ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিনিধিদল আজ আসছে

আমদানির তুলনায় রফতানি বাড়ছে না থাইল্যান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩ মে ২০১৮

আমদানির তুলনায় রফতানি বাড়ছে না থাইল্যান্ডে

এম শাহজাহান ॥ থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিবছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে সেই তুলনায় রফতানি বাড়ছে না থাইল্যান্ডে। দেশটির সঙ্গে বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৭০ কোটি ডলার। এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর চিকিৎসা নেন থাইল্যান্ডে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভিসা জটিলতা একটি বড় সমস্যা। এসব সমস্যা দ্রুত নিরসন ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী মি. কোবাসাক পুত্রাকুলের নেতৃত্বে দেশটির বিশ সদস্যের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল আজ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আজ বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড বিজনেস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে, থাইল্যান্ড অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে ৩২তম উন্নয়নশীল দেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৮তম। সে হিসেবে অর্থনৈতিক বিবেচনায় থাইল্যান্ড থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ওষুধ, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটনশিল্পে থাইল্যান্ড বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি সম্ভব হলে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হলে রফতানি বাড়াতে হবে। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামালের সিংহভাগ আমদানি হচ্ছে থাইল্যান্ড থেকে। দেশে এসব কাঁচামাল উৎপাদন করতে হলে পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ। এছাড়া স্বাস্থ্য পর্যটনে থাইল্যান্ড অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত এবং ওষুধ রফতানির মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। জানা গেছে, বাংলাদেশের পাট ও পাটজাতীয় পণ্য এবং অন্যান্য কৃষিপণ্যেরও চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার বাড়ানো গেলে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে থাইল্যান্ডের রামোং বন্দরের সংযোগ স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নেও এবার জোর দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি এগিয়ে নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে আসিয়ানের বাজার সম্প্রসারণে থাইল্যান্ড মূলত বাংলাদেশের গেটওয়ে হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। থাইল্যান্ডের বাজারে দেশীয় পণ্যের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে পরবর্তী জেটিসি (জয়েন্ট ট্রেড কমিশন) সভায় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে ট্যারিফ কমিশন থেকে পণ্যের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্যসহ অন্তত ২৫টি পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, বর্তমান থাইল্যান্ড থেকে ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হচ্ছে, বিপরীতে রফতানি হচ্ছে মাত্র ৮ কোটি ডলারের পণ্য। বড় অঙ্কের এই বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে এবার রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশটির বিনিয়োগও চাওয়া হবে। প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসা ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গমন করছেন। থাইল্যান্ডের পর্যটনশিল্প বিকাশে বাংলাদেশীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় এদেশে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ আসেনি। শুধু তাই নয়, ভিসা পেতেও এখন নতুন বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে নয়, প্রতিবছর বাণিজ্য বৈষম্য বাড়ছে। বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমি বরাদ্দ দেয়ার কথা ভাবছে বর্তমান সরকার। জানা গেছে, থাইল্যান্ডের কাছে যেসব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে, তার মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত টেক্সটাইল ফেব্রিকস, পাটের সুতা দিয়ে তৈরি টেক্সটাইল, নিট ও ওভেন মিশ্রিত শার্ট, টি-শার্ট, বুনানো জামা, মহিলাদের টাওয়েল, শতভাগ সুতির শার্ট, ছালার বস্তা উল্লেখযোগ্য। দেশটিতে প্রতিবছর মাত্র ৬০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক (ওভেন) রফতানি হয়। যদিও দেশটির প্রতিবছর প্রায় ৪০-৪২ কোটি ডলারের পোশাকের চাহিদা রয়েছে। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে প্রতিবছর দেশটিতে বিপুল পরিমাণ পোশাক রফতানি করে। বাংলাদেশ রফতানিতে এই সুবিধা পায় না। যদিও থাইল্যান্ড সরকার ইতোপূর্বে বাংলাদেশের ২২৯টি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছিল। তবে বঙ্গোপসাগর এলাকার দেশগুলোর সংগঠন বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল, টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের (এফটিএ) আওতায় এ শুল্কছাড় কার্যকর করার কথা জানিয়ে ২০০৭ সাল থেকে এ সুবিধা বন্ধ করে দেয় থাই সরকার। ২০০৬ সাল থেকে এ মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। তবে একই সময়ে দি এ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট ন্যাশনসের (আসিয়ান) এফটিএ কার্যকর হওয়ায় চীন ও ভারত থাইল্যান্ডে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। পেপারলেস ট্রেড চুক্তি ॥ জাতিসংঘের ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ্যান্ড দি প্যাসিফিক (ইউএনস্ক্যাপ)-এর ৭২তম সেশনে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ফেসিলিটেশন অব ক্রোস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া এ্যান্ড দি প্যাসিফিক’ শীর্ষক (৭২-৪) নম্বর রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। এ চুক্তিতে বাংলাদেশ পার্টনার হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকায় এ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন।
×