ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এভাবে মানুষ মরতে পারে না, ট্রাফিক আইন পরিবর্তন দরকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ মে ২০১৮

এভাবে মানুষ মরতে পারে না, ট্রাফিক আইন পরিবর্তন দরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ট্রাফিক আইন পরিবর্তন করা দরকার। একই সঙ্গে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে যে দন্ড রয়েছে তা সময়পযোগী নয়। দেশের লোক যদি মনে করে ট্রাফিক ল’ পরিবর্তন হওয়া দরকার,পরিবর্তন হবে। কেউ যদি মনে করে প্রয়োজন নেই, তাহলে হবে না, মানুষ মরতে থাকবেই, মরুক। লাইসেন্স ছাড়া চালিয়ে যদি এটুকু (শাস্তি ) হয় তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার গরজ তেমন কেউ বোধ করবে না। আমাদের মনোভাবও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। গাড়ির যে মালিক তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। যে বিচারক ৪০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছেন তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। কমার্শিয়াল কোর্ট, কমার্শিয়াল ডিসপিউট ও আরবিট্রেশন নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক আরবিট্রেশন সিঙ্গাপুরে চলে যায়। আমাদের দেশের আরবিট্রেশন কোর্ট আরও উপযোগী করা জরুরী। সোমবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ল’ কমিশনের সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, ইদানীং তো আরও একটা নতুন দেখছি, এক গাড়ি আরেক গাড়ির ওপর উঠিয়ে দিচ্ছে। যেটা আজকাল আসা-যাওয়ার সময় দেখি। সড়ক দুর্ঘটনা কীভাবে বাড়ছে! মানুষের পা চলে যাচ্ছে, হাত চলে যাচ্ছে, মাথা চলে যাচ্ছে। এভাবে তো কোন সভ্য দেশ চলতে পারে না। এজন্যই দরকার আইনের পরিবর্তন। ‘কমার্শিয়াল (বাণিজ্যিক) কোর্ট, কমার্শিয়াল ডিসপিউট (বাণিজ্যিক বিরোধ) ও আরবিট্রেশন (শালিস) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক আরবিট্রেশন সিঙ্গাপুরে চলে যায়। আমাদের দেশের আরবিট্রেশন কোর্টকে আরও দক্ষ হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি আইন চেঞ্জ করার জন্য ইতোমধ্যে ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু হয়েছে। আরবিট্রেশন এ্যাক্ট (শালিস আইন) আরও কার্যকর হওয়া দরকার, যাতে অল্প সময়ের মধ্যে কম খরচে আরবিট্রেশন হতে পারে। তিনি বলেন, দেশে যত বিনিয়োগ বাড়বে তত কমার্শিয়াল ডিসপিউট (বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিরোধ) বাড়বে। ডিসপিউট বাড়লে হয় কোর্টে যাবে, নয় আরবিট্রেশনে যাবে। আমাদের দেশের কোর্ট সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) আন্ডারে (অধীনে)। এখানে কমার্শিয়াল ডিসপিউট রিজলভ (সমাধান) করতে গেলে অনেক সময় লাগে। কমার্শিয়াল কোর্ট কীভাবে যুগোপযোগী করা যায়, নতুন কোর্ট করার প্রয়োজন আছে কিনা- এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছি। কারণ, চীফ জাস্টিসের মতামত গুরুত্ব বহন করে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ট্রাফিক আইন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এটি চেঞ্জ হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের লোক যদি মনে করে ট্রাফিক আইন পরিবর্তন হওয়া দরকার, পরিবর্তন হবে। আর যদি দেশের লোক মনে করে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, তাহলে হবে না। মানুষ মরতে থাকবেই। কেন পরিবর্তন দরকার, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজই আমার একটি সাক্ষাতকার কালের কণ্ঠে বেরিয়েছে। তাতে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করেছি। যেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ গাড়ি চালায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা। কার্যত অনেক সময় দেখেছি, তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ৪০০ টাকা জরিমানা। লাইসেন্স ছাড়া চালিয়ে যদি এটুকু পেনাল্টি (শাস্তি ) হয় তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার গরজ তেমন কেউ বোধ করবে না। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক বলেন, ইদানীং তো আর একটা নতুন জিনিস দেখছি, এক গাড়ি আরেক গাড়ির ওপর উঠিয়ে দিচ্ছে, যেটা আজকাল আসা-যাওয়ার সময় দেখি। সড়ক দুর্ঘটনা কীভাবে বাড়ছে! মানুষের পা চলে যাচ্ছে, হাত চলে যাচ্ছে, মাথা চলে যাচ্ছে। এভাবে তো কোন সভ্য দেশ চলতে পারে না। এজন্যই দরকার আইনের পরিবর্তন। তবে কেবল শাস্তি বাড়িয়েই হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটার (আইনের) এনফোর্সমেন্টও (প্রয়োগ) প্রয়োজন। আমাদের মনোবৃত্তি-মনোভাব, এটাও চেঞ্জ করা প্রয়োজন। গাড়ির যে মালিক তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। যে বিচারক ৪০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছেন তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। আইনের পরিবর্তন বড় প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
×