ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের ক্ষমতায় আসব ॥ জনগণ যদি দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না চায় তাহলে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ মে ২০১৮

ফের ক্ষমতায় আসব ॥ জনগণ যদি দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না চায় তাহলে আওয়ামী  লীগকে ভোট দেবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অবশ্যই সবসময় নির্বাচনে জয়ী হব এটা আমরা আশা করি। এত উন্নয়ন করার পরও জনগণ যদি ভোট না দেয়, ক্ষমতায় যদি আসতে না পারিÑ এটা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। দেশের জনগণ যদি বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না চান তাহলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। আর নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি। আর কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন করবে কি করবে না- এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্ত তো আমরা চাপিয়ে দিতে পারি না। বলতে পারি না নির্বাচন করতেই হবে, না করলে জেলে ধরে নিয়ে যাব। বুধবার বিকেলে গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দিতে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে পলাতক থাকা দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমরা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। সৌদি সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। অন্য যে সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা তা করব। আর ক্ষমতা আমার কাছে কিছু না। আমার কোন ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নেই, জীবনের পরোয়াও আমি করি না। দেশ ও জনগণের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য ও ব্রত। তাই দেশ ও জনগণের জন্য যেটি মঙ্গল সেটিই আমি করব। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসিমুখে সাবলিলভাবে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন। সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্যে ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও স্বভাবতই প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচনের বিষয়টি ঘুরে ফিরেই উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী ॥ আগামী নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অবশ্যই সবসময় নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হবো নিশ্চয়ই এটা আশাও করি। আর দেশের এত উন্নয়ন করেছি। নির্বাচনে আমরা না আসলে দেশের উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা তা যে নষ্ট হয়ে যায়, সেটা তো আপনারা (দেশবাসী) নিজেরাই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা যে উন্নয়ন করেছিলাম, সেটা নষ্ট করে দিয়েছিল। কাজেই ওইভাবে যাতে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে না চান তাহলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি বলছে তাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) মুক্ত না হলে তারা নির্বাচন করবে না। তাদের নেত্রীকে তো আমি জেলে পাঠাই নাই। রাজনৈতিক কারণে আমি যদি তাকে জেলে পাঠাতাম তবে ২০১৪, ১৫ ও ১৬ সালে যখন তারা পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছিল, নিজ অফিসে ৬৮ জন লোক নিয়ে থেকে হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিল তখনই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতাম। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমি তা করতে চাইনি। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার বাসার দেখতে গিয়ে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলে মারা গেল। আমি দেখতে গেলাম। আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে ঢুকতে দিল না। অন্য কোন দেশ হলে কি করত? ওই দরজার বাইরে দিয়ে আরকেটা তালা দিয়ে দিত, যাতে ওখান থেকে কেউ আর বেরুতেই না পারে। সেটা করতে পারতাম আমি ইচ্ছে করলে। আমি যখন ঢুকতে পারব না, তোমরা বেরুতেও পারবে না। সে তালাও আমি দিয়ে দিতে পারতাম, আমরা কিন্তু তা করিনি। কারান্তরীণ খালেদা জিয়ার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, এতিমের টাকা চুরি করার মামলা দশটা বছর ধরে চলেছে। ১৫২ কি ১৫৪ বার সময় নিয়েছে। তিন বার কোর্ট বদল হয়েছে। ২২ বার রিট হয়েছে। তারপরও বিএনপি এত বড় বড় আইনজীবী, কত বড় বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ল’ ইয়াররা। তারা কিছুতেই প্রমাণ করতে পারল না যে, খালেদা জিয়া ওই এতিমখানার নামে টাকা এনে দুর্নীতি করেননি। আর আদালত রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের কাছে দাবি করলে তো কিছু হবে না। যখন আইনগতভাবে কারাগারে গেছেন তখন আইনগভাবে ফাইট-ব্যাক করতে হবে। এখানে আমাদের কাছে দাবি করে কি লাভ হবে? এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমি একটি অন্যায় কাজ করেছি। একজন নিরপরাধ মানুষ, ফাতেমা বেগম। খালেদা জিয়ার এখন মেইড সারভেন্ট লাগবে। আপনারাই বলেন, কোন সাজাপ্রাপ্ত কোন আসামিকে কবে, কে কোন দেশে মেইড সারভেন্ট সাপ্লাই দিয়েছে? তাঁর (খালেদা জিয়া) সেই দাবিও আমরা মেনে নিয়ে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দয়াবশত হয়ে তার মেইড সারভেন্ট পর্যন্ত সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এত সোচ্চার, তবে তারা কেন সোচ্চার হননি যে, একজন নিরপরাধ মানুষ কেন খামোখা জেল খাটবে? তারপরও যদি একটা ভাল বেতন দিত? তাও না। কত বেতন দেয় সেটা জিজ্ঞেস করে দেখেন, আমি আর বলতে চাই না। তিনি বলেন, একটা নিরপরাধ মানুষকেও কিন্তু জেল খাটতে হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারণে। যদিও আমাদের কোন মানবাধিকার সংস্থা এটা নিয়ে একটা টু শব্দও করে না। বিনা বিচারে বিনা সাজায় বিনা কারণে কেন একজন মহিলা জেল খাটবেন, এটা আমাকে বলেন। তাও খাটছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার ওষুধ রাখার জন্য ফ্রিজ লাগবে। সেই ফ্রিজের ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে। আর কত শুনবেন। পৃথিবীর কোন দেশ কি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য এত করে? আর তারা (বিএনপি) তারা কারা? যারা ওই যুদ্ধাপরাধীদের, জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করেছে। তাদেরই একজন এতিমের টাকা চুরি করে এখন কারাগারে। আর আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ হচ্ছে গণতন্ত্রের অংশ। কোন পার্টি নির্বাচন করবে, কোন পার্টি করবে না- এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর আমি তো কোন কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না, বলতে পারি না তোমাদের নির্বাচন করতেই হবে। নির্বাচন না করলে ধরে নিয়ে যাব, জেলে যাবে- এসব কথা কী আমরা বলতে পারি? তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। তারা নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। আর কে নির্বাচনে আসবে, কে আসবে না এটা সম্পূর্ণ সেই দলটির ওপর নির্ভর করে। আর নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যদি মনে করে যে তাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে, তবে তারা নৌকায় ভোট দেবে। আমরা আবার ক্ষমতায় আসব। অন্তত আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি বলেই দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে, বাংলাদেশ একটা মধ্যম আয়ের দেশ হতে উন্নত দেশ হবে। ইনশাল্লাহ একমাত্র আওয়ামী লীগই সেটা করতে পারবে। আর কেউ পারবে না। সাংবাদিকদের উদ্দেশে করে হাস্যোচ্ছলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের জন্য যে কাজ করেছি সেজন্য একটা ধন্যবাদ দেন। আর যাতে ভোটটা পাই সেটাও একটু দেখেন। বিএনপি একটি দেউলিয়া রাজনৈতিক দল ॥ লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে দেয়া এবং তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি নিয়ে আসি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের বিষয়েও ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে তারা (বিএনপি) চেয়ারপার্সন করল। বিএনপি নাকি সবচেয়ে বড়, জনপ্রিয় দল! তাদের দলে কী একজন যোগ্য লোকও নেই? এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপার্সন করে? আসলে এ ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়া দল আর নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার অপরাধ শুধু আমাদের দেশে নয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রতিনিধি এসেও কিন্তু সাক্ষী দিয়ে গেছেন। সে দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশের মাটিতে এবং সেখানে বসে প্রতিদিন তারা আন্দোলন করে, ষড়যন্ত্র করে। সাজাপ্রাপ্ত ছেলে আন্দোলন করে তার মায়ের মুক্তির জন্য! সেও (খালেদা জিয়া) তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নিশ্চয়ই ব্রিটিশ সরকার তাদের মাটিতে এ ধরনের অপরাধী যে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা থেকে শুরু করে মানিলন্ডারিংসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর তার অপরাধ তো একটা না, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সে জড়িত। অগ্নিসন্ত্রাস, খুন-খারাবি তো কতই আছে। বরং আমি অবাক হয়ে যাই বিএনপির বিষয়ে। একটা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে গেলে তাকে কিন্তু তার পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করতে হয়। তারপর সে ট্রাভেলস ডক্যুমেন্ট পায়। সেখানে কিন্তু স্পষ্ট লেখা থাকে যে, সে যে দেশ থেকে পাসপোর্টধারী সেই দেশে আসতে পারবে না। এটা একটা নিয়ম। সেই দেশে সে আসতে পারবে না। অথচ সেই পলাতক আসামি এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান। বাংলাদেশের রাজনীতিটা কোথায় গেছে। একটা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে তারা চেয়ারপার্সন করে বসে রেখেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে হত্যার জন্য বহুবার হামলা করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা যখন বললেন, আরেকটি ১৫ আগস্ট হবে, আমাকের আমার পিতার পথেই যেতে হবে। যখন খালেদা জিয়া বললেনÑ আমি প্রধানমন্ত্রী কেন কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। ঠিক তখনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। তাই অবশ্যই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে যে, এ ধরনের অপরাধীকে (তারেক রহমান) বাংলাদেশে ধরে নিয়ে আসা। কারণ আমরা বিট্রিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে এবং আইনীভাবে আন্তর্জাতিকভাবে যেটা করা হয়, আমরা সেটা করব। কোটা বাতিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ॥ কোটা পদ্ধতি বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে কি থাকবে না, তা ছাত্রদের বিষয় নয়। এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। এ সময় কোটা ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, কিন্তু তারা তো কোটা চায় না। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। আর কোটার দরকার নেই, বাতিল করে দিয়েছি। এখন আর আলোচনার কী আছে? আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের কেউ পরবর্তীতে জেলা কোটা না থাকার কারণে সরকারী চাকরি না পেয়ে চাইলেও পাবে না ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন জেলা কোটা না থাকলে আন্দোলনকারীদের কেউ পরে চাকরি না পেয়ে তা চাইলেও পাবে না। আন্দোলনে যারা যারা আছে, তাদের ছবি সংরক্ষণ আছে, যদি কান্নাকাটি করে তখন দেখা যাবে। কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন বিষয়ে আবারও উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, হঠাৎ কোন কথাবার্তা নেই, কোটা চাই না বলে আন্দোলনের শুরু। আমরা বসে থাকিনি, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের বোঝাতে। আন্দোলনকারী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা পড়ে তারা তো নামকাওয়াস্তে পয়সা দিয়ে পড়ে। তাদের তো আমরা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় পড়াই। একটা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা যে হলে থাকে, যে টাকায় তারা থাকে, যে টাকায় খাবার পায়, যে টাকায় চলে সেটা কি সম্ভব? শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলোর উন্নয়ন করেছি আমি। তারপরও তারা আন্দোলন করেছে তারা কোটা চায় না। এরা আমার নাতির বয়সী। তারা চায় না, আমি মেনে নিয়েছি। সেটা নিয়ে এত আলোচনার কী দরকার, প্রশ্ন আমারও। চাকরির ক্ষেত্রে কোন জেলা যদি বাদ পড়ে আমাদের কিছু করার নেই। ছাত্রলীগে সমঝোতা না হলে নির্বাচন ॥ ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব গঠনে নির্বাচনের নিয়ম আছে। সেজন্য প্রার্থীদের আবেদন নেয়া হয়েছে। প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, সেটা না হলে নির্বাচন হয়। সমঝোতা হলে গেলে সেভাবেই (প্রেস বিজ্ঞপ্তি) কমিটি ঘোষণা করা হবে। আর সবাইকে মনে রাখতে হবে, একমাত্র আমরাই ছাত্রলীগের সম্মেলনে স্বচ্ছ ভোটার বাক্সের মাধ্যমে নির্বাচনে ভোট নিয়ে কমিটি গঠন করেছি। উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড নারীদের প্রতি উৎসর্গ ॥ প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার গ্লোবাল সামিট অন উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড দেশের নারী সমাজের প্রতি উৎসর্গ করে বলেন, এই পুরস্কারটা আমি আমার দেশের নারী সমাজের প্রতি উৎসর্গ করেছি। আমাদের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। লন্ডনে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা হয়েছে, সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ক দুটি অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে মনে করি। সফরে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া ও তুরস্ক। এ তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ামনারের ওপর চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই মানুষগুলো আমাদের আশ্রয় দেয়ার ভূমিকার সুবিধা সবাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা যেন নিরাপদে ফিরতে পারে সেজন্য সবাই মিয়ামনারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে ভারত, রাশিয়া ও চীনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত আছে। নিরাপত্তা পরিষদেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। এই বাইরেও তারা সহায়তা দিচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের যেসব সদস্য বাংলাদেশে সফরে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তারা প্রত্যেকে সহানুভূতিশীল। তাদেরও চাওয়া, রোহিঙ্গারা যেন রাখাইনে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য বা অস্থায়ী সদস্যেদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। এই সঙ্কট উত্তরণে তাদের সম্পৃক্ততা ও সমর্থন আমরা চাই। পথচারীদেরও নিয়ম মানার অনুরোধ ॥ সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনার জন্য শুধু গাড়িচালকদের দোষ না দিয়ে পথচারীদেরও সড়কের নিয়মগুলো মানার ওপর জোর দেন। পথচারীরা যেন নিয়ম জানে ও মানে সেজন্য জনসচেনতা তৈরিতে গণমাধ্যমে সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার পরপরই গাড়িচালককে না পিটিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করার অনুরোধ জানান তিনি। ঢাকা সড়কে ট্রাফিক আইন না মেনে পথচারীদের পারাপারের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এ কথাগুলো অনেকে পছন্দ করবেন না, কিন্তু বাস্তবে যা তাই বলছি। রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, সেটা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে আসছে, ফুটব্রিজে না উঠে আমরা হাত তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম! আর আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, কেন আপনি হাত বের করে যাবেন? সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত ড্রাইভারদের অবশ্যই বিচার হবে, পাশাপাশি কিন্তু পথচারীদেরও সতর্ক হতে হবে।
×