ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দশার শিকার মধ্য আমেরিকার অভিবাসীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৪ মে ২০১৮

দুর্দশার শিকার মধ্য আমেরিকার অভিবাসীরা

হন্ডুরার ২৬ বছর বয়স্ক এক নারী তার তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন সেখানে অভিবাসী হওয়ার প্রত্যাশায়। ইয়োল্যানি রেয়েস একটা বিষয়ে অনড় রয়েছেন যে, কেউই ছেলেকে তার থেকে পৃথক হতে দেবেন না। তিনি বলেছেন, আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া মানে আমার দেহের অংশকে পৃথক করা। এএফপি। রেয়েস ও তার শিশুপুত্রকে নিয়ে এক যাত্রীদের সঙ্গে ট্রেন বাসে ও হেঁটে মেক্সিকো অতিক্রম করছেন। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সংলগ্ন তিজুয়ানায় রয়েছেন। মধ্য আমেরিকার ১শ’ ৫০ জনের এ দলটি রবিবার থেকে তিজুয়ানার এক স্বল্প পরিসর খোলা চত্বরে তাঁবুতে অবস্থান করছেন। সীমান্তের ওপারে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগো শহর। কিন্তু শহরে পৌঁছোতে সাগর পাড়ি দিয়ে এক আত্মপ্রত্যয়ী অভিবাসন প্রক্রিয়ায় পড়তে হবে তাদের। এ প্রক্রিয়ায় মাকে সন্তানের কাছ থেকে পৃথক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এটা শুরু হবে রেয়েস যখন ভিসা ছাড়া অভিবাসন কর্মকর্তার সম্মুখীন হবেন। কার্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিবাসন আইন বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন ইয়ালে লোয়েহর বলেন, রেয়েস তার দেশে রাজনৈতিক নির্যাতন বা সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য শিকার কিনা তা নিশ্চিতের জন্য তাকে এক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এরপর তিনি পুরো রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য কিনা যে বিষয়ে এক অভিবাসন বিচারকের আদালতে শুনানি হবে। একজন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীকে এ প্রক্রিয়ায় আটক করা যাবে না। কিন্তু কখনও কখনও তা ঘটে। শুনানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের সত্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় সরকার এবং এ প্রক্রিয়ায় শিশুদের তাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে পৃথক করা হয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত স্টেশনগুলোতে প্রায় ৭শ’ শিশুকে তাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে পৃথক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১শ’ শিশুর বয়স চার বছরের নিচে। ইয়ালে লোয়েহর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগত সম্ভাব্য অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে আটকও করেছে। সমালোচকরা বলেছেন, সরকার কাগজ-পত্রহীন আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার যে নীতি অনুসরণ করছে তা এক নির্মম নীতি। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) মুখপাত্র টাইলের হিউস্টন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সীমান্তে বাধা সৃষ্টির জন্য পরিবার বিচ্ছিন্ন করার কোন নীতি সরকারের নেই। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত অতিক্রমে শিশুদের সর্বাধিক স্বার্থ রক্ষায় ডিএইচএসের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কখনও কখনও শিশুদের পৃথক করার ঘটনা ঘটে যখন প্রমাণ হয় তাদের সঙ্গে মা-ববার সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। রেয়েস জানেন না তাকে কী করতে হবে। তিনি বলেছেন, তিনি তার সন্তানের কাছ থেকে পৃথক হতে পারবেন না এবং তিনি হন্ডুরাসে কোলোনে গৃহে ফিরে যেতেও পারবেন না। তিনি বলেন, তার কৃষক বাবা রাজনৈতিক কারণে নিহত হয়েছেন। আমাদের অনেক দুঃখজনক ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। রেয়েস বলেন, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই নিরাপত্তা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন একমাস আগে। তিনি বলেন, আমি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। সরকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয় ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত অতিক্রমে ৯০ হাজার ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ২০১৭ সালে একই সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৬২ হাজার ৫শ’ ২৫ জনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রেয়েসের ক্যারাভেনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, সীমান্তে এক বিশাল দেয়াল নির্মাণের যুক্তি রয়েছে।
×