ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী কর্মীদের সুরক্ষায় সৌদিতে নির্মিত হচ্ছে গেস্ট হাউস

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

নারী কর্মীদের সুরক্ষায়  সৌদিতে নির্মিত  হচ্ছে গেস্ট হাউস

ফিরোজ মান্না ॥ নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ ‘গেস্ট হাউস’ নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে নারী কর্মীরা কোন প্রকার সমস্যায় পড়লে বা নির্যাতনের শিকার হলে তারা ১৫ দিন পর্যন্ত ওই গেস্ট হাউসে থাকতে পারবেন। গেস্ট হাউস থেকে নারী কর্মীরা ইচ্ছে করলে নতুন মালিকের অধীনে চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। দেশে ফিরে আসারও সুযোগ পাবেন। এই ঘোষণার পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বিদেশগামী নারী কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত কল্পে সরকার কোন আপোস করবে না। বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। বিদেশগামী নারী কর্মী কোন প্রতারণার বা হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশে দারিদ্র দূরীকরণে বিদেশে নারীর কর্মসংস্থানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রেমিটেন্স অর্জনে নারী কর্মীরা ব্যাপক অবদান রাখছে। নারীরা যে বিদেশে কাজ করছে সেখানে তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাস্তবে যে সকল সমস্যা নারী অভিবাসনে রয়েছে তা সরকার মোকাবেলা করছে। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে। ‘টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপদ নারী অভিবাসন’ না হলে নারী কর্মীরা নিরাপদ থাকতে পারবে না। শুধু সৌদি আরবই নয়-অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও নারী কর্মীদের নিরাপদ রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি গৃহকর্তাদের বিরুদ্ধে নারী কর্মীদের নির্যাতনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নারী কর্মীরা এক সময় দেশটিতে নিজেরাই যেতে চাইবে না। বিষয়টি তারাও জানেন। এ কারণে নারী কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে গেস্ট হাউস। কোন নারী কর্মী যদি সমস্যায় পড়েন বা নির্যাতনের শিকার হন তাহলে ওই কর্মী গেস্ট হাউসে গিয়ে থাকতে পারবেন। ১৫ দিন বিনা টাকায় গেস্ট হাউসে খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর যদি সে অন্য কোথাও কাজ নিতে চান সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। আর যদি সে দেশে ফিরতে চান সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এমন ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। জানা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশী নারী কর্মীদের যেসব সমস্যা রয়েছে তা সৌদি সরকার সমাধানের জন্য কাজ করছে। কর্মীদের মালিকের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মালিক যদি কোন সমাধান না দেন সেক্ষেত্রে নতুন মালিকের অধীনে কর্মসংস্থান নিতে পারবেন। অভিবাসন খরচ কমানোর জন্য ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করতে হবে। ভিসা ট্রেডিং এর সঙ্গে কোন সৌদিবাসী যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরবে অবস্থানরত কোন বাংলাদেশী কর্মীর মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা এবং মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা দ্রুত পরিশোধ নিশ্চিত করা হবে। এদিকে, সৌদি আরবে নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন নারী কর্মীদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর আগে বেশ কয়েকটি সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় নারী কর্মীরা মানসিক শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসছেন। এমন ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ এমন দাবিতে ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনটি বিদেশে যেসব নারী কর্মী গিয়েছে এবং যাবেন তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা কর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজর রাখার জন্য আহ্বান জানায়। অভিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। কর্মীরা এখন আর আগের মতো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। সরকার জনশক্তি রফতানিকারকদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইড লাইনের বাইরে কারও কোন কিছু করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষা দেয়ার বেলায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি গাইড লাইন তৈরি করেছে। এই গাইড লাইনে নারী কর্মীদের সুরক্ষা বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।
×