ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি শিব নদের পানি বৃদ্ধি

বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষেতেই ডুবছে পাকা ধান, হতাশ কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩ মে ২০১৮

বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষেতেই ডুবছে পাকা ধান, হতাশ কৃষক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ কালবৈশাখীর তা-ব ও ভারি বৃষ্টিপাতে ক্ষেতের পাকা বোরো ধান নিয়ে এবার চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। একদিকে কালবৈশাখী অন্যদিকে শ্রমিক না পাওয়ায় মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে এখনও বেশির ভাগ ধান মাঠেই রয়েছে কৃষকের। ভারি বর্ষণের কারণে ক্ষেতেই এখন সে ধান ডুবতে বসেছে। এ অবস্থায় সীমাহীন ক্ষতির শঙ্কা করছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। গত সোমবার ও সর্বশেষ বুধবারের ভারি বর্ষণ এবং কালবৈশাখীর তা-বে কৃষকের স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে। জেলার তানোর উপজেলার শিব নদের পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এসব ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই বোরো আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। ক্ষেতে ক্ষেতে কেবল পাকতে শুরু করেছিল কষ্টার্জিত বোরো। এরই মধ্যে কৃষকরা ঘরে ধান তোলার কাজেও নেমে পড়েন। তবে গত সোমবারের কালবৈশাখী ও ভারি শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের সব আশা ভেস্তে যেতে বসেছে। এখন শ্রমিক সঙ্কটের কারণে সে ধান ঘরে তোলা দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কষ্টের বোঝা বেড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের। জেলার পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, বাগমারা ও তানোরের কৃষকরা এখন ধান নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আদৌ ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে কৃষি শ্রমিক সঙ্কট। বেশি টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বুধবার জেলার তানোর, মোহনপুর ও পবা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে পাকা ধান নিয়ে কৃষকদের হতাশা। ধান পাকা শুরু করায় কেবল কাটা শুরু হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। এরইমধ্যে তা-ব চালিয়েছে কালবৈশাখী। এতে ক্ষেতের বেশির ভাগ ধান নুয়ে পড়েছে। তার ওপর ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে সেসব ধান। এলাকার অধিকাংশ মাঠের ধান এখন মাটিতে শুয়ে পড়েছে। আর ভারি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে অনেক এলাকার ধান। তানোরের কৃষকরা জানান, মাঠের ৮০/৯০ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। কৃষক যখন ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই হানা দেয় কালবৈশাখী। সঙ্গে ভারি বর্ষণ কৃষকের সব আশা ভেস্তে দিয়েছে। এদিকে তানোরের নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলের ৮০ ভাগ পাকা ধানই ডুবে গেছে। এসব ধান তোলার জন্য এখন কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার চান্দুড়িয়া এলাকার কৃষকরা জানান, পাকা ধানের ওপর দিয়ে এখন পানির স্রোত যাচ্ছে। এ অবস্থায় এসব পাকা ধান ঘরে তোলাই দায় হয়ে পড়েছে। ধান ঘরে তোলার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি টাকাতেও মিলছে না শ্রমিক। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক মাঠে পাকা ধান ফেলে বসে রয়েছেন। কৃষিশ্রমিক কাজে লাগিয়ে ঘরে তোলা সে ধানে উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা এ শঙ্কাও ভর করেছে কৃষকদের মনে। পাকা ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তানোরের শিব নদ অধ্যুষিত এলাকায়। এছাড়া বরেন্দ্রের উঁচু এলাকায় ধান কাটা শুরু হলেও ঘরে তোলার আগেই দুর্যোগের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারও আঙ্গিনায় মাড়াই চলছে। কেউ ভেজা ধান নিয়ে বসে রয়েছেন। জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা ও গোদাগাড়ী এলাকায় গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। তানোরের কৃষক আরমান আলী জানান, তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিন বিঘায় বোরো ধান করেছেন। ধানে পাক ধরেছে। কেবল কাটার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরইমধ্যে কালবৈশাখী আর শিলাবৃষ্টিতে তার সর্বনাশ হয়ে গেছে। অর্ধেক ধানও এখন তার ঘরে উঠবে কিনা এ নিয়ে হতাশ তিনি। আরমানের মতো বরেন্দ্রের কৃষকের ঘরে ঘরে এখন এমন কান্না চলছে। কৃষক জানান, এবার ধান কাটার মৌসুমেই কালবৈশাখীর হানায় শীষ থেকে ধান ঝরে পড়েছে। ঝড় হওয়ায় ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে। শিলাবৃষ্টিতে ধান ঝরে গেছে। ফলে ফলন অনেক কমে যাবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৭ হাজার ৪১১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। তবে বাজারে ধানের দাম ভাল থাকায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলনও ভাল হওয়ার আশা ছিল। তবে ধান তোলার মৌসুমের শুরুতেই কালবৈশাখীতে ফলন কিছুটা কমে যাবে। বিল এলাকার কৃষকরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।
×