ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত হোক তদন্ত

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৫ মে ২০১৮

দ্রুত হোক তদন্ত

শর্ষের মধ্যে যদি থাকে ভূত, তবে সে ভূত তাড়ানো সহজসাধ্য যেমন নয়, তেমনি তাড়াবার মানুষও মেলে না। ভূতের আতঙ্কে যদি হয়ে পড়ে ধরাশায়ী, তবে তাকে করবে রক্ষা কে? প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকারা ভূতের আছর নামাতে হয় যদি সচেষ্ট, তবে বিপত্তি বাড়ে তাতে। বিদেশী বাংলাদেশের হাইকমিশনে নষ্টভ্রষ্টদের অবস্থান সুসংহত হলে নষ্টামো ও ভ্রষ্টানোর মাত্রা বাড়েই। এমনই অদ্ভূত আঁধার নেমে এসেছিল লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। স্বদেশে যারা শক্তিমত্তা প্রদর্শনে অসফল, বিদেশে সেই তারা ধ্বংসের গর্জন হানতে থাকে সচেষ্ট। এমনই ঘটনার নিদর্শন রেখেছে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন। দূতাবাসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বহিরাগত প্রবাসীরা যেসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তা দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী যেমন এবং ক্ষমারও অযোগ্য। ন্যক্কারজনক ও সহিংস কার্যক্রম চালাতেও এই দুর্বৃত্তরা কসুর করেনি। এমনকি হাইকমিশনের কর্মচারীকে শারীরিকভাবে আক্রমণও করেছে বিনা কারণেই। এই দুর্বৃত্তরা হাইকমিশনের মধ্যে অনায়াসে প্রবেশ করে হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে এনে তা অবমাননা করার মতো স্পর্ধা ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে প্রমাণ করেছে, লন্ডনে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও তৎপর। দুর্নীতির দায়ে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া ও তার দুর্নীতিবাজ ‘পলাতক’ পুত্রের সাজা ঘোষণার পর লন্ডনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নামধারী দুর্বৃত্তরা অপকর্মে নামে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারা হাইকমিশনে রায়ের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী ঘোষণা করে। এরা হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ শেষে স্মারকলিপি হস্তান্তরের নামে জোরপূর্বক দূতাবাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দূতাবাসের কর্মচারীদের আক্রমণ ও সম্পত্তি ধ্বংস করে। একই সঙ্গে হাইকমিশনে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অবমাননা করে। ঘটনার পর লন্ডন পুলিশ হাইকমিশনকে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তরের পাশাপাশি একজনকে গ্রেফতার করে। ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়টি ছিল আক্রমণের অজুহাত মাত্র। বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতেই কোন কারণ ছাড়া বিক্ষোভের শীর্ষ নেতৃত্বসহ কতিপয় বিক্ষোভকারী দুর্বৃত্ত হাইকমিশনের কর্মচারীকে মারধর করে। ঘটনার সময় হাইকমিশনার অন্যদেশে অবস্থান করছিলেন। দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার। যিনি গত চার বছর ধরে সেখানে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক তারেক রহমানের নিকটাত্মীয়। ঘটনার দিন হাইকমিশনের যে কক্ষে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে তা বন্ধ থাকার নিয়ম থাকলেও সেদিন খুলে দেয়া হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তারা বিনা বাধায় কক্ষে প্রবেশ করে এবং ভাংচুর চালায়। ডেপুটি হাইকমিশনার নির্লিপ্ত ছিলেন নিশ্চয়, নতুবা এই অনধিকার চর্চার সুযোগ আসে কীভাবে। এই কর্মকর্তা কীভাবে নিয়োগ পেলেন, অনুসন্ধান করা হলে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার ঘটনা হয়ত মিলবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়োগের সুপারিশকালে তার অতীত কর্মকা- এবং দুর্বৃত্তদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে কিনা, তা অস্পষ্ট। ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে হাইকমিশন সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করে আসছিল। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণেও ছিল না আগ্রহী। গত ২২ এপ্রিল কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সামনে আনেন এবং এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর ডেপুটি হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ প্রদান করা হয়। ঘটনাটি তদন্তের জন্য নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ২ মে থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ডেপুটি হাইকমিশনার কেন যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেননি সে প্রশ্ন থেকে যায়। বিদেশে হাইকমিশনে হামলা ও ভাংচুর হলো অথচ কর্মকর্তারা নির্বিকার থেকে গেলেন, কেন, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। লন্ডনের মতো স্থানে হাইকমিশনের কাজকর্মে দুর্বলতা এমনভাবে প্রকটিত তা অস্পষ্ট। সেখানে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার দ-প্রাপ্ত দুই আসামি। দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান অবস্থান করে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হাইকমিশন সে ব্যাপারে ন্যূনতম পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শোনা যায় না। সম্ভবত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের দেশ, জাতি ও সরকারবিরোধী অবস্থানের কারণে। শুধু লন্ডন নয়, অন্যান্য দেশেও এমন কর্মকর্তাদের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব কিছু নয়। অবিলম্বে তদন্ত করে মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে বাস্তবিক পদক্ষেপ।
×