ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অস্বাভাবিক রাগ ও আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১ মে ২০১৮

অস্বাভাবিক রাগ ও আত্মহত্যা

আত্মহত্যার কারণের মধ্যে বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক রোগকে দায়ী করা হয়, কিন্তু আমাদের চারপাশে দেখছি ভিন্ন চিত্র। আত্মহত্যার কারণের মধ্যে রাগ একটি ভাল সংখ্যা দখল করে আছে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। আর রাগ পারিবারিক এক নম্বর কারণ প্রতিদিন পত্রিকায় খুললেই দেখা যায় খুনাখুনি, মারামারি। বউ স্বামীকে মেরে ফেলছে। স্বামী বউকে মেরে ফেলছে অথবা রাগের মাথায় কেউ অন্যকে গুলি করছে। রাগ একটি ইমোশনাল বিষয়, যার বহির্প্রকাশ হয় বিভিন্ন মানুষের বিভিন্নভাবে। যেমন কেউ নিজের শরীরে আঘাত করে, কেউ অন্যকে আঘাত করে আবার কেউ বা আত্মহত্যা করে। কিন্তু এর প্রভাব পড়ে ব্যক্তির নিজের ওপর, পরিবারের উপর এবং সমাজের উপর। ঘটনা ১ : রহিমার বয়স ২৫ বছর। এই বয়সে ডিভোর্সি হয়েছে রাগের কারণে। স্বামীর একটি কথাকে মানতে না পেরে নিজ থেকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসলেন বাপের বাড়িতে। এখন কোথায় তার সন্তান, কোথায় তার স্বামী। ২. বাপের সাথে রাগ করে হঠাৎ কেরোসিন খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সুমী। ৩. প্রেমে ব্যর্থ হযে হাত কেটে উদাহরণ করে অনেকে। কমবেশি রাগ সবার মধ্যেই আছে কিন্তু এই রাগের কারণে কারও পড়াশুনা, কর্মকান্ড ও সংসার জীবনে ব্যাঘাত ঘটে তখন রাগ একটি সমস্যা এবং সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত। কি কি কারণে রাগ হতে পারে ১. ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা ২. বিষণ্ণতা নামক অসুখ ৩. সুচিবাই ৪. নেশাগ্রস্ত ৫. ঘুমের সমস্যা ৬. দীর্ঘদিন শারীরিক রোগে ভুগে থাকলে যৌন সমস্যা। ৭. বংশগত কারণে অনেকে রেগে যেতে পারে। খেলার মাঠে রাগে যার উৎপত্তি হয়। Trasfer arousal transfar হয়। ৮. বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে ৯. পারিবারিক অশান্তি ১০. পরিবেশের মধ্যে শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ। কেন রাগে : বিভিন্ন মতামত ১. প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে বায়োক্যামিনাল পদার্থ অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যা রোগীকে ব্যালেন্স করে রাখে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায়। ২. বাইরের মানসিক চাপের কারণে, শারীরিক অক্ষমতার কারণ, ব্যক্তিত্বের দুর্বলতার কারণে এগুলো হেরফের হয়, তখন মানুষের রাগ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ৩. মনোবিজ্ঞানী ফ্লরোডের মতে, রাগ জন্মগত কুঅভ্যাস। ৪. বিজ্ঞানী ডোনালের মিলনের মতে, Frustration lead to aggressive. ৫. সোস্যাল Learning থিওরির মত Reinforece and imitation বিভিন্নভাবে রাগকে লালিত করে ও বহিপঅ্রকাশ করেএ এজন্য সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সামাজিক ব্যবস্থা দায়ী। সব রাগই জন্মগত নয়। ৬. ফ্রয়েডের মতে মানুষ যেমন খায়, পান করে ও যৌন ক্ষুধা মিটায় তেমনি রাগ একটি বিষয় যা ক্ষণে ক্ষণে হতে পারে, যা ভিতরের ক্ষুখা মিটায়। মানুষের অবচেতন মনেই লুকিয়ে আছে আগ্রাসনের স্পৃহা। সভ্যতা শুধু একটা মুখোশ পরিয়ে সেই আগ্রাসন স্পৃহাকে লুকিয়ে রেখেছে। রাগের ক্ষতিকর দিকগুলি কি কি ১। শারীরিক ২। মানসিক ৩। অর্থনৈতিক ৪। সামাজিক ক্ষতি কি কি ক্ষতি হতে পারে ১. সংসারে অশান্তিু হয় ও সন্তান শিখে ফেলে। ২. সংসার ভেঙ্গে যায় ৩. হার্ট এ্যাটাক হয়। ৪. অন্যকে মেরে ফেলা। ৫. আত্মহত্যা বিষপান, মদ্যপানের অভ্যাস করা। ৬. হাত পা কাটা। ৭. ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া ৮. ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকা। ৯। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে রাগ তার জীবনকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। অনেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, নেশা করা শুরু করে, অনেকে রাগ করে বিয়ে করে ফেলে, রাগ করে খারাপ পথে চলে যায়। ১০। রাগ করে বাবা-মাকে প্রতিশোধ দেখাতে তার পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে ফেলে। এসবই পরিকল্পনাহীন বয়সের বহির্প্রকাশ। ১১। মহিলাদের ক্ষেত্রে রাগ সংসার চালানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে। ১২। মা-বাবার রাগ সন্তানের মানসিক বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ১৩। বাবাকে ভয়, পায় বলতে পারে না, বাবা বাসায় এলেই শিশুটির মাথাব্যথা। ১৪। সন্তানের সামনে হৈ চৈ করা, রাগারাগি করা, জোরে জোরে কথা বলা- শিশুরা এইসব আচরণ নকল করে অভিনয় করে তার মগজ দখল করে নেয়। রাগের উৎস কোথায় কি রক্তে কি মাথায় কি জীবনের মধ্যে এই বিভেদ এখনও পরিষ্কার নয়। তবে অনেক কিছুর সমন্বয়ে মানুষ রাগে। রাগ হচ্ছে রোগের লক্ষণ, পারমোনালিটির সমস্যার লক্ষণ, রাগ একটি উপসর্গ। কখনও রাগ উপকারে আসে কখন রাগ অপকারে আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতি করে। পরিণাম হয় অনেক খরাপ, দুঃখজনক, অনেক বেদনাজনক ও আপত্তিকর ভয়াবহ। রাসায়নিক বিশ্লেষণ সেরোটনিকের কমবেশি তারতম্য, ডোপামিনেক বেশি তারতম্য, এ্যাসিটাইমকলিনের তারতম্য, গাবার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন সহকারী অধ্যাপক- ০১৮১৭০২৮২৭৭
×