ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা জোরদার করতে হবে ॥ স্পীকার

বৈশ্বিক ক্ষুধা বৃদ্ধি পেয়েছে ॥ গ্লোবাল ফুড পলিসি রিপোর্ট ২০১৮ প্রতিবেদন প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৪ মে ২০১৮

বৈশ্বিক ক্ষুধা বৃদ্ধি পেয়েছে ॥ গ্লোবাল ফুড পলিসি রিপোর্ট ২০১৮ প্রতিবেদন প্রকাশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরদার হলেও সংঘাত, দুর্ভিক্ষ এবং উদ্বাস্তু সঙ্কট অব্যাহত থাকার ফলে বৈশ্বিক ক্ষুধা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, বৈশ্বিকতাবাদ-বিরোধী মনোভাবের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষ ও জ্ঞানের প্রবাহের ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া, ব্রেক্সিট এবং বহু দেশে অভিবাসনবিরোধী কথাবার্তা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিশ্ব গত কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান বৈশ্বিক সংহতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে; যা দারিদ্র্য ও অপুষ্টির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন অবনতি ঘটিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) আয়োজিত ‘গ্লোবাল ফুড পলিসি রিপোর্ট ২০১৮’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার ম-ল, পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ওয়ায়িশ কবির, সিপিবির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ফাহমিদা খাতুন, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইএফপিআরআইয়ের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. আক্তার আহমেদ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএফপিআরআইর ডিরেক্টর জেনারেল ড. সেনগেইন ফেন। চলতি বছরের গ্লোবাল ফুড পলিসি প্রতিবেদনে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ২০১৭ সালের নীতির অগ্রগতিগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। বৈশ্বিকতাবাদবিরোধিতার ফলে সৃষ্ট উদ্বেগ ও আমাদের বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার কল্যাণের জন্য বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার কল্যাণের জন্য বৈশ্বিক সংহতিকে কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে সে বিষয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়েছে। পর্যালোচনায় ২০১৭ সাল ॥ ২০১৬ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়ার পর সহনীয় বৈশ্বিক আর্থিক পরিবেশ, উন্নত ও কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক গতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো সহায়ক পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পটপরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু এসব দেশে উদ্ভূত বৈষম্যের ফলে এই বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার বিঘিœত হয়েছে; যা দারিদ্র্য বিমোচনের সম্ভাবনা ক্ষুণœ করতে পারে। সেই সঙ্গে এক দশক ধরে দীর্ঘমেয়াদে হ্রাস পাওয়ার পর বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতি বাড়াতে পারে। শক্তিশালী কৃষি উৎপাদন ও উদীয়মান অর্থনীতিতে চাহিদার প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার ফলে ২০১৭ সালের শেষ মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য গতিসঞ্চার ॥ টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্যে গতিশীলতার ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে বেশ কয়েকটি প্রধান বৈশ্বিক নীতিগত অগ্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক প্রয়াসে ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য, চাকরি এবং প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য খাদ্য ব্যবস্থা ব্যবহারের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। জি ২০ কৃষিমন্ত্রীরা খাদ্য ও কৃষি উৎপাদনের পানির টেকসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। জি ৭ কৃষিমন্ত্রীরা বাজেট সঙ্কট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন থেকে কৃষকদের আয় রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। উচ্চাভিলাষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সংক্রান্ত সভায় অগ্রগতির ওপর নজরদারির জন্য একটি সূচক কাঠামো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার পাশাপাশি ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন বিষয়গুলো অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিকতাবাদ বিরোধিতা বাড়ছে ॥ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির দৃঢ় অঙ্গীকার থাকার পরও ২০১৭ সালে বৈশ্বিক ঐকমত্য, সহযোগিতা এবং সংহতি থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বছরের প্রথম দিকে ট্রান্স-প্যাসেফিক পার্টনারশিপ ট্রেড এগ্রিমেন্ট থেকে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ইউরোপে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সদস্যরা বুয়েনস এয়ার্স নগরীতে অনুষ্ঠিত ১১তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন ॥ বৈশ্বিক দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং অপুষ্টি সাম্প্রতিকালে নজিরবিহীনভাবে কমে যাওয়ার মূলে রয়েছে খাদ্য ব্যবস্থা এবং তা ভবিষ্যতেও অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে থাকবে। তবে বৈশ্বিক পরিবর্তন যেমন, বৈশ্বিকতাবাদ বিরোধিতা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বর্তমান সময়ের খাদ্য ব্যবস্থা স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সঙ্কটের ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। অনেক স্থানেই জাতীয় খাদ্য ব্যবস্থায় অধিক লবণ, চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রবণতা বাড়ছে এবং খাদ্য ব্যবস্থায় পরিবেশগত চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ তীব্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি এটা পরিষ্কার যে খাদ্য ব্যবস্থা হচ্ছে উন্নত মানবজীবন ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার মৌলিক চলিকাশক্তি। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্য ব্যবস্থা কিভাবে বদলাতে হবে তা বোঝানোর জন্য, আমাদের বুঝতে হবে বৈশ্বিক পরিবর্তন কিভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। গত আট বছরে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ক্ষুধাসূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মাত্র এক বছরে এই সূচকে ১৭ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন তিন গুণের বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, ২০১০ সালের আগেও প্রতিবছর বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চাল আমদানি করতে হতো। গত ৬/৭ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার প্রায় ১০ শতাংশ কমানোর ক্ষেত্রেও কৃষি উৎপাদন ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে প্রায় সাত কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। তখন আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হতো। এখন দেশের লোকসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি আর আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
×