ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোন সিন্ডিকেটের কথায় ছাত্রলীগ চলবে না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

কোন সিন্ডিকেটের কথায় ছাত্রলীগ চলবে না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে’- এমন অভিযোগ করে বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আটকে থাকার কথা বলে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। বেগম জিয়া অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কাগজপত্র কেন যাবে? রবিবার টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেদের দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন নতুন ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা নিয়ে তাদের রাজনীতি করা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ছাত্রলীগকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, কারো পকেটের লোক দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি হবে না। আগামীতে কোন সিন্ডিকেটের কথায় ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্রলীগ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে। এর বাইরে চিন্তা করার কোন অবকাশ নেই। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। সম্মেলন পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপির মিথ্যাচারের সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়াকে আদালত জেল দিয়েছে। জেলকোড খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেবে। তাকে দেখার জন্য সুচিকিৎসক, জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকরা আছেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা তাকে নিয়ে যে মিথ্যাচার করছেন তাতে জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করলে যে সার্টিফিকেট দেবেন, সেখানে সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ এই চিকিৎসকরা চিকিৎসার প্রকৃত চিত্রটা না বলে রাজনৈতিকভাবে একটা রাজনৈতিক সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে, এটা কি গ্রহণযোগ্য? সত্যিকারের যে চিত্র, এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এখানে সরকারের অমানবিক হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর শেখ হাসিনার সরকার অমানবিক সরকার নয়। তারা আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন, তার পাল্টা ব্যবহার কিন্তু আমরা করিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আটকে থাকার কথা বলে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। বেগম জিয়া অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কাগজপত্র কেন যাবে? আসলে তারা (বিএনপি) মিথ্যার ওপর ভর করে রাজনীতি করে, সব জায়গায় মিথ্যাচার করে। এমন একটা ভাব যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাগজ গেছে, তিনি সই করলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাবে। তাতে কি বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে যাবেন? ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে কোন লাভ নেই। খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন আদালতের রায়ে। সেটা নিয়েও তারা রাজনীতি করছেন। যেন সরকারই খালেদা জিয়াকে দন্ড দিয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) দন্ডও দেইনি, আমরা তাকে দন্ড থেকে মুক্তিও দিতে পারব না। দেশের আইনানুযায়ী এ বিষয়টির নিষ্পত্তি আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই ছাত্রলীগকেও রাজনৈতিক আদর্শের মহাসড়কে ফিরে আসতে হবে। সুনামের ধারায় ফিরে আসতে হবে। ছাত্রলীগকে তার অতীতে ফিরে আসতে হবে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতৃত্ব হতে হবে ছাত্রলীগারদের। ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে করে তিনি আরও বলেন, ‘নেতা বানিয়ে যাবেন, কিন্তু আপনি (ছাত্রলীগ নেতা) যখন বিদায় নেবেন, নতুনরা আপনাদের কি চোখে দেখবে সেটাও ভাববেন। চলে গেলে বা বিদায় নিলে অনেকেই অনেক কিছু ভুলে যায়। দুঃসময়ে টাকা পয়সার কর্মী থাকবে না, আদর্শের কর্মীরাই থাকবে। জবরদস্তি করে অযোগ্যকে নেতা বানালে দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরগাছারা যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারে সেদিকে খেলার রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে উদ্দেশে করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সোহাগ-জাকির তোমরা ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছ। তোমাদের বলব ভাল এবং যোগ্য নেতৃত্ব বানিয়ে যাও, তাহলে সবাই মনে রাখবে। বাংলাদেশ অকৃতজ্ঞ নয়, যোগ্যদের মর্যাদা দিতে সবাই জানে। সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে হলে যোগ্য, সাহসী, চরিত্রবান নেতা দরকার। আমি বর্তমান কমিটির অর্জনকে অস্বীকার করছি না। যারা সাবেক হবে সব নেতাকে আমরা নেতা বানাব। সব নেতাকে আমরা উপকমিটিতে স্থান দিব। আমি কথা দিলাম, তোমরা কেউ যদি তাতেও স্থান না পাও, তাহলে আমার সঙ্গে কাজ করবে। কর্মীর মূল্যায়ন আওয়ামী লীগ করতে জানে। শেখ হাসিনা যতক্ষণ আছেন, যোগ্য কর্মীর মূল্যায়নও ততদিন থাকবে।
×