ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক বাজেট সংবাদ সম্মেলন

তামাকমুক্ত দেশ অর্জনে দাম বাড়িয়ে ব্যবহার কমাতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৪ মে ২০১৮

তামাকমুক্ত দেশ অর্জনে দাম বাড়িয়ে ব্যবহার কমাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে এর ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে রাজস্ব নয় বরং জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তামাকপণ্যের দাম অনেক বেশি, সুতরাং কর বাড়ালে সিগারেটের চোরাচালান বৃদ্ধির যে যুক্তি তামাক কোম্পানিগুলো দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ অমূলক। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুম-৩ এ প্রজ্ঞা ও এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডাঃ সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার ডাঃ মাহফুজুর রহমান ভুঁঞা, দি ইউনিয়ন এর টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ। অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে এর ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তামাকের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বাড়ানো। কার্যকরভাবে কর বাড়ালে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং সহজলভ্যতা হ্রাস পায়। উচ্চ মূল্য তরুণদের তামাক ব্যবহার শুরু নিরুৎসাহিত করে এবং বর্তমান ব্যবহারকারীদেরকে তামাক ছাড়তে উৎসাহিত করে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম সস্তা এবং তা দিন দিন আরও সস্তা হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কর ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং একইসঙ্গে তামাকপণ্যের ধরন ওব্র্যান্ডভেদে ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ: বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করা; প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্তকরণ: এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ২০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা। সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৬ দশমিক ৪২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার ২ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। দীর্ঘমেয়াদে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে (১ দশমিক ৮ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ০ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) এবং ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন টাকা (অথবা জিডিপির ০ দশমিক ৪ শতাংশ) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে মানবসম্পদ সূচক তথা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চলমান অর্জন বজায় রাখার বিকল্প নেই। তবে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার এবং বিড়ি কারখানাগুলোতে শিশুশ্রমের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মানবসম্পদ সূচকের বিদ্যমান অর্জন ধরে রাখা সম্ভব হবেনা। এছাড়াও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি। প্রস্তাবিত তামাক-কর সংস্কারের ফলে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে এবং নতুন রাজস্ব সৃষ্টির দ্বার উন্মোচিত হবে, যা দিয়ে সরকার দেশের স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন করতে পারবে। একই সঙ্গে, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস পাবে, যা সরকার এবং জনগণ উভয়ের জন্যই লাভজনক। তাই প্রস্তাবিত তামাক-কর উন্নয়নের নতুন সুযোগ। সংবাদ সম্মেলনে যেসব সুপারিশ জানানো হয়- দীর্ঘমেয়াদে তামাকপণ্যের ওপর করারোপে এড ভ্যালোরেম প্রথার পরিবর্তে কেবল সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে; তামাককর ব্যবস্থা সহজ করতে-পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট/কৌটায় বাজারজাত করতে হবে; তামাকপণ্যের মধ্যে কর এবং মূল্য পার্থক্য কমিয়ে আনা; আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স নিয়মিত বৃদ্ধি করা; একটি সহজ এবং কার্যকরী তামাককর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করা; সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিট-নট-বার্ন (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় অর্থায়ন করা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২শতাংশ) একটি অন্যতম কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ২৪.কম এর চীফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর বাংলাদেশ কান্ট্রি এডভাইজার শফিকুল ইসলাম। এতে আরও অংশগ্রহণ করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা) এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সংগঠন।
×