০১৮

মাদারীপুরে পরিত্যক্ত ভবনে  পাঠদান ॥ ক্লাস নেন দফতরি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন দীর্ঘদিন আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনের অভাবে কোমলমতি দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পরিত্যক্ত ওই ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ক্লাস করতে গিয়ে আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠে মনোযোগী হতে পারছে না। শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন। প্রায় দুই বছর বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ক্লাস করার পর শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটেছে একটি চার কক্ষের টিনশেড। তাও আবার শিক্ষার্থী সংকুলানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি শিক্ষকের অভাবে স্কুলের দফতরি দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ১৯৪২ সালে সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পর ১৯৯৮ সালে ৪ কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে নতুন ভবন নির্মাণের মাত্র ১৬ বছরের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয় ভবনের ফাটল বেশি হওয়ায় পলেস্তরা খসে পড়তে শুরু করে। ফলে গত ৪ বছর ধরে ভবনের তিনটি কক্ষ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাকি একটি কক্ষ এখন ঝুঁকি নিয়ে লাইব্রেরি হিসেবে কোন মতে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষা অফিস থেকে মৌখিকভাবে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর পর প্রায় দুই বছর বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ক্লাস পাঠদান করার পর এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে স্কুলের মাঠের পাশে একটি টিনশেড তৈরি করে দিয়েছে। টিনশেডে ক্লাস করতে বর্ষা ও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছয় মাস আগে নতুন ভবনের তালিকা হলেও এখনও তার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একটু বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসরুমগুলো ভিজে যায়। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবক তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। সমাপনীতে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানটি ভবনের কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় দফতরি দিয়ে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়াও রয়েছে আরও নানা সমস্যা, বৃষ্টি হলেই টিনশেডের কক্ষে পানি ঢুকে যায়, ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শ্রেণীকক্ষ কম, টেবিল বেঞ্চের সঙ্কট, গরমে শিক্ষকরা হাত পাখা নিয়ে শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করছে, রয়েছে শিক্ষক সঙ্কট। বিদ্যালয়ে প্রায় ২শত ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছে ৪ জন। তার মধ্যে দুইজন শিক্ষক আছে পিটিআই ট্রেনিংয়ে, একজন রয়েছে ছুটিতে, মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৫ম শ্রেণীর ফারহানা আক্তার ও জান্নাতুল আক্তার বলে, ‘ক্লাস করতে খুব ভয় করে। কিন্তু লেখাপড়া শেখার জন্য ভয় নিয়েও ক্লাস করছি। দুই বছর মাঠে ক্লাস করেছি। এখনও আমাদের কোন নতুন ভবন হয় নাই।’ ৪র্থ শ্রেণীর হালিমা, তানহা, জান্নাত বলে, ‘আমাদের চেয়ার নাই, টেবিল নাই, আমরা নিচে বসে ক্লাস করি। এই গরমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ক্লাসে কোন ফ্যান নাই। আমরা নতুন একটি ভবন চাই। ছাদের পলেস্তরা খসে গায়ের ওপর পড়ে। আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছি। আমাদের সঠিক পড়াশোনা করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারহানা ইয়াসীন জানান, ‘গত দুই বছর আমরা মাঠে ক্লাস নিয়েছি। শিক্ষকদের বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের ও লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করছি। এর আগে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিয়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাকিল আহম্মেদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা আমি জানি। গত ৬ মাস আগে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকাবাসী ও কমিটির উদ্যোগে একটি টিনশেড করে দেয়া হয়েছে। সেখানেই ক্লাস করা হচ্ছে। তবে আমি চেষ্টা করবো যত তাড়াতাড়ি কিছু একটা করার।’ মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের ফলাফল অত্যন্ত ভাল। বিদ্যালয়ে নতুন কোন ভবন নেই, আমরা চেষ্টা করব বিদ্যালয়টির নতুন একটি ভবন করে দেয়ার।’
×