ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ॥ ৭০ বছরের অপ্রতিরোধ্য অভিযাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৫ মে ২০১৮

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ॥ ৭০ বছরের অপ্রতিরোধ্য অভিযাত্রা

তারুণ্যই পারে মানুষের লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বজয় করতে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেই তারুণ্যেরই প্রতীক। সত্য সুন্দরের অভিযাত্রী। অপ্রতিরোধ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস।’ এ ইতিহাস রচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে, ৭০ বছর লড়াই করে। অকুতোভয় আত্মবলিদানের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ আজ এক বিশাল সংগঠন। বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিস্তৃত। বিরাট কর্মযজ্ঞ। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করার পর বঙ্গবন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি প্রথম পর্বে ভর্তি হন। ঢাকায় ফিরে আসার প্রধান কারণ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস করতেন নেতাজী-শেরে বাংলাদের সাইডলাইনে পাঠিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওহরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনরা যেভাবে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান নামক যে অবাস্তব রাষ্ট্র বানিয়ে দিল তা বাঙালীর জন্য নয়। ১২০০ মাইলের ব্যবধানে দুই ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতির দুই দেশ, এক অবাস্তব রাষ্ট্র। এটি টিকে থাকতে পারে না। তিনি তাঁর বন্ধুদেরও বলেছিলেন, যে পাকিস্তানের জন্ম হলো তা আমাদের জন্য নয়, আমাদের আবার লড়াই করে আপন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। তারুণ্যের শক্তি অজেয় অপ্রতিরোধ্য। তাদের পিছুটান নেই। বঙ্গবন্ধু নিজেও তখন তরুণ। কাজেই তরুণদের সংগঠন দরকার। তিনি তরুণদের সংগঠিত করতে থাকলেন এবং ঢাকায় ফিরে আসার ছয় মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে অবশ্য মুসলিম শব্দটি ছিল। পরে তা বাদ দেয়া হয়। সকল জাতি ধর্ম তথা সর্ব বর্ণবাদবিহীন তরুণদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেক্যুলার সংগঠনে রূপ দেন। এর আগে প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাস পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। কারণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এ কারণে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুচলেকা এবং ১৫ টাকা জরিমানা দিলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে এবং ছাত্রত্ব বজায় থাকবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভিন্ন রকম মাটি দিয়ে গড়া ছিলেন। মুচলেকা-জরিমানা দূরের কথা, নিজের রাজনীতি, লক্ষ্য, আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি জীবনে। ফলে তাঁকে জেলে নেয়া হলো এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলো। তারপরও ফিরে তাকাননি কারোর দিকে। এগিয়ে গেছেন আপন শক্তিতে সংগঠনের নেতৃত্বে। বস্তুত এই ছাত্রলীগের সবকিছুতেই ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর আওয়ামী লীগের মতো ছাত্রলীগের হালও ধরেন কন্যা ‘স্টার অব দ্য ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনা। সামনে ছাত্রলীগের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এই দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা সমধিক গুরুত্ব বহন করে। নতুন নেতৃত্ব আসবে এবং তারা ছাত্রলীগকে তার অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী সাজাবে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা যখন হয়, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, সে সময়টা দেশ বিভাগের মাত্র ৬ মাস পর। বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল তখন ২৮ বছর এবং তিনিই হতে পারতেন এর সভাপতি। কিন্তু না, তিনি হননি। তিনি প্রথম আহ্বায়ক নির্বাচিত করেন নাঈমুদ্দিন আহমদকে, এরপর যখন ছাত্রলীগ রাজপথে কার্যক্রম শুরু করে তখন সভাপতি মনোনীত করা হয় দবিরুল ইসলামকে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় খালেক নেওয়াজ খানকে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের এ্যাসেম্বলিতে তখনকার একঝাঁক সাহসী তরুণ নিয়ে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করা হয়। অল্পদিনেই তারা উপলব্ধি করেন যে, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হলেও এর কাঠামোর মধ্যে বাঙালী জাতির অবস্থান অসম্ভব। আর তখন ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামকরণ করা হলো। এর আরেকটা লক্ষ্য হলো ছাত্রলীগ প্রথম দিন থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে কোন বিশেষ ধর্মের পরিচয় থাকতে পারবে না। তাছাড়া মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, পাহাড়ী, আদিবাসীসহ সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা হবে ছাত্রলীগ। হলোও তাই। প্রতিষ্ঠার পরই নামতে হলো বাঙালীর প্রাণের ভাষা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্রলীগ গঠন শেষে তিনি এরপর গঠন করলেন আওয়ামী লীগ, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। গঠন প্রক্রিয়ায় প্রথম বৈঠক হয় খান সাহেব ওসমান আলীর নারায়ণগঞ্জের বাসভবনে। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতারা একত্রিত হন এবং তারা উপলব্ধি করেন যে, যেহেতু দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলো সেহেতু বাঙালী জাতি হিসেবে স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে এমনটি আশা করা যায় না। অতএব দেশপ্রেমিক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সংগঠন দরকার। এরই কিছুকাল পর ঢাকার রোজ গার্ডেনে আরও বেশি জাতীয়তাবাদী নেতার সমাবেশ ঘটে এবং এখানেই ব্যাপাক আলোচনার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর প্রথম সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু হন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এভাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দুটি সংগঠন বড় ভাই (আওয়ামী লীগ), ছোট ভাই (ছাত্রলীগ) হিসেবে বাঙালী জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আন্দোলন শুরু করে। অবশ্য ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনের মাধ্যমে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন। এই গেল প্রথম অধ্যায়। দ্বিতীয় অধ্যায় হলো ছাত্রলীগ মুসলিম শব্দ ঝেড়ে ফেলে স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে প্রথমে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলন ও পরে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে। এই ৭০ বছরের পথপরিক্রমায় ছাত্রলীগ অনেক নেতার জন্ম দিয়েছে। আবার অনেক নেতা বিভ্রান্ত হয়ে অথবা লোভে পড়ে ছাত্রলীগ ত্যাগ করেছে। যারা সোনার হরিণ ধরার জন্য ছাত্রলীগ ত্যাগ করেছে তারা কালো বিড়ালও ধরতে পারেনি। নাম বলতে চাই না, তাদের কেউ কেউ অন্য দলে গিয়ে আজও পেছন পেছন তল্পিবাহকের দায়িত্ব পালন করছে। ছাত্রলীগের সবচেয়ে গৌরবের দিন ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। এছাড়া রয়েছে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট আন্দোলন, ’৫৮-এর আইয়ুবের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ‘৭১-এর মার্চ মাসের দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলন। একটি সংগঠন বড় হয়, শক্তিশালী হয় আন্দোলনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ তো বটেই, এই উপমহাদেশেও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ বা বাংলাদেশ ছাত্রলীগই একমাত্র সংগঠন যে আন্দোলন করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে আজ এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রকাশ্য রাজনীতির সঙ্গে গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন দেশ স্বাধীন করতে এ ধরনের সংগঠনও লাগবে। এই সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদকে। পরে আরও অনেকে এতে যোগ দেন। এই সংগঠনই ’৭১-এর যুদ্ধে বিএলএফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করে দেশাভ্যন্তরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে। আজকে যদি তাকাই দেখি ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিনা আজ কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, এই অঞ্চল তথা বিশ্বের অন্যতম সাহসী, সফল, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা, যিনি একাধারে চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ, মাদার অব হিউম্যানিটি, স্টার অব দ্য ইস্ট, বিশ্বের ১০০ জন শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতার মধ্যে ২৩তম, ৫ জন সৎ রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ৩য়, এমনি অসংখ্য খেতাব ও পুরস্কার এনে আমাদের জাতিকে সম্মানিত করেছেন। তারপরও তাঁর বর্তমান কেবিনেটের দিকে তাকালে দেখা যায় আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুজিবুল হক, প্রমুখ সংসদের চেয়ারে আছে। সর্বোপরি যার নাম করতে হয় তিনি ওবায়দুল কাদেরÑ একাধারে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী এবং সর্বোপরি দলের শক্তিধর সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাবলী তিনি যেমন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন, তেমনি রাজপথে হেঁটে-লঞ্চে করে নদীতে ঘুরে কাজ দেখছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ পর্যন্ত যত স্বৈরাচার স্বাধীনতার পূর্বাপর এসেছে সব ক’টির পতন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের আন্দোলনে। এক্ষেত্রেও সবচে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। সেই স্বৈরাচার আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া (যদিও সেনা অভ্যুত্থানে নিহত তবুও ততদিনে জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছিল); এরশাদ, খালেদা সবার পতন হয়েছিল প্রধানত ছাত্রলীগের আন্দোলনে। একাত্তর সালে তো অগণিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী পাকিস্তানী হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। শহীদ হয়েছে। তবু হার মানেনি, বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্নসাধ আপন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। আগামী ১১ ও ১২ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। সভাটি অবশ্যই জাঁকজমক হবে। প্রত্যেকবারই আগের রেকর্ড ভেঙ্গে ছাত্র সমাবেশ ঘটে। এবারও ঘটবে সন্দেহ নেই। ছাত্রলীগের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি কি বলবেন জানি না, তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের এককালের সভাপতি এবং ওকে কমিশনের চেয়ারম্যান (কমিশনে আমি সদস্য ছিলাম) এবং পরিশ্রমী ও সফল মন্ত্রী যা বলার এরই মধ্যেই বলে দিয়েছেন : কোন সিন্ডিকেট দ্বারা ছাত্রলীগ চলবে না। কারও পকেটের কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব হবে না। ছাত্রলীগ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। এর বাইরে কোন ভাবনা-চিন্তা করার অবকাশ নেই। ছাত্রলীগকে রাজনৈতিক আদর্শের মহাসড়কে আসতে হবে। সুনামের ধারায় ফিরে আসতে হবে। ছাত্রলীগকে অতীতের ধারায় ফিরে আসতে হবে। ছাত্রলীগে যেন আর কোন অনুপ্রবেশকারী ঢুকতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, টাকা-পয়সার কর্মীরা থাকবে না, আদর্শের কর্মীরা থাকবে। জবরদস্তি করে অযোগ্যকে নেতা বানাবেন, দু:সময় এলে হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না তাকে। সাহসী, মেধাবী ও চরিত্রবান নেতা বানান সর্বস্তরে। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারী পরগাছা যেন পার্টির নেতৃত্বে আর না আসতে পারে। পরগাছাদের জন্য ছাত্রলীগ কোন সুযোগ দেবে না। মাননীয় মন্ত্রী বাজারে জোর গুজব আছে গত এক দশকে ছাত্রলীগে শিবিরের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কেউ অর্থে বা কেউ শক্তি বৃদ্ধিতে। অস্বীকার করব না বিগত কোটাবিরোধী আন্দোলনে তার আলামত লক্ষণীয়। যে ছেলেটি আমি রাজাকার লিখে দাঁড়িয়েছে বা যারা বুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ভিসির বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের কি চিহ্নিত করা যায় না? ওবায়দুল কাদের বলেছেন: ছাত্রলীগে কোন পকেট কমিটি হবে না- ও want devoted and qualified leadership. It will run as per Bangabandus idealogy and Sheikh Hasinas instruction. মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনার ওই কথাগুলো আমরা সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। কিন্তু বেশ কিছুকাল ধরে আমরা এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করছি। আপনি কি জানেন, চাঁদপুর জেলায় ফরিদগঞ্জ বলে একটা থানা আছে এবং এক থানা এক কনস্টিটুয়েন্সি। সেখানে ২০০৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সবই পকেট কমিটি। কোন নির্বাচিত কমিটি নেই। ২০১০ সালে স্বাভাবিকভাবে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের একটি নির্বাচিত কমিটি হয়। অল্প ক’দিনেই জেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সভাপতির কোপানলে তা পড়ে। কারণ কোন অসৎ দুর্নীতিপরায়ণ লোককে তারা সমর্থন করেনি। ২০১২ সালে তাদের কমিটি অকার্যকর করে দেয় এবং ২০১৪ সালে পুরোপুরি ভেঙ্গে অছাত্র, মাদকাসক্তদের দিয়ে কমিটি করা হয়। আমি তখনকার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রেসক্লাবে ডেকে অনুরোধ করেছিলাম একটা সাধারণ সভা ও নির্বাচন দিয়ে ওদের সম্মানজনক বিদায় দিতে। নেতৃদ্বয় আমাকে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল কয়েকদিন পর না কাউন্সিল, না নির্বাচন; বরং অশিক্ষিত অছাত্র দিয়ে কমিটি ঘোষণা করে দিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক- এটা কোন্ পকেট? ঢাকা ॥ ৩ মে ২০১৮ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×