ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ জননী জ্যোতি রানীর ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৫ মে ২০১৮

শহীদ জননী জ্যোতি রানীর ভাগ্যে জোটেনি  বয়স্ক ভাতা

একাত্তরে শেরপুর অঞ্চলের ভয়াল স্মৃতি হয়ে থাকা জায়গাগুলোর অন্যতম নাম ‘জগৎপুর’; এক ইতিহাস ‘জগৎপুর গণহত্যা’। একাত্তরের ৩০ এপ্রিল ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী জগৎপুরে অতর্কিতে হামলে পড়ে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। তাদের নির্বিচারে চালানো গুলিতে সেদিন শহীদ হন ৩৫ গ্রামবাসীসহ ওই গ্রামে আশ্রয় নেয়া শতাধিক নিরীহ মানুষ। একই সঙ্গে আহত হয় আরও অর্ধশতাধিক মানুষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় জগৎপুর গ্রাম। এতে ২শ’রও বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে যায়। জগৎপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সেই হামলার দগদগে স্মৃতি বয়ে বেড়ানো এক শহীদের জননী জ্যোতি রানী দে (১০০)। ’৭১ সালের ৩০ এপ্রিল সকালে ভাত রেঁধে পাটশাক ভাজছিলেন গৃহিণী জ্যোতি রানী দে। এরই মাঝে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জ্যেষ্ঠপুত্র ভজন চন্দ্র দে (১৪) বাড়ির বাইরের আঙিনা থেকে দৌড়ে গিয়ে মাকে জানায় গুলি চালাতে চালাতে পাক সেনাদের এগিয়ে আসার কথা। অবস্থা দেখে বাড়িতে ছুটে আসেন গৃহকর্তা তরুণী কান্তি দে’ও। কিন্তু ততক্ষণে রক্ষা নেই। ভজনের ছোটাছুটিতে চটে যায় পাক সেনাদের কয়েকজন। পিতা তরুণী ও মাতা জ্যোতির আকুতি-মিনতি কেবল উপেক্ষা করেই নয়, তরুণীকে লাথিতে ও জ্যোতিকে রাইফেলের বাঁটে আঘাত করে তাদের সামনেই ভজনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তারা। অন্যদের মতো ভজনেরও ঠাঁই হয় গণকবরে। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে কোলের শিশুপুত্র শংকর চন্দ্র দে’কে নিয়ে অন্যদের মতো এলাকা ছাড়ে তারাও। স্ব^াধীনতার ৪৭ বছর পরও সেই জগৎপুরে আজও যেমন নির্মিত হয়নি শহীদদের কোন স্মৃতিফলক এবং পদক্ষেপ নেয়া হয়নি শহীদদের গণকবর সংরক্ষণের; ঠিক তেমনি এখনও সঠিক তালিকা হয়নি সেখানকার শহীদদের। ফলে মেলেনি শহীদদের স্বীকৃতিও। ‘শেখের বেটি শেখ হাসিনা’ ক্ষমতায় থাকায় ওইসবের বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন শতবর্ষী শহীদ জননী জ্যোতি রাণী দে। তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হলেও ‘জগৎপুর গণহত্যা’য় শহীদদের স্মরণে মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়া শহীদ জননী জ্যোতি রানীর দিনমানের অবস্থা একেবারেই নাজুক। ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনমতে খাওন-দাওন জুটলেও চলাফেরাই তার দারুণ কষ্ট। কারণ সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই দাঁড়ানো ও হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা সহযোগিতা করলেও অধিকাংশ সময় তাকে এক হাতে সহায়ক লাঠি, অন্যহাতে ক্র্যাচ নিয়েই ঘর-বাহির, বাহির-ঘর হতে হয়। শতবর্ষী জ্যোতি রানীর জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে বার বার জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা হয়নি। একই কথা জানান জ্যোতি রানীকে দেখতে যাওয়া বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে তিনি নিজেও একাধিক দফায় অনুরোধ করেছেন শহীদ জননী অশীতিপর জ্যোতি রানীর জন্য কিছু করতে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ধানশাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, জ্যোতি রানীকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ তিনি তা পেতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই তিনি তা পেয়ে যাবেন। কিন্তু অভিজ্ঞজনদের প্রশ্ন, সেই ‘অনুমোদন পাওয়া’র সময়টা পর্যন্ত জ্যোতি রানী আদৌ টিকবেন তো? -রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর থেকে
×