ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আটক ৪ জন ও বিএনপির ১৭ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ

ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলায় অংশ নেয় দুই শতাধিক দুর্বৃত্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ মে ২০১৮

ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলায় অংশ নেয় দুই শতাধিক দুর্বৃত্ত

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাই, সন্ত্রাসের ঘটনায় অংশ নিয়েছে দুই শতাধিক বহিরাগত দুর্বৃত্ত। দেশব্যাপী নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলাই ছিল ভিসির বাসভবনে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর উদ্দেশ্য। সেই রাতের আঁধারে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বহিরাগত দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা, মদদদান ও উস্কানির জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের দিকেই সন্দেহের তীর। ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুর মামলায় গ্রেফতার হওয়া আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রসহ বহিরাগত ৪ জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি। রাজধানীর বাংলামোটরের একটি ভবনে রবিবার সন্ধ্যায় গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময় গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগরীর বিএনপির ১৭ নেতাকে কোটা আন্দোলনে বহিরাগতদের পৃষ্ঠপোষকতা, মদদদান ও উস্কানির কানেকশন আছে কিনা সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব (২৬), মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ (২৫), আলী হোসেন শেখ ওরফে আলী (২৮) ও আবু সাইদ ফজলে রাব্বী ওরফে সিয়ামকে (২০) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রবিবার দুপুর একটার দিকে চানখারপুল থেকে তাদের গ্রেফতারের পর রাকিবুল হাসানকে ৪ দিন, আলী হোসেনকে ৩ দিন, মাসুদ আলম ও আবু সাঈদকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবি পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত। গ্রেফতারদের মধ্যে মাসুদ আলম আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। বাকি তিন জনের মধ্য একজন গাড়ি চালক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শরবত বিক্রেতা ও অপরজন ওষুধের দোকানে কাজ করেন। গ্রেফতাররা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, বহিরাগত। আরও দুই শতাধিক বহিরাগত ভিসির বাসভবনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে অংশ নিয়েছে, যাদের অনেককেই ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিসির বাসভবনে লুটপাট হয়ে যাওয়া মাল উদ্ধারের জন্য ও লুটপাটে অংশগ্রহণকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে উপাচার্যের বাসভবন থেকে চুরি হওয়া দুটি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রাকিবের নামে বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরে ৫টি মামলা রয়েছে। তারা কেন রাতের আঁধারে ভিসির বাসভবনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগে অংশ নিয়েছে, মোবাইল ফোন দুটি ছিনিয়ে নিয়েছে কেন, আর কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা, মদদদান ও উস্কানি দিয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভিসির বাসভবনে হামলার অভিযোগে বহিরাগত যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সিসিটিভি ও কলরেকর্ড পরীক্ষা করে শনাক্ত করা হয়েছে। যেই দুটি মোবাইল ফোন তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তা হচ্ছে, ভিসির বাসভবনের দারোয়ানদের মোবাইল ফোন। হামলার সময় কারা ক্যাম্পাসের ছাত্র আর কারা বহিরাগত তা বের করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সব প্রবেশপথ এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার গভীর রাতে নিউমার্কেট মোড়সহ কয়েকটি এলাকা দিয়ে কয়েক শ’ লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিল। রাত সোয়া ১টায় পূর্বদিক থেকে একদল মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে। ভিসির বাসভবনের দেয়াল টপকে হামলাকারীরা উপরে উঠে সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে তারপর সন্ত্রাসের তা-ব চালায়। হামলার আগে মেয়েদের একটি মিছিল ভিসির বাসার সামনে যায়। হামলাকারীদের মধ্যে শতাধিক জনের হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ভেতরে ঢুকেই আলোবাতি ভেঙ্গে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। ভিসির বাসায় হামলাকারীদের মধ্যে কারও কারও গায়ে লেখা টি-শার্ট ছিল। এ ছাড়া কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেছে। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিসির বাসায় সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ঘটনার সঙ্গে যারা হামলার আগে-পরে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছে তাদের শনাক্ত করছে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগ। ভিসির বাসভবনের সামনের সিসিটিভির ফুটেজ ভেঙ্গে ফেলা হলেও ক্যাম্পাসের ভেতর ও প্রবেশপথের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নীলক্ষেত মোড়সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে ঢাবিতে ঢুকেছে হামলাকারীরা। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও প্রবেশপথের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। এসব ফুটেজ, কলরেকর্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়া বহিরাগত চার জনকে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় যেসব বহিরাগত অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে, আবার কেউ স্বেচ্ছায়, অনেককে ভাড়া করে আনা হয়েছে, আবার রাজনৈতিক উদ্দেশে অনেককে উস্কানি দেয়া হয়েছে বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাজধানীর বাংলামোটরে রবিবার বিকেলে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময় ঢাকা মহানগরীর বিএনপির যে ১৭ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কোটা আন্দোলনের সময় বহিরাগতদের হামলায় অংশ নেয়াতে পৃষ্ঠপোষকতা ও উস্কানি দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত বিএনপির ১৭ নেতা কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সহিংস আন্দোলনের প্রস্তুতি এবং গাজীপুর ও খুলনার মেয়র নির্বাচনে সন্ত্রাস চালিয়ে নৈরাজ্য ও নাশকতা চালানোর জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এই ধরনের তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতেই রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে বৈঠক করার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এম শামসুল হুদা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সহসভাপতি ইউনুছ মৃধাসহ দলের ১৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গোপন বৈঠকে সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলার জন্য ছক কষেছিল এমন অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
×