ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিনিয়োগের অনুকূলে থাকায় সম্প্রতি মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে ফিরেছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে কিছুটা বাড়ছে এসব শেয়ারের দর। কিন্তু এর পাশাপাশি বাড়ছে কিছু অখ্যাত কোম্পানির শেয়ারের দর, যে তালিকায় রয়েছে কিছু ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিও। কোন কারণ ছাড়াই এসব শেয়ারের দর বাড়ছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে অতিমূল্যায়িত হয়ে এসব শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোর দিকে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসইসি, যার জের ধরে সম্প্রতি ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, স্টাইল ক্রাফট, মুন্নু সিরামিক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, রহিমা ফুড, মেঘনা পিইটি ও হাক্কানী পাল্পসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়ছে। এছাড়া জুট স্পিনার্সসহ বিভিন্ন খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ২০১০ সালে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই ক্রয় করেছিলেন অতিমূল্যায়িত শেয়ার। পরবর্তী সময়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় ওইসব বিনিয়োগকারীকে। কেউ কেউ যার খেসারত এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের আগের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। বাজারে ভাল থাকলে তারা সবসময়ই এ সুযোগ নিতে চায়। যেহেতু এরা নিয়মের মধ্যে থেকেই সব কর্মকা ঘটায়, তাই এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াও মুশকিল। তাই এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। প্রাপ্ত তথ্যমতে গত একমাসের ব্যবধানে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। একমাস আগে এ শেয়ারের দর ছিল ৮২ টাকা, সর্বশেষ যা লেনদেন হয় ১০৬ টাকায়। তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি মেঘনা পিইটির শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ছিল ২৬ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এসব শেয়ারের দর ছিল ২২ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বেড়েছে ২০ শতাংশ। এছাড়া গত একমাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি। একমাস আগে এ শেয়ারের দর ছিল ৭৮৭ টাকা। সর্বশেষ যে শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৮৬ টাকা। একইভাবে বেড়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, স্টাইলক্রাফটসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে হাক্কানী পাল্পের শেয়ারের দর ১৭ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের শেয়ার ১৭ শতাংশ ও রহিমা ফুডের শেয়ারের দর বাড়ে প্রায় ২১ শতাংশ। আর ১০ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পায় মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলসহ আরও কিছু কোম্পানির। এ প্রসঙ্গে হাক্কানী পাল্পের কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ মুসা বলেন, শেয়ারের দর কেন বাড়ছে তা আমার জানা নেই। কোম্পানির কোন ভালমন্দ খবর থাকলে আমরা তা ডিএসই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে বিষয়টিতে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বিনিয়োগকারীদের। অন্যথায় একসময় তাদের চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এদিকে শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে তালিকাভুক্ত ছয় কোম্পানির বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এসব কোম্পানির শেয়ারদর তদন্ত করতে গত ২৩ এপ্রিল তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করেছে বিএসইসি। কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বিএসইসির উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক আবদুস সেলিম ও ওয়ারিসুল হাসান রিফাত। গঠিত এ কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
×