ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

থাইল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ মে ২০১৮

থাইল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে থাইল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এফটিএ চুক্তিতে আগ্রহী। এজন্য টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করছে। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তিনি বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় সফররত থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগ বিষয়কমন্ত্রী মি. কোবসাক পুত্রাকুলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানানো হয়। এর আগে সকালে প্রতিনিধিদলটি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে। থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগ বিষয়কমন্ত্রী মি. কোবসাক পুত্রাকুল বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুতসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করে থাইল্যান্ড মন্ত্রী এ দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশীদার হতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের ১০০টি প্রকল্পে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে থাইল্যান্ড বিনিয়োগ করলে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এ জন্য সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প নগরীতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে রফতানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত নগদ আর্থিক সহায়তার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ যে সকল পণ্য থাইল্যান্ডে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এমন আরও ৩৬টি পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা সহজ করার জন্য থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২১ সালে উভয় দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কোবসক পুত্রাকুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী থাইল্যান্ড। বিনিয়োগের বিষয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার সঙ্গে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যটন, ফাইন্যান্স, ম্যানুফেকচারিংসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ^ সেরা। আগামীতে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক ॥ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে থাইল্যান্ড সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগ বিষয়কমন্ত্রী কোবসাক পুত্রাকুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চায় থাইল্যান্ড। বাংলাদশে-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর বা বিসিআইএম অর্থনৈতিক সড়ক করিডরের সঙ্গে থাইল্যান্ডকে যুক্ত করতে পারলে দুই দেশের বাণিজ্যিক পরিধি বাড়বে। এবিষয় নিয়ে কাজ করারও আশ্বাস দেন দেশটির বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুতসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন থাইল্যান্ডের মন্ত্রী। এদেশের দ্রুত অগ্রসরমান অবকাঠামো খাতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য গভীর সমুদ্র বন্দরও স্থাপন বিশেষ জরুরী। মি. পুত্রাকুল থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ওপরও বিশেষ গুরাত্বরোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম ধাপ এই সফর। এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক দীর্ঘ হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। এই সম্পর্ক আরও শক্ত করতে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের থাইল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানান কোবসাক। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশে বিনিয়োগের এখনই সঠিক সময়। কারণ বাংলাদেশ এখন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এদেশে বিনিয়োগ অনেক লাভজনক হবে। থাইল্যান্ডের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের যৌথ বাণিজ্যিক সম্মেলনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন কৃষি, লেদার, সিরামিক, টেক্সটাইলসহ অনেক বিনিয়োগ খাত রয়েছে বাংলাদেশে। অন্যান্য দেশের চেয়ে শুল্কহার ও শুল্ক ব্যবস্থাও অনেক সহজ বলে মনে করেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি- রফতানি বাড়ছে। আগামী বছর আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা করতে এফবিসিসিআই প্রস্তুত। প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৭৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং রফতানি করেছে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থাই- বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি মিংপ্যান্ট ছায়া, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এইচইএমএস সাদিয়া মুনা তাসনিমসহ থাইল্যান্ডের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।
×