ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৪ মে ২০১৮

সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদ

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে বলার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ এক ধরনের স্বস্তিবোধ করতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আকাক্সক্ষা পূরণ সহজতর হবে না। দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় এখনও আসেনি বলে পরিষদ সদস্যরা যে কালক্ষেপণ করতে চাইছেন, তাতে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকবে, আর বাংলাদেশের বাস্তুচ্যুতদের ভার বহন করার ধকল আরও বহন করে যেতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদ অবশ্য এই বলে সান্ত¡না দিতে পারছে যে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা ও নিরাপদ পুনর্বাসনের জন্য উপযোগী নয়। তাদের হাতে যে কোন জাদু নেই কিংবা আলাদীনের চেরাগও নেই যে কারণে রোহিঙ্গাদের সঙ্কটের ভয়াবহ মাত্রার কথা স্বীকার করলেও এর সমাধানে রাতারাতি জাদুকরী কোন কিছু আশা করা ঠিক হবে না। এ রকম আশা কেউ করে না। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শাসক নিয়ন্ত্রিত সরকারকে চাপে রাখার কথা বলা হলেও, তাতে কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। গত বছরের আগস্ট থেকে ক্রমান্বয়ে অদ্যাবধি আশা রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধে ও দেশত্যাগে বাধ্য করানোর বিষয়টি জাতিসংঘ কোনভাবে সামাল দিতে পারেনি। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশের আলোকে উল্লেখ করার মতো কোন পদক্ষেপও নেয়া হয়নি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে কোফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ চার দফা প্রস্তাব রেখেছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার নানা রকম টালবাহানা অব্যাহত রেখেছে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে স্থায়ী ও অস্থায়ী দেশের প্রতিনিধিসহ চল্লিশ সদস্যের একটি দল এ সপ্তাহের গোড়ায় তিন দিনের সফরকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা জানা ও উপলব্ধি করেছেন। তারা এখন রাখাইনে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল বলেছে, সঙ্কট নিরসনের সব পথ খোঁজা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। নিরাপত্তা পরিষদের যে দুটি সদস্য দেশের আপত্তির কারণে নিরাপত্তা পরিষদ কয়েক দফা প্রস্তাব এনেও তা পাস করাতে পারেনি, সেই চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরাও ছিলেন পরিদর্শনকালে। রাশিয়া বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখনও একটি বিতর্কিত বিষয়। আর চীন বলেছে, রোহিঙ্গা সমস্যার কোন সহজ সমাধান নেই। সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান দরকার দুই দেশের মধ্যেই। অবশ্য পেরুর অধিবাসী পরিষদ সভাপতি বলেছেন, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে কিভাবে দু’দেশকে সহযোগিতা করতে চায়, তা বোঝার জন্য দু’দেশ সফর। বাস্তব পরিস্থিতি কী তা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তারা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানাবেন ও নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন। যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি অবশ্য বলেছেন, কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা কখনও আপোস করবে না। এ যদি কথার কথা না হয় তাহলে যুক্তরাজ্য তার মিত্রদের নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। সবই মনে হচ্ছে কথার ফুলজুড়ি। তবে আশার কথা যে, নিরাপত্তা পরিষদ সরেজমিন পরিদর্শনে যে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তার আলোকে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। চীন অনেকটা নমনীয় হলেও রাশিয়া এখনও অনড়। বিষয়টিকে তারাই জটিল করে তুলেছে, বিশেষ করে সেখানে যে গণহত্যা হয়েছে, তার বিচার হওয়ার কোন বিকল্প থাকতে পারে না। রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশ কোন পক্ষ নয়। তারপরও সমস্যা মোকাবেলা তাদের করতে হচ্ছে। মিয়ানমারে দীর্ঘকাল ধরে সামরিক জান্তার শাসন থেকে দেশটিকে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটাতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল যদি চাপ প্রয়োগ করে তা কার্যকর করতে পারে, তবেই মিয়ানমার বিশ্বজনমত উপেক্ষা করার অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য। নিরাপত্তা পরিষদ দু’দেশ সফর শেষে কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।
×