ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট

ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৪ মে ২০১৮

ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের মধ্যে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। এ সিরিজে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে পাঁচ ওয়ানডে ও তিন টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলবে। প্রথম ওয়ানডে দিয়ে আজ সিরিজ শুরু হচ্ছে। দুপুর দুইটায় পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়াস পার্কে হবে ম্যাচটি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের মধ্যকার আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি হবে পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়াস পার্কে। এরপর এক এক করে ৬ মে দ্বিতীয়, ৯ মে তৃতীয়, ১১ মে চতুর্থ ও ১৪ মে পঞ্চম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজের পর ১৭ মে প্রথম টি২০, ১৯ মে দ্বিতীয় ও ২০ মে তৃতীয় টি২০ হবে। ২১ মে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন নারী ক্রিকেটাররা। ২৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। পাঁচদিন সেখানে অবস্থান করে কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচও ভালভাবে জিতেছে। সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ দল দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে নর্থ ওয়েস্ট নারী দলকে যে ৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদ (১৩৬*) ও ফারজানা হকও (১০২*) প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ২৬৬ রানের জুটি গড়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। দুইজনের সেঞ্চুরিতে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭০ রান করে স্বাগতিকদের ৪৫.৪ ওভারে ১৮০ রানেই অলআউট করে দিয়েছে। ফাহিমা খাতুন (১০-৬-৫-৮) ৫ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়ে অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সবদিক দিয়েই প্রস্তুতি ম্যাচটি ভালভাবে শেষ করায় এখন আত্মবিশ্বাস নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। অবশ্য সিরিজে মূল দৃষ্টিই থাকছে ১৭ মে শুরু হতে যাওয়া টি২০ সিরিজের দিকে। কারণ সামনে যে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব আছে। সেখানে খেলবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আর বিশ্বকাপে যেহেতু খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদেরও টি২০ নিয়েই এখন সব ভাবনা। টি২০ নারী বিশ্বকাপ শুরু হবে এ বছর নবেম্বরে। ৯ থেকে ২৪ নবেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে স্বল্প ওভারের বিশ্বকাপ। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা সরাসরি খেলবে। আর বাংলাদেশ নারী দলকে খেলতে হলে ৩ থেকে ১৪ জুলাই হল্যান্ডে যে বাছাইপর্ব শুরু হবে, তাতে সেরা দুই দলের একটি হতে হবে। এবার বিশ্বকাপে ১০ দল খেলবে। আট দল চূড়ান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশ, জিম্বাবুইয়ে ছাড়া টেস্ট খেলুড়ে আটটি দল চূড়ান্ত হয়ে আছে। বাছাইপর্ব পেরিয়ে আরও দুটি দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। বাংলাদেশকে যেহেতু টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে হবে। বিশ্বকাপও এই বছর হবে। তাই যেখানেই টি২০ খেলার সুযোগ হচ্ছে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন কন্ডিশনে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন তো দারুণ ব্যাপার। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের কাছে টি২০ সিরিজটিই বেশি মুখ্য হয়ে উঠছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা এ সিরিজকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের অধিনায়ক ড্যান ভ্যান নিয়েকার্কতো বলেই দিয়েছেন, ‘আমরা যত বেশি পারব টি২০ বিশ্বকাপের আগে টি২০ ম্যাচ খেলব। আমরা কম্বিনেশন ঠিক করতে চাই। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। বছরের শুরুতে ভারতের কাছে হেরেছি। আমরা জয়ের ছন্দে ফিরতে চাই। মেয়েরা এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা নিজেদের দিকে ফল নিতে চাচ্ছি। পার্কে যার শুরুটা করতে চাই।’ বাংলাদেশ দলও টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব লক্ষ্য করেই খেলতে নামবে। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা বলেছেন, ‘এপ্রিল মাস চলছে, মে মাসে আমাদের খেলা। এ বছর এটাই আমাদের প্রথম খেলা। আমি মনে করি আমাদের আসল লক্ষ্য টি২০ বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং। আমরা এখান থেকেই শুরু করতে যাচ্ছি। ভুল-ত্রুটি, অনেক কিছু শোধরানোর জায়গা আছে। এখানে পাঁচটা ওয়ানডে, তিনটা টি২০ ম্যাচ খেলব। শুরুর একটা-দুইটা ম্যাচে একটু পিছিয়ে থাকলেও আমরা ধরতে পারব।’ দুই বছর আগে হওয়া ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের আগে সালমাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সালমা আবার টি২০’র অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছেন। এমন সময় পেলেন নেতৃত্ব যখন সামনে অনেক খেলা। সালমা ভাবছেন, ‘লম্বা সময় পর একটু তো অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। কারণ দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে আমি নেতৃত্বে ছিলাম না। আগে যেখানে ছিলাম অবশ্যই সেখানে ফিরে যেতে চেষ্টা করব।’ এ সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ আবার অভিজ্ঞতা অর্জনের কথাই বেশি করে বলেছেন। টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরাতে হলে যে অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন। আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকদিন পর খেলতে নামছেন। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ ওয়ানডে খেলে নারী দল। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলার পর ১৪ মাস পর আবার ওয়ানডে খেলতে নামবে। আর ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ টি২০ খেলে। ১৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর তাই এ সফরকে অভিজ্ঞতা অর্জনের সফর হিসেবেই নিচ্ছেন নারী ক্রিকেটাররা। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পর জুনের ১ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় নারী এশিয়া কাপ টি২০ খেলবে বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্টে টি২০তে খেলে অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে টি২০তে খেলার অভ্যস্ততাও বাড়বে। আছে হল্যান্ডে সিরিজ। রুমানা বলেছেন, ‘আমাদের দেশের যে সমস্যা হয়, আমরা জেতার জন্যই খেলি। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর পর আমরা আন্তর্জাতিক সফরে যাচ্ছি। হার-জিত খেলার অংশ। কিন্তু আমি মনে করি, এটা আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে কাজে লাগবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘২০১৩ সালে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলাম। ২০১৭ সালে তারা আমাদের দেশে এসেছিল। ২০১২ সালেও খেলা হয়েছে। সবমিলিয়ে ওদের সঙ্গে তিনটা সিরিজ কিন্তু খেলেছি অতীতে। বেশি হয়তো জয় ছিল না, হয়তো দুই-তিনটা জয় ছিল। সবমিলিয়ে ওরা বিশ্বের চার নম্বর দল। আমরা নয় নম্বর। তার মানে এই না যে আমরা ভেঙ্গে পড়ছি বা পারি না। আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে যেহেতু দীর্ঘ এক বছর পর খেলছি ভাল করব এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করব। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, ভাল কিছু করতে পারব।’
×