ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপিকে জোর করে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ মে ২০১৮

বিএনপিকে জোর করে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয় ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে জোর করে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। মহান মে দিবস দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন হুঙ্কার দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। উনার (খালেদা) মুক্তি আদালতের বিষয়। ইসির তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে অক্টোবরে নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করবে। এটি বিএনপির জন্য অপেক্ষা করবে না। তবে আমরা মনে করি তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে তাদের আমরা স্বাগত জানাই। শ্রমিকদের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিকবান্ধব। গরিব মেহনতি মানুষের সরকার। তারা রক্ত দিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আপনাদের যে দাবিগুলো এখনও পূরণ হয়নি, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করা হবে। সমাবেশে সড়ক শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। আপনারা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য সড়কে প্রতিযোগিতা করবেন না। ওভার টেকিং করবেন না। সড়কে শুধু সাধারণ যাত্রী নয়, শ্রমিকরাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। একজনের জন্য একটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে এ বিষয়গুলো ভেবে গাড়ি চালাবেন। কে ক্ষমতায় কতদিন থাকবে তা জনগণই নির্ধারণ করবে ॥ এদিকে একই দিন দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আদমজী জুট মিল চালু সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন ক্ষমতায় আছি, আরও ৫০ বছর ক্ষমতায় থাকব- এমন অহেতুক অহঙ্কার করা উচিত নয়। এ রকম কথা বলে কর্মীদের মাঝে তরঙ্গ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু বাস্তবতায় এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই। এসব বলে অহেতুক অহঙ্কার করা উচিত নয়। কে ক্ষমতায় কতদিন থাকবে তা জনগণই নির্ধারণ করবে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, একজন নেতার বুঝে শুনে কথা বলা উচিত। এ ধরনের বক্তব্য গোটা পার্টিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। নির্বাচনের বছর সংযত আচরণ করতে হবে। মাইক পেলেই যা খুশি তা বলা যাবে না। আদমজী জুট মিল শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০০১ সালে মাথা ব্যথার চিকিৎসায় মাথা কেটে ফেলার মতো কাজ করেছে তৎকালীন বিএনপি সরকার। শ্রমিকের রুটি রুজির ওপর আঘাত হানা হয়েছে। এই শ্রমিকদের অনেক দুঃখ-দুর্দশা। আমি জানি এবং আমার নেত্রীও জানেন। আপনাদের জন্য একটি পরিকল্পনা আছে সরকারের। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা কথা দিয়ে কথা রাখেন। বার্নিকাটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক ॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে তার বাসায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেয়। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকটি সৌজন্যমূলক নৈশভোজ বলে দাবি করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, নৈশভোজ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মার্শা বার্নিকাটের পাঁচ মিনিট একান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এম্বাসেডর মোঃ জমির, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স সেকেন্ড সেক্রেটারি কাজী রহমান দস্তগীর, জ্যাকব জে লেভিনসহ দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি ভারত সফরের পাশাপাশি আমেরিকার দূতাবাসে যাওয়ার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতে গিয়ে কিংবা সোমবার আমেরিকান দূতাবাসে গিয়ে কারও বিরুদ্ধে নালিশ করিনি। দুই জায়গাতেই দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমাদের ভারত সফরকে অনেকেই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছে। রাজনীতির সঙ্গে একটা নীতি নৈতিকতার সম্পর্ক থাকে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সেক্রেটারি জেনারেল গত বছরের শেষ দিকে সরকারী সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। ভারতে গিয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোন কথা হয়নি- দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সমর্থন করার বিষয়ে কোন কথাই উচ্চারণ করিনি। বাংলাদেশের স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। আমরা একবারও কারও বিরুদ্ধে নালিশ করিনি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও কোন কথা হয়নি। কথা হয়েছে তিস্তা নিয়ে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে। জঙ্গীবাদ নির্মূলে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, একইভাবে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে সৌজন্য ডিনারে অংশ নিয়েছি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। জানুয়ারি মাসে আমেরিকান দূতাবাস থেকে বলা হয়েছিল এই আমন্ত্রণের কথা। আমারও সময়ের সঙ্গে মেলানো কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আবার বার্নিকাটেরও প্রতি মাসে আমেরিকা যেতে হয়। সময়ের মিল করেই ৩০ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানেও আমরা দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছি। যেসব কথা জনসমাবেশে বলি, মিটিংয়ে বলি, প্রেস ব্রিফিংয়ে বলি সেগুলো ভারত কিংবা আমেরিকান দূতাবাসে গিয়ে আমরা বলি না। কারও কাছে নালিশ করে আমরা রাজনীতি করতে আসিনি।
×