ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুখের বাতাসে রোগ নির্ণয়!

প্রকাশিত: ০৭:২০, ৪ মে ২০১৮

মুখের বাতাসে রোগ নির্ণয়!

রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রায়ই রক্ত, মলমূত্রসহ অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস, অর্থাৎ মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ শনাক্ত করতে পারলে কেমন হয়? এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মুখের বাতাস থেকে রোগ নির্ণয় করতে চান সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের দুই গবেষক। পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা কয়েক’শ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাসে কোন্ রোগের কোন্ অণু রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন। এই পরীক্ষা সফল হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সেটা হবে এক বিপ্লবের শামিল। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মালকল্ম কোলার বলেন, ‘ভেবে দেখুন, আপনি রোগী হিসেবে হাসপাতালে এলেন। যন্ত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ছেড়ে দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি আপনার জানালাম, আপনার অমুক রোগ হয়েছে। রক্ত বা মূত্র পরীক্ষা ছাড়াই এটা করা যাবে। আমাদের খুব সুবিধা হয় এবং রোগীদের জন্য তা অনেক কম কষ্টকর হয়।’ জার্মানির হাসপাতালে এমন যন্ত্রের প্রাথমিক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে চূড়ান্ত রোগ নির্ণয় করতে আরও অনেক সময় লাগবে। আপাতত এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মার্ক মাউরার বলেন, ‘এই সেই যন্ত্র যার প্রয়োগ আমরা আগে দেখেছি। এটির সাহায্যে আমরা ব্রংকাইটিসে সংক্রমণের মাত্রা পরিমাপ করতে পারি। সেই ফলাফল দেখে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, যে এবার কোন দিকে আরও অনুসন্ধান চালানো উচিত। সমস্যা হলো, সহজে রোগ নির্ণয় করা যায় না। আরও পরীক্ষা চালিয়ে সমস্যার উৎস বোঝার চেষ্টা করতে হয়।’ জুরিখ শহরের গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে চান। তবে তাঁরা সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছেন বলে আশা করছেন। তাঁদের হাই-ডেফিনেশন মাস স্পেকট্রোমিটার অতি সূক্ষ্মভাবে মুখের বাতাসের মধ্যে সব পদার্থ চিহ্নিত করতে পারে। এভাবে চিকিৎসার কাজে হাইটেক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে। রসায়নবিদ রেনাটো সেনোবি বলেন, ‘যন্ত্র অণুর ওজন মাপে। বিশেষ করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে অণু বেরিয়ে আসে, সে ক্ষেত্রে এই পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার ওজন মাপতে পারি। এমনকি সেই বাতাসে কয়েক’শ থেকে কয়েক হাজার পদার্থ শনাক্ত করতে পারি।’ এই পদার্থগুলোর সম্মিলিত প্যাটার্ন বা নকশা অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে। গবেষকরা এমন একটি রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। সিøপ-এ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোম নামের এই রোগ এতকাল শুধু ব্যয়বহুল সিøপ ল্যাবে শনাক্ত করা সম্ভব হতো। মালকল্ম কোলার বলেন, ‘একটি পত্রিকায় আমাদের কাজের দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয়েছে। সিøপ-এ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোমের এক রোগীর চিকিৎসার আগে ও পরে আমরা পরীক্ষা চালিয়েছিলাম। দেখতে পাচ্ছেন, এক্ষেত্রে পেন্টেনালের অণুর ঘনত্ব কীভাবে মুখের বাতাসে বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা থামিয়ে দিলে কী হয়, তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ মাস স্পেকট্রোমিটার দিয়ে গবেষকরা অন্যান্য রোগও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো, মুখের বাতাস থেকে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা। মালকল্ম কোলার বলেন, ‘সবাই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত করতে চায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রচেষ্টা শুরু করলে আমরা সম্ভবত ব্যর্থ হতাম। আমরা আরও সহজ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি, যা দিয়ে আমাদের ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। গবেষণা ছোট ছোট ধাপে এগোয়। তবে অবশ্যই একটা স্বপ্ন থাকতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো মুখের বাতাসে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা।’ ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলো শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অবশ্য ভাল ফল পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে গবেষকরা মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে সাফল্যের নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে চান। সূত্র : ডয়েচ ভেলে
×