ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নূপুরের ছন্দে নৃত্যাঞ্চলের নৃত্য দিবস উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

নূপুরের ছন্দে নৃত্যাঞ্চলের নৃত্য দিবস উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৃত্যপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম। পুরো ভবনজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে নূপুরের ছন্দ। কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির তীব্রতা উপেক্ষা করে নৃত্যের ছন্দে নিজেদের প্রাণিত করতে অগণিত দর্শকের সমাগম ঘটে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজায়। দেশের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, ভরতনাট্যম ও কত্থকসহ বিভিন্ন কালজয়ী গানের সঙ্গে একেরপর এক এসব দৃষ্টিনন্দন নৃত্যে দর্শক মুগ্ধ হয়। প্রধান প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত সাজানো হয়েছে উৎসবের সাজে। আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের কর্মসূচীতে রবিবার বর্ণিল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নৃত্যাঞ্চল। এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে সব নৃত্য পরিবেশেন করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এর আগে নৃত্যাঞ্চল পারফর্মিং আর্টস একাডেমির আন্তঃক্লাস নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী কাজল ইব্রাহীম। এ পর্বে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারস্বরূপ বই তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। পুরস্কার প্রদান শেষে শুরু হয় নৃত্যানুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক শিশুরা। রবীন্দ্রনাথের ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’ গানের সঙ্গে তাদের অসাধারণ নৃত্যে মুদ্ধ হয় দর্শক। সবাই মুহুর্মুহু করতালিতে উৎসাহ যোগায় তাদের। আয়োজনের তৃতীয় ও শেষ পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যায়। ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে দলীয় নৃত্য দিয়ে শুরু হয় এ পর্ব। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। এরপর সোহেল ভুঁইয়ার পরিচালনায় প্রারম্ভিক ক শাখার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য। নজরুলের ‘মোমের পুতুল’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে প্রারম্ভিক খ শাখার শিক্ষার্থীরা। এ গানের নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও আয়েশা সিদ্দিকা এলি। জেনিফার ডলি গমেজের পরিচালনায় জুনিয়র দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে সারদা কাট্টুবাম ভরতনাট্যম। পরে বিভিন্ন শাখার শিক্ষার্থীরা একে একে যেসব গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে এগুলো হচ্ছে- সৃজন ছন্দে, আয় ছেলেরা, সোনা সোনা সোনা, রাঙা বউ, লিলাবালী, ও দক্ষিণা, বরষা, বাহাহাল করিয়া, নাচে শ্যামা, ঝিকুর ঝিকুর, বাজাও বাঁশী, কলকল ও সোহাগ চাঁদ। অনুষ্ঠানে শিবলী মোহাম্মদের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় কত্থক নৃত্য। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে এ দিবস। নীলফামারীতে খেলাঘর শিশু আনন্দমেলা ॥ সকাল থেকে দিনভর শিশু-কিশোরদের কোলাহল। কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন আর নাচ-গানে ভরপুর। কানায় কানায় পূর্ণ অনুষ্ঠানস্থল। “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রবিবার নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এমন আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে খেলাঘর শিশু আনন্দ মেলা। ওই আনন্দ মেলার প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। হালকা বৃষ্টির বিরূপ আবহাওয়া, থেমে থাকেনি শিশুরা। সকাল ১০টার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের পাঁচশ আসন পূর্ণ। এরপর সকল প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে মঞ্চে চলে কবিতা আবৃত্তি, তারই পেছনের একটি অংশে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে বেলা গড়িয়ে দুপুর একটা। আগমন ঘটে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের। শিশুদের উল্লাসের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শিশুদের অভিনন্দন গ্রহণ করে তার বক্তৃতায় বলেন, এতো অত্যাচার, এতো নিপীড়ন তারপরেও বাঙালী জাতি মাথা নত করেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার, গরিব-দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর। আমাদেরকে সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে জন্য যুদ্ধটা হয়েছিল, যে জন্য এতো মানুষ জীবন দিয়েছিলেন, এতো মা বোন নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদেরকে লেখাপড়া করতে হবে, অনেক গল্পের বই পড়তে হবে, ছবি আঁকতে হবে, নাচ শিখতে হবে, অভিনয় করতে হবে, আবৃত্তি করতে হবে, খেলাধুলা করতে হবে, ফুলের বাগান করতে হবে। নিজের বাড়ি, নিজের শহর পরিষ্কার রাখতে হবে। এই কাজগুলো করার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারব, আমরা একসঙ্গে চলতে শিখব, আমরা মানুষকে ভাল বাসতে শিখব, সবাই ভাল থাকুক, সবার জীবন সুন্দর হোক এমন প্রত্যাশায় সবাইকে নিয়ে আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ, একটা সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারব। শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা এমন মানুষ হও, যে মানুষগুলোকে সারা পৃথিবী চিনবে, আর বলবে বাংলাদেশের মানুষের মতো সুন্দর মানুষ কোথাও নাই। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নীলফামারীর শিশু-কিশোর সংগঠন নবকলি খেলাঘরের আয়োজনে সংগঠনের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি কাজী এ.এম জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই আনন্দমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ্ পলাশ। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, খেলাঘর জাতীয় পরিষদের সদস্য আমিনুল হক, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুল ইসলাম রিন্টু, শিশু আনন্দ মেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহসান রহিম মঞ্জিল, নীলফামারী নবকলি খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক আফরোজা বিনতে আজিজ গ্লোরী প্রমুখ। এর আগে শিল্পকলা একাডেমির সামনে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও বেলুন, শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ান অতিথিরা। সকালে শিল্পকলা একাডেমি চত্বর থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীমের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আনন্দমেলায় মিলিত হয়। বিকেলে সেখানে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শিশু আনন্দমেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহসান রহিম মঞ্জিল জানান, রাজশাহী, জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা এবং নীলফামারী জেলার সদর, ডোমার, জলঢাকা ও সৈয়দপুর উপজেলা খেলাঘরের প্রতিনিধিরা অংশ নেয় শিশু আনন্দমেলায়।
×