ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিসির বাসায় হামলায় ১৮ জন শনাক্ত, আটকের চেষ্টা চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ মে ২০১৮

ভিসির বাসায় হামলায় ১৮ জন শনাক্ত, আটকের চেষ্টা চলছে

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাই, সন্ত্রাসের ঘটনায় শনাক্ত হয়েছে হামলার সঙ্গে সন্দেহভাজন ১৮ হামলাকারী। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ও রিমান্ডে নেয়া চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের শনাক্ত করেছে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনাক্ত হওয়া ১৮ জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। কোটা আন্দোলনের আড়ালে গভীর রাতে ভিসির বাসভবনে হামলা করার জন্য কোন রাজনৈতিক দল উস্কানি দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রিমান্ডে নেয়া চারজনকে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়া সিয়াম জিজ্ঞাসাবাদে হামলার সময় মোবাইল ফোনটি লুট করে নিয়ে যায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর চানখাঁরপুল থেকে রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব (২৬), মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ (২৫), আলী হোসেন শেখ ওরফে আলী (২৮) এবং আবু সাইদ ফজলে রাব্বি ওরফে সিয়াম (২০) নামে চার যুবককে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই সঙ্গে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাদের উস্কানি দেয়া হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রিমান্ডে নেয়া চারজনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও ভিসির বাসভবনে তারা হামলা করতে গেল কেন? তাদের কি উদ্দেশে এবং কার নির্দেশে উপাচার্যের বাস ভবনে গিয়ে হামলা ও ভাংচুরে অংশ নেয় তা জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদেরকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে রাকিবের চার দিন, মাসুদকে তিন দিন, আলী হোসেন ও আবু সাইদের ২ দিন করে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। জানা গেছে, হামলার সময়ে ভিসির বাসভবনের সামনের সিসিটিভিগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলেও হামলার আগে ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয় ১৮ জনকে। বিশেষ করে ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনের সড়কে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তবে ভিসির বাসভবনে তারা হামলা করেছে কিনা তার সত্যতা যাচাই বাছাই করেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যে দুটি মোবাইল খোয়া গিয়েছিল, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাও শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। তদন্তে গ্রেফতার হওয়া এই চারজন ছাড়াও আরও অন্তত ১৮ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। হামলার পর এদের বেশিরভাগই ফুলার রোড দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ছবি সংগ্রহ করে তাদের শনাক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন হলের প্রভোস্টের সহায়তায় হামলা-ভাংচুরে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা কে কোন বিষয়ের ছাত্র এবং গ্রামের বাড়িসহ বর্তমান অবস্থানও গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তদন্ত সূত্র মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত ৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের বাস-ভবনে অজ্ঞাত দুষ্কৃৃতকারীরা প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। দুষ্কৃৃতকারীরা উপাচার্যের বাসার নিচে থাকা চারটি গাড়ি ভাংচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় পরদিন ১০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এস এম কামরুল আহ্সান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৯ এপ্রিল অজ্ঞাত পরিচয় মুখোশধারী সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীরা লোহার রড, পাইপ, হ্যামার, লাঠি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায়। তারা সীমানা দেয়াল টপকে এবং ভবনের মূল ফটকের তালা ভেঙে ভবনের ভেতরে ঢোকে। এ সময় বাসভবনে মূল্যবান জিনিসপত্র, আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, লাইট, কমোড ও বেসিনসহ অনেক মালপত্র ভাংচুর করা হয়। লুটও করা হয়। এ ছাড়া ভবনে রাখা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং আরও দুটি গাড়ি ভাংচুর করে। হামলাকারীরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলে এবং আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেছেন, কার নির্দেশে গ্রেফতারকৃতরা উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে কারা ছিল তা জানার চেষ্টার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া চারজনের কাছ থেকে দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি মোবাইল হামলার দিন উপাচার্যের বাসা থেকে অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে লুট করে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। মোবাইলটি সিয়ামের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম হামলার সময় মোবাইলটি লুট করে নিয়ে যায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছে। গ্রেফতার হওয়া চারজনের মধ্যে মাসুদ ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তার সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসার আরও ছাত্র এসেছিল কিনা এবং হামলার সময়ে ভিসির বাসভবনে তাকে কে বা কারা এখানে আসতে উস্কানি দিয়েছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ভিসির বাড়িতে হামলাকারী অন্যরাও চিহ্নিত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে যারা হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জড়িত বাকিদের শনাক্ত করছি এবং সুনির্দিষ্ট হয়ে তাদের আমরা গ্রেফতার করব। অবশ্যই কাউকে ছাড় দেব না। গ্রেফতার হওয়া চারজনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। এরা কেন এসেছিল- তা আরও কয়েকদিন পর আমরা পরিষ্কার হব। তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি উপাচার্যের বাড়ি থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
×