ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কালকিনিতে অনিতা সরকারের পাঠশালা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৫ মে ২০১৮

কালকিনিতে অনিতা সরকারের পাঠশালা

কে, কে যাবি তাড়াতাড়ি আয়, অনিতা সরকারের পাঠশালায়। এভাবে সকাল হলেই প্রত্যন্ত গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বুকে বই জড়িয়ে অনিতা সরকারের পাঠশালায় ছুটে আসে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে লেখাপড়া করতে। অনিতা সরকার দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে গ্রামে-গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাছের নিচে পাঠশালা তৈরি করে বিন্যমূল্যে পড়ালেখা শিখাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রামের মাঠেঘাটে বা খোলা আকাশের নিচে তিনি এ পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় আলোয় আলোকিত হয়েছেন। অনিতা সরকার কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম এলাকার বেতগ্রামের অশোক সরকারের স্ত্রী। অনিতা রানী পেশায় একজন গৃহিণী কিন্তু তিনি শিক্ষক না হয়েও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বিত্তবান নয়, জন্ম নিয়েছেন গ্রামের একটি কুড়ের ঘড়ে। তার ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি বেছে নিয়েছেন শিক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে গ্রামে গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার মূল কাজ। শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মানুষের মতো মানুষ করে তোলাই তার মূল লাখ। তার মাধ্যমে হাত খড়ি নিয়েছে বেতবাড়ি গ্রামের অনেকেই। বিগত দিনে তার কাছে সবক নেয়া অনেকেই আজ বড় চাকরিজীবী হয়েছেন। কিন্তু তার ভাগ্যে জটেনি কোন চাকরি। অনিতা সরকার ছোট বেলা থেকেই ছিলেন অনেক মেধাবী। অভাব অনটনের সঙ্গে লড়াই করে তিনি পড়ালোখায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। তার স্বামী অশোক সরকার পেশায় একজন দীনমজুর। অনিতা সরকার প্রত্যেকদিন সকালে তার সাংসারিক কাজকর্ম সেরে বেতবাড়ি গ্রামের একটি গাছ বাগানে নিয়মিত ২০ থেকে ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে পড়াতে বসে যান। পাঠদান শেষে দুপুরে সবাইকে ছুটি দিয়ে আবার সাংসারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার বিকাল হলেই শুরু হয়ে যায় তার পাঠশালার পড়ালেখা। এভাবেই তিনি বিনাস্বার্থে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামের অবহেলিত শিশুদের মাঝে। অনিতা সরকারের পাঠশালায় আশা শিশু শিক্ষার্থী প্রিয়া সরকার, রাজু ঢালী ও রহিম জানায়, আমাদের শিক্ষকের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত লেখাপড়া শিখছি। তিনি আমাদের কাছ থেকে কোন টাকা-পয়সা নেন না। এ ব্যাপারে অনিতা সরকার বলেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকব ততদিন এভাবেই বিনা স্বার্থে গ্রামের অবহেলিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেব। গ্রামের শিশুরা যতই শিক্ষিত হবে তাতেই আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করব। -মোঃ জাফরুল হাসান কালকিনি (মাদারীপুর) থেকে
×