ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুরে নিহত দুই মেয়েসহ মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ মে ২০১৮

মিরপুরে নিহত দুই মেয়েসহ মায়ের শরীরে আঘাতের  চিহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিরপুরে সরকারী কোয়ার্টারে দুই মেয়েসহ মায়ের নৃশংস মৃত্যুর ঘটনার কিনারা হয়নি। নিহতদের শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের জানান। তবে মা দুই মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর নিজের শরীরে নিজেই ছুরি মেরে আত্মহত্যা করেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ দোটানায় রয়েছে। ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা ঘটনার সময় বাসায় থাকা নিহতদের স্বজনদের ওপর নজরদারি করে যাচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম থানাধীন পাইকপাড়া সি-টাইপ সরকারী কোয়ার্টারের ১৩৪ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশের ৮ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রধান কোষাধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার (৩৫), তার বড় মেয়ে স্থানীয় মডেল একাডেমি নামের একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) ও আদিবা তাহসিন হানির (৪) লাশ উদ্ধার হয়। নিহতদের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সেলিম রেজা সাংবাদিকদের জানান, নিহত মা ও দুই মেয়ের মরদেহের ময়নাতদন্তে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর জখম পাওয়া গেছে। তাদের উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের ভিসেরার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় মৃত্যুর আগে তাদের কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কিনা বা খেয়েছিল কিনা তা জানা যাবে। দারুস সালাম থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী ফ্ল্যাটটি নিহত জেসমিন আক্তারের স্বামী জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটম্যান হাসিবুল হাসানের নামে বরাদ্দকৃত। লাশ তিনটি উদ্ধারকালে বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। কক্ষের ভেতরে বিছানার ওপর দুই সন্তানের রক্তাক্ত লাশ ছিল। মেঝেতে পড়েছিল জেসমিন আক্তারের লাশ। জেসমিনের ডান হাতের দিকে একটি রক্ত মাখা ছুরি পড়েছিল। হলুদ রঙের কাঠের বাট যুক্ত ছুরিটি বাসায় ব্যবহৃত হয়েছে কিনা এ বিষয়ে স্বামী হাসিবুল কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বাসার ভেতর থেকে জানালা বা দরজা দিয়ে বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই। হাসিবুল বা তার স্ত্রী পক্ষের কাউকেই সন্দেহ করা যাচ্ছে না। কারণ দুই পক্ষেরই লোকজন ঘটনার সময় বাসায় ছিল। বাসায় হাসিবুলের দুই ভাগ্নে ও ভাগ্নি থাকতেন। আরেক কক্ষে নিহত জেসমিনের খালাতো বোন রেহেনা পারভীন যুথী থাকতেন। তাদের দাবি, তারা ঘটনাটি টের পাননি। এত লোক বাসায় থাকা অবস্থায় তিন জনের হত্যা বা আত্মহত্যার বিষয়টি কারও টের না পাওয়ার বিষয়টি রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এজন্য ঘটনার সময় বাড়িতে থাকাদের ওপর নজরদারি অব্যাহত আছে। লাশের দাফন শেষে হাসিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করার ঘটনাটি রহস্যজনক। একজন মানুষের পক্ষে আগে পেটে ছুরিকাঘাত করার পর স্বাভাবিক কারণেই তার পক্ষে গলায় ছুরিকাঘাত করা সম্ভব নাও হতে পারে। আবারই একইভাবে আগে গলায় ছুরিকাঘাত করার পর পেটে ছুরিকাঘাত করা সম্ভব কিনা তাও এক জটিল রহস্য। সত্যিকার অর্থেই মা দুই সন্তানকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন নাকি অন্য কেউ হত্যাকা- ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে তাও স্পষ্ট নয়। রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই নৃশংস হত্যার ঘটনার কিনারা হবে। হাসিবুলের দাবি, তিনি কোয়ার্টারের ভেতরে থাকা মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ পান। পরে তিনি ও জেসমিনের ভাই শাহীনুর মিলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে মা ও দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরিবারের দাবি, জেসমিন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছিলেন। ব্যথায় মাঝে মধ্যেই চিৎকার করতেন। জেসমিন আক্তারের খালাতো বোন রেহেনা পারভীনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের দাবি, কয়েক বছর ধরে জেসমিন আক্তার মাইগ্রেনের সমস্যায় ভূগছিলেন। ব্যথা উঠলে চিৎকার করতেন। এরই মধ্যে ঢাকায় দুই জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। বাধ্য হয়ে স্বামী হাসিবুল হাসান তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি স্ত্রী জেসমিন। কয়েক দিন আগে জেসমিন তার দুই সন্তানকে ঘুমের ওষুধও খাইয়েছিলেন। স্বামী হাসিবুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে এবং জেসমিনের বাড়ি পার্শ্ববতী ঠাকুরগাঁও জেলায়। মঙ্গলবার সরকারী ওই কোয়ার্টারের সামনের জামে মসজিদে নিহতদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
×