ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট গুরুত্ব পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ মে ২০১৮

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট গুরুত্ব পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকায় আসন্ন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া ওআইসির আগ্রহী দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প সফরে যাওয়ার কথা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওআইসির ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। আগামী ৫ ও ৬ মে ওআইসির ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট ঢাকা বৈঠকে বিশেষভাবে স্থান পাবে এবং এ বিষয়ে সম্মেলনকালে একটি বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা করা হবে। এছাড়া আগ্রহী দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প সফরে যাবেন। সেখানে আমি ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমও থাকবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশ আমাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ওআইসির ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট এই সংস্থার ৪০ মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রীসহ প্রায় সাড়ে ৫০০’র অধিক প্রতিনিধি আগামী ৫ ও ৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের জন্য ইসলামি মূল্যবোধ।’ তিনি বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বেশকিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায় হুমকি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম রাষ্ট্রে বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, ইসলামোফবিয়া ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিম-লে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোন সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এই সম্মেলন সামনে রেখে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়। এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তৎপর্য রয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফোরমগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাস হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে।
×