ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে চাই সহনশীল অবকাঠামো

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে চাই সহনশীল অবকাঠামো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগ ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা ৩০ অধিকারভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, এনজিও এবং নেটওয়ার্ক। রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ স্মরণ : দুর্যোগ ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে’ শীর্ষক এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালে মানবিক কর্মকা- বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফলাফলের আলোকে দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতিসংঘ সংস্থা ও আইএনজিওদের সরাসরি প্রকল্প পরিচালনা থেকে সরে আসার এবং এক্ষেত্রে স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব¡ প্রদানে সুযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়। এই মানববন্ধনটি যৌথভাবে আয়োজন করে কোস্ট ট্রাস্ট, জাতীয় কৃষাণী শ্রমিক সমিতিসহ ৩০ সংগঠন। কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন একই সংস্থার সহকারী পরিচালক শওকত আলী টুটুল। বক্তব্য রাখেন অর্পণের আব্দুল কাদের হাজারী, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান, ডিজাস্টার ফোরামের তাজুল ইসলাম এবং বিডিপিসির লাইলা কবির। শওকত আলী টুটুল বলেন, দেশে এখনও দুর্যোগ এবং জলবায়ু সহনশীল তেমন কোন অবকাঠামো তৈরি হয়নি। একটি দেশের উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধির জন্য মেট্রোরেল, বিদ্যুত, সেতু, ফ্লাইওভার, চারলেনে রাস্তা, বহুতল ভবন, এক্সপ্রেসওয়ে অবশ্যই দরকার আছে, কিন্তু দুর্যোগপ্রবণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে আক্রান্ত একটি দেশের জন্য দুর্যোগ এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আব্দুল কাদের হাজারী বলেন, প্রলয়ঙ্করী এই ধ্বংসযজ্ঞের ২৭ বছর পার হলেও এখনও স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি বরং বাড়ছে আতঙ্ক। ক্ষতি না কাটতেই উপকূলে সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, নাডা ও কোমেন নামক সাইক্লোন একের পর এক আঘাত হানছে উপকূলে। দিশাহারা উপকূলের জনগণ, নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে মোকাবেলা করছে এগুলোর। তিনি চরের মানুষের উপযোগী জীবিকায়ন কর্মকা-ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর দাবি করেন। জায়েদ ইকবাল খান বলেন, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ভোলা, মনপুরাসহ দ্বীপের চারপাশে অরক্ষিত হয়ে আছে অনেক বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর জোয়ার ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় দ্বীপের শত শত একর জমির ফসল। সাগরে লঘুচাপ, নি¤œচাপ কিংবা মেঘ দেখলেই আতঙ্কে চমকে ওঠেন উপকূলবাসী। তিনি উপকূলীয় এলাকায় লোনা পানির অনুপ্রবেশ রোধ এবং মিঠা পানির বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান। বিডিপিসির লাইলা কবির বলেন, পাহাড়ী এলাকাসহ সারা দেশে এখন ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির সঞ্চয় বৃদ্ধি এখনই গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভয়াবহ পানি সঙ্কটে পড়বে। তিনি চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বেশিসংখ্যক কমিউনিটি রেডিও অনুমোদন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যাতে অতি সহজে আবহাওয়া সংবাদ ও বিপদ সংকেত মানুষের নিকট পৌঁছানো যায়। ডিজাস্টার ফোরামের তাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন প্রায় প্রতিবছরই সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে নৌকা ডুবে যায় এবং অনেক জেলে নিখোঁজ হয়। উপকূলজুড়ে এমন নিঃস্ব পরিবার অনেক পাওয়া যায়। কিন্তু সঠিকভাবে এসব নৌকা ও জেলেদের নিবন্ধন না থাকার কারণে জেলে পরিবারগুলো সরকারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি নৌকার মালিক নিখোঁজ জেলেদের কোন দায়দায়িত্ব নিতে চায় না। তিনি উপজেলা প্রশাসনকে কর্তৃত্ব দিয়ে জেলে নৌকার রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। সঞ্চালক মোস্তফা কামাল তার সমাপনী বক্তৃতায় জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো দুর্যোগ মোকাবেলায় সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ ও আইএনজিওদের ২০১৬ আন্তর্জাতিক মানবিক কর্মকান্ড বিষয়ক সম্মেলনের গ্রেন্ড বারগেইনে তাদের নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
×