ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর সাড়ে ৬২ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ মে ২০১৮

এ বছর সাড়ে ৬২ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশকে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছে কোস্টগার্ড। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৬২ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে বাহিনীটি। তারপরও জনবলের অভাবে ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মাদক রোধ করা অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ভেতরে চাহিদা থাকায় নানা কৌশলে ইয়াবার চালান আনার চেষ্টা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। দেশকে মাদকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা বাস্তবায়নে বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দেশকে মাদকমুক্ত করার বিকল্প নেই। দেশকে মাদকমুক্ত করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ মেধাশূন্য হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে। সোমবার আগারগাঁও কোস্টগার্ড সদর দফতরে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এসব কথা বলেন। কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালক লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আর মারুফের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির মহাপরিচালক আরও বলেন, শুধু অভিযান চালিয়েই মাদকের আগ্রাসন বন্ধ সম্ভব নয়। মাদক ও জঙ্গীবাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রতিটি ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের বলতে হবে। ইয়াবার মতো মাদক কেন মানুষ সেবন করছে, তা খুঁজে বের করা দরকার। এক্ষেত্রে গবেষণা করে সুস্পষ্ট প্রচার চালানো জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় দেশ ও জ াতি পিছিয়ে যাবে। কোস্টগার্ডের প্রতিটি সদস্যকে মাদকের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা মনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদকের ক্ষেত্রে কারও আপোস করার সুযোগ নেই। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে কোস্টগার্ড সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাবে। মহাপরিচালক বলেন, অভিযানের ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ৬২ লাখের বেশি ইয়াবা জব্দ হয়েছে। কোস্টগার্ডের শক্তিশালী গোয়েন্দা বিভাগ নেই। থাকলে ইয়াবা উদ্ধারসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে বাহিনীটি আরও সাফল্য দেখাতে পারত। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যেসব ব্যক্তি গোপন সংবাদ আদান-প্রদান করে তারা অনেক সময়ই সঠিক সংবাদ দেয় না। যারা তাদের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করে তারা আরও কঠোর গোপন সংবাদ পেয়ে থাকে। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর শত শত মাছধরা নৌকার মাধ্যমে ইয়াবা আদান-প্রদান হওয়ায় শতভাগ নিশ্চিত তথ্য ছাড়া অভিযান চালানোর কোন উপায় থাকে না। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ইয়াবা জব্দের ঘটনাও ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। অর্থাৎ দেশের ভেতরে মাদকের চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি থাকলে সরবরাহ বেড়ে যায়। এজন্য বেশি ধরা পড়ছে। তাই সবাই মিলে মাদক নির্মূল বা প্রায় শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে জাতির ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়তে পারে। নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে আর বাস্তবে রূপ লাভ করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্রের ব্লু ইকোনমিক জোন রক্ষা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান, ডাকাতি দমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষাসহ যেসব বিষয়কে মাথায় রেখে ১৯৯৫ সালে বাহিনীটি সৃষ্টি করেছেন, তাও বাস্তবায়িত হবে না। প্রধানমন্ত্রী স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী তিনস্তরে কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করেছেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর এখন ঝুঁকিমুক্ত সমুদ্রবন্দর হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেশে মাদকসহ সব ধরনের অপরাধ নির্মূলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
×