ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ মে ২০১৮

দেশের জ্বালানি  ব্যবহারে দক্ষতা  উন্নয়নের  পরামর্শ  বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এলএনজি ব্যবহারের শুরুতেই দেশের জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা গ্যাস ব্যবহারের দক্ষতা উন্নয়নের পরামর্শ দেন। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেমিনারটি আয়োজন করে জ্বালানি সাংবাদিকদের সংগঠন। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, আমাদের দেশে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই গ্যাস দিয়ে অন্তত আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। দেশের যন্ত্রাংশে জ¦ালানি ব্যবহার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, অতীতে স্কাডা সিস্টেম চালু ছিল। এতে ঘরে বসেই দেখা যেত কোথায় কোথায় গ্যাস চুরি হচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতিকে নষ্ট করা হয়েছে। এখন নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে প্রচুর গ্যাস চুরি হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এলএনজির জাহাজ ভিড়েছে বন্দরে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের ২৫ মে থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হতে পারে। কিন্তু বেশি দরে আমদানি করা এই গ্যাসের দক্ষ ব্যবহারে আমরা কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখনও আমাদের দেশে অনেক পুরাতন গ্যাসচালিত বিদ্যুত ও সার কারখানা রয়েছে। দেশের ক্যাপ্টিভ পাওয়ার (নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত শিল্প বিদ্যুত) দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেমিনারে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন পেশাদারিত্বের অভাবেই জ্বালানি বিভাগ পিছিয়ে পড়ছে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমে আমাদের বলা হলো ৩২ ইঞ্চির পাইপ লাইন বসালেই এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। পরে আবার বলা হলো আরও একটা ৪২ ইঞ্চির পাইপ লাইন বসানো প্রয়োজন। এখন আবারও বলা হচ্ছে ৫০ ইঞ্চির একটি পাইপ লাইন দরকার হবে। কেন একবারেই এলএনজি আমদানির শুরুতে তারা এটি ঠিক করতে পারল না। কেন পাইপ লাইন তিনবার বসাতে হবে। তিনি বলেন, সরকার পরিচালনা করে যারা তাদের পক্ষে বিশেষজ্ঞদের মতামত দেয়া সম্ভব না। যারা এইখাতে কাজ করে তারাই বিশেষজ্ঞ। এক্ষেত্রে তাদের পক্ষে কেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হলো না এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্যাস ক্ষেত্রে স্কাডা পদ্ধতি (গ্যাস সরবরাহ পর্যবেক্ষণে বিশেষ পদ্ধতি) চালুর কথা বলছি কিন্তু কেউ রাজি নয়। তিনি বলেন, এখানে সরকারের দুর্বলতা নেই। কিন্তু যারা এখাতে কাজ করেন তারাই চান না স্কাডা চালু হোক। তিনি বলেন, বেশি বেতনে ভাল মানের লোক নিয়ে কাজ করতে। কিন্তু বাপেক্স কোনভাবেই রাজি নয়। তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু কাজ করতে হবে তাদের। যারা এই খাতের কর্মকর্তা রয়েছেন। জ্বালানি বিভাগের চেয়ে বিদ্যুত বিভাগ অনেক এগিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যুত খাতে স্বল্প মেয়াদী প্রকল্প শেষ হয়েছে। মধ্য মেয়াদী প্রকল্পগুলোর কাজ শেষের পথে। আর বড় প্রকল্পগুলো এর মধ্যে অনেকটা কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনে এখন ৩৬ ভাগ জ্বালানি তেল ব্যবহার হচ্ছে। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ ভাগে নেমে আসবে। সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ম তামীম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মুক্তাদির আলম, জিটিসিএল এর সাবেক পরিচালক সালেক সুফি বক্তব্য রাখেন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক অরুন কর্মকার।
×