ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়া ইস্যুতে সৌদি- মার্কিন সম্পর্কে দূরত্বের আভাস

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

 সিরিয়া ইস্যুতে সৌদি- মার্কিন সম্পর্কে দূরত্বের আভাস

বর্তমান সময়ে ইয়েমেন যুদ্ধই সৌদি আরবের একমাত্র অসম্পূর্ণ অভিযান নয়। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপের আগে সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান ২০১২ থেকে ১৪ সালের মধ্যে সিরিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে একটি গোপন ছায়া যুদ্ধ চালান। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার দায়িত্ব রিয়াদকে বুঝিয়ে দিয়ে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন। আলজাজিরা। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও মনোনীত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চেষ্টা করছেন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) হারানোর পর একটি স্থিতিশীল বাহিনী হিসেবে কাজ করার জন্য আরব জোট গঠনের। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে মিসর, বাহরাইন, জর্দান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র এজন্য রিয়াদকে প্রস্তাব দিয়েছে, আলোচনা প্রচেষ্টার প্রধান হওয়ার। যাতে এটি ন্যাটোর বাইরে সবচেয়ে বড় সামরিক জোট হয়ে উঠতে পারে। যারা মিত্র রাষ্ট্রে শান্তি রক্ষা ও তহবিল সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। যদি প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয় তবে সেখানে কোন ভিন্নতা থাকবে না বরং সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। এ মাসের ১৪ তারিখে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনীর ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অংশ হিসেবে সৌদি আরবকে যুক্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প সৌদি আরবকে সিরিয়া পুনর্গঠনের জন্য চার শ’ কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। যা রিয়াদ প্রত্যাখ্যান করেছে। এক সময় আশা করা হতো যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তবে তাতে সৌদি আরব সমর্থন দেবে। রিয়াদ মনে করে, ট্রাম্প সৌদি ইসরাইল-ফিলিস্তিনী সঙ্কটে কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে সমাধানের পথ খোঁজার জন্য সৌদিকে বলবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব দমনের জন্য সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আশা করছে। শুধু এইমাসে ট্রাম্প তেলের দাম বাড়াতে ওপেকের প্রচেষ্টার বিষয়ে তার অভিযোগ জানান। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার বোঝা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে মুক্ত করার বিষয়ে রিয়াদ এই তেলের দাম বাড়াতে অনুরোধ করেছিল। বর্তমানে সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক নিম্নগামী। সেটি আর আগের মতো অবস্থায় নেই। ২০১১ সাল থেকে রিয়াদ সিরিয়ায় বহুবার তাদের সৈন্য পাঠিয়েছে। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন সৌদি সেনাদের উদ্দেশ্য ও দক্ষতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। আঞ্চলিক স্তরেও এই আরব জোট যদি বাস্তবায়িত হয় তার কোন সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট থাকবে না। আরব লীগ ও গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) বর্তমানে বেপরোয়া হয়ে আছে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে রিয়াদের ৩৪ জাতি জোটের ঘোষণায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সে সময় সৌদি আরব একা আইএসকে মোকাবেলায় এই জোটের ঘোষণা দেয়। আগের আরব শান্তিরক্ষা উদ্যোগগুলোর অনুকরণ করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৬ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় আরব ডিটারেন্ট ফোর্স ছিল পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক। যারা সিরিয়ার লেবানন দখলের পুরো চেষ্টাকে ভেস্তে দেয়। উপরন্তু মার্কিন প্রস্তাবে জোটের সব দেশ একই উদ্দেশে কাজ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র আইএসকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যকে সবার সামনে এনে ও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তা বাস্তবায়িত করতে চায়। যেখানে এটি স্পষ্ট নয় যে যদি কোন আরব অংশীদার এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে সিরিয়ার সরকার অথবা ইরানের প্রভাব বিস্তারে চাপ প্রয়োগ করে তখন কি হবে। জিসিসি সঙ্কটের সমাধান না করেই সিরিয়ার ভূমিতে আমিরাত ও কাতার বাহিনী নিজেদের সেনা অভিযানকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। ইয়েমেনের মডেল দেখায়, কিভাবে সৌদি ও আমিরাত বিপরীতমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। এর এক উদাহরণ হিসেবে, গত জানুয়ারিতে এডেনে অভ্যুত্থানের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
×