উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে রোল মডেল। উন্নয়নশীল দেশের সীমানাকে স্পর্শ করাই শুধু নয় সমতাভিত্তিক অগ্রগতিতেও দেশের অবস্থান সুদৃঢ় এবং মজবুত হয়েছে। অর্ধাংশ এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কতখানি দ্রুততার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে সম্পৃক্ত করতে পারলে লিঙ্গবৈষম্যকে পাশ কাটানো সম্ভব হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। লিঙ্গ সমতা অর্জনই শুধু নয় এগিয়ে যাওয়ার নির্ধারিত মাপকাঠিতেও দেশ এখন অনন্য ভূমিকায়। দেশের সফলতা, বিপর্যয়, সহিংসতা কিংবা নির্যাতনকে একীভূত করলে বোধকরি পাওয়ার পাল্লাটাই ভারি। দুর্যোগের দায়ভাগ যেমন সরকারকে নিতে হয় একইভাবে সফলতার কৃতিত্বও সংশ্লিষ্ট প্রধানের ওপরই বর্তায়। আর তাই বাংলাদেশ আজ যেভাবে তার অর্জন নিয়ে বিশ্ব পরিসরে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপই নিয়ামক শক্তির ভূমিকায় অনবদ্য অবদান রেখেছে। যা দেশের সীমাবদ্ধ বলয়কে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্তৃত্ব বিস্তারে প্রধানমন্ত্রী অসামান্য দক্ষতায় বিশ্বের গবেষণা জরিপেও তার মর্যাদাকে আরও জোরালোভাবে স্পষ্ট করলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’-এর বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্ব শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিমন্ত্রিত হয়ে সেখানে গেলে তাকে এই বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয়। ম্যালবাম টার্নবুলের আমন্ত্রণে যোগ দিতে শেখ হাসিনা এই মহতী আয়োজনের আতিথ্য গ্রহণ করেন। শুক্রবার ২৭ এপ্রিল এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নারী নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ‘গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করা হয় শেখ হাসিনাকে। আজীবন সম্মাননা সূচক এই পুরস্কার তাকে দেয়া হয় মূলত অভাবনীয় নারী জাগরণ, নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে। নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে জোরালো অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এই বিরল সম্মানটি অর্জন করলেন। ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’-এর সভাপতি আইরিন নাতিভিদাদের হাত থেকে শেখ হাসিনা পুরস্কারটি গ্রহণ করে নিজেকে ভীষণ সম্মানিত বোধ করছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। শুধু তাই নয়, যাদের কারণে তিনি এই দুর্লভ পুরস্কার পেলেন বিশ্বের সেই অগণিত নারীর উদ্দেশ্যে সম্মাননাটি উৎসর্গও করলেন। জোটবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই শুধু নয় নিজেদের যথার্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ ধরনের অভাবনীয় সাফল্য প্রধানমন্ত্রীর জীবনে এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম নারী-পুরুষের সমতা বিবেচনায় যে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৭তমই শুধু নয় দক্ষিণ এশিয়াতে একেবারে সর্বোচ্চ আসনে। আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে আমরা। তা ছাড়া বাংলাদেশের ওপর মিয়ানমার সরকারের চাপানো রোহিঙ্গা মঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম তাঁকে ‘মানবতার জননী’ উপাধিতেও অলঙ্কৃত করে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রায় দেড় হাজার বিশ্ব নারী নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করে আয়োজনটির মূল সারবত্তা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেন। বর্তমান বিশ্বে নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন কোন আনুষ্ঠানিক বিষয় নয় তার চেয়েও বেশি অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এই গোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবনপ্রবাহে উন্নয়নের সিংহভাগ সূচকে তাদের সম্পৃক্ত করে সময়ের দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেয়াও, যা এখনও নিত্য লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আরও বেগবান করা অত্যন্ত জরুরী। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী অগ্রগতিতে ৪টি মূল পথরেখা নির্দেশ করে সম্মেলনে আমন্ত্রিত নারী নেতৃত্বদের জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা কর্তৃক নির্ধারিত ৪টি বিষয়কে অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
১. নারীর সক্ষমতা নিয়ে প্রচলিত ধারণা ও মূল্যবোধকে ছিন্ন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
২. প্রান্তিক অবস্থানে ঝুঁকির মধ্যে থাকা যারা যথার্থভাবে হতদরিদ্র, অবহেলিত এবং অত্যাচারিত তাদের উন্নয়নের গতিময়তায় সম্পৃক্ত করা। যাতে শুধু পিছিয়ে পড়াই নয় সহিংসতার শিকার অসহায় নারীরাও নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে স্বাবলম্বী হতে পারে।
৩. উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নারীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় উৎসাহী ও উদ্যোগী করে তোলা তাদের স্বার্থেই বাঞ্ছনীয়। কারণ বঞ্চিত নারীরা জানতেও পারে না স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। নিজেদেরই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে।
৪. জীবন ও জীবিকার প্রতিটি সূচকে নারী-পুরুষে ভেদাভেদের কোন সুযোগ থাকা চলবে না। দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে মেয়ে হিসেবে কোন পিছুটান থাকা তাকে অনেকখানি পিছিয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয় সংস্কারবদ্ধ সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিধিনিষেধের আবর্তে পড়া নারীদের সেই শৃঙ্খলিত বলয় ভেদ করে বেরিয়ে আসতে না পারলে অধিকার এবং ক্ষমতা অর্জন একেবারে অসম্ভব। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে সবাই যারা সংখ্যায় প্রায়ই অর্ধেক নিজেকে রক্ষা করার তাগিদে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। বিশ্ববরেণ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নই শুধু নয়, শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা ও ক্ষমতাবলে প্রাপ্য সম্মানটুকু অর্জন করতে সফল হয়েছেন। সবার পক্ষ থেকে তার জন্য অশেষ শ্রদ্ধা, অভিনন্দন এবং স্বাগতম।
শীর্ষ সংবাদ: