ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মে দিবস

নারী শ্রমিকরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১ মে ২০১৮

নারী শ্রমিকরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ৩০ এপ্রিল ॥ লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিবারির আবেদ আলীর স্ত্রী জামিলা খাতুন স্বামী নিয়ে কাজ করে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একটি চাতাল কলে। সারাদিন রোদে পুড়ে দৈনিক মজুরি পায় ১৬৬ টাকা। অপরদিকে একই কাজ করে একজন পুরুষ মজুরি পায় ৪৬৫ টাকা। জামিলার মতো চাতাল কলে কাজ করে শেফালী আক্তার হালিমা আক্তার রোকসানা পারভীন আক্তারসহ উপজেলার ২০টি চাতাল কলে প্রায় তিনশত নারী শ্রমিক কাজ করে। একই চিত্র ইট ভাটার নারী শ্রমিকদের বেলাও। তাই বলা যায় নারী শ্রমিকরা কতটা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। জানা যায়, অপ্রান্তিক খাতগুলোর নারী শ্রমিকরা এখনও পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম মজুরি পাচ্ছে। আবার নারী শ্রমিকদের সব কাজে নিয়োগ করতে চায় না মালিকপক্ষ। করলেও মজুরি কম দেয়। প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও চুক্তিভিত্তিক কাজে নারীরা কম মজুরি পাচ্ছে। জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের সমান মজুরি দেয়ারও বিধান রয়েছে। যোগ্যতা সমান থাকলে কাজ ও মজুরি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ রাখা যাবে না। কিন্তু জাতিসংঘের এই বিধানটি বাংলাদেশে এখনও চালু হয়নি। বিষেশত স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় নারীরা কর্ম ও মজুরির ক্ষেত্রে এখনও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। বিশ্ব ব্যাংক পরিচালিত ‘নারী ব্যবসা এবং আইন ২০১২’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৈনন্দিন কাজের ৬৬ শতাংশ করে নারীরা। খাদ্যের ৫০ শতাংশ তারা উৎপাদন করে। অথচ তারা কর্মের মজুরি পায় ১৩ শতাংশ। বাকি ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই তারা কোন মজুরি পায় না। ফলে নারীরা সম্পদের দিক থেকেও এগোতে পারছে না। বিশ্বের ১৪১টি দেশের ওপর গবেষণা করে বিশ্ব ব্যাংক এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সূত্রমতে সর্বশেষ শ্রমজরিপ অনুযায়ী ২০১০ সালে দেশে কৃষি কাজে নিয়োজিত ২ কোটি ৫৬ লাখ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ ছিল নারী। দিনমজুরি থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশি। তাদের বিষয়ে নজর দেয়া গেলে জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ঢাকা জেলার সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব জুয়েল বলেন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো না থাকায় নারীদের কম মজুরি দিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদারকি জরুরী। তা না হলে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য কমবে না। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ২০ লাখ গৃহশ্রমিক কাজ করছে। যার অর্ধেকের বেশি কোন বেতন পায় না। আর এর বেশির ভাগই নারী। অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে যেখানে পুরুষ শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা, সেখানে নারী শ্রমিক পাচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া ইটভাঁটি, পোশাক শিল্প, কৃষিকাজ, নির্মাণ কাজ, গৃহশ্রম ও চাতালের কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক কোন কাজেই নারীরা পুরুষের সমান মজুরি পায় না। সারা দেশেই চাতাল ও ইটভাঁটির নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এসব নারী শ্রমিক দৈনিক গড়ে ২৫-৪৫ শতাংশ কম মজুরি পাচ্ছেন। এসব চাতাল শ্রমিকের ৬০ শতাংশই নারী। ধান পরিষ্কার করা, বয়লারে তুষ দেয়া, ধান সেদ্ধ ও শুকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় নারী শ্রমিকদের। অথচ পুরুষ শ্রমিকদের সমান কাজ করেও তাদের তুলনায় মজুরি কম।চাতালে কাজ করে নারীরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে ভালভাবে বাঁচার সুযোগ নেই নারী শ্রমিকদের। সারা দিন কাজ করে মজুরি হিসেবে যা পান, তা দিয়েই পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়। এই যুগে এটা মোটেও কাম্য নয়। নারী শ্রমিক হালিমা আক্তার বলেন, কাজের ক্ষেত্রে মজুরি কমবেশি জেনেও কাজ করছে তারা। পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করলেও কখনও কখনও চাতাল মালিক ঠিকাদার অথবা সর্দারের হাতে নিগৃহীত হতে হয় তাদের। অনেক সময় নারী বলে কাজেও নিতে চায় না। কাজের ধরন অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করা হলেও পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কম মজুরি পায় নারী শ্রমিকরা।
×